পাটের সোনালী আঁশ খুলনায় এখন কৃষকের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা কমেছে। রফতানি কমে যাওয়ার ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অনাবৃষ্টির কারণে সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারায় এ অঞ্চলের পাটের আঁশের মানও এবার নিম্নমুখী। উচ্চ সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পাট চাষ করে কৃষকেরা এখন ব্যাপক লোকসানের মুখে রয়েছেন। খুলনাঞ্চলে ২০২০-২০২১ সালে প্রতি মন পাট বিক্রি হয়েছে সাড়ে থেকে ৫ হাজার টাকায়। এবার পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
পাট অধিদফতর খুলনা থেকে জানা যায়, মোংলা বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬ হাজার ৯০০ বেল পাট, ২০২০-২১-অর্থবছরে ৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের ৮১ হাজার বেল, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৩১ হাজার বেল পাট রফতানি হয়। মহামারি করোনার কারণে বিশ্ব বাজারে কাঁচা পাট রফতানি থমকে যায়। বিগত বছরগুলোতে বেলজিয়াম, পাকিস্তান, চীন, ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, আইভেরি কোস্ট, এলসালভাদর, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইউকে ও তিউনেশিয়ায় পাট রফতানি হয়। এ মৌসুমের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, আইভেরিকোস্ট, এলসালভাদর ও রাশিয়ায় পাট রফতানি হয়েছে। গত তিন মাসে পাট রফতানি ১০ হাজার বেলের কাছাকাছি। রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা কমেছে।
পাট অধিদফতর খুলনার মূখ্য পরিচালক সরিজত সরকার জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার বেল, খুলনা জেলায় ২৭ হাজার বেল এবং বাগেরহাট জেলায় ২২ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়।
এ অঞ্চলের কপিলমুনি, আঠারোমাইল, চুকনগর, শৈলদহ বাজার, বড়বুনি, চিতলমারির বড়বুনিয়া, মোল্লাহাট, সাতক্ষীরার বাশদহ, ঝাউডাঙ্গা, তালা, শুভাশিনী, জাতপুর ও পাটকেলঘাটা হাটে তোষা মনপ্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের চাষি উত্তম কুমার জানান, স্থানীয় হাটে-বাজারে কাঁচা পাট মনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বেশি, সারের মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। স্বল্প দাম হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হরিয়েছে, লোকসানের মুখে রয়েছে।
স্থানীয় পাট রফতানিকারক আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের কারণে ২০২০ ও ২১ অর্থবছরে কাঁচা পাটের উৎপাদন কম ছিল। বেসরকারি পাটকলগুলোর চাহিদা বেশি থাকায় দাম সে সময় বেড়েছিল। ওই সময় উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়। এবার রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশে চাহিদা কমে যাওয়া এবং অনাবৃষ্টির কারণে নোনাপানিতে পাট পঁচানোর ফলে গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমেছে।
পাইক গাছার কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, বরাবরের মতো উচ্চ সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা এ মৌসুমে পাট চাষ করেন। বাজারে পাটের দাম কমে যাওয়ায় এখন তারা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। মহাজনের কাছ থেকে ৫ মাসের জন্য ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ৫ মাস পর তাকে ৩৮ হাজার টাকা শোধ করতে হবে। পাটের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচই ওঠেনি। মহাজনের ঋণ শোধ করবো কিভাবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে।
ডুমুরিয়ার উপজেলার উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক জানান, অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানি দিয়ে পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন