নেছারাবাদে সন্ধ্যা নদীতে ভরা মৌসুমেও মিলছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। জেলেরা দিনে দুইবার নদীতে ফেলেও চার পাচটে জাটকা ইলিশ ছাড়া জালে ধরা পড়ছেনা বড় কোন ইলিশ। তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার ২৮৫৬ জন জেলেরা। জালে ইলিশ না মেলায় কোন কোন জেলের ঘরে নেই পূজার আনন্দটুকুও। তারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জাল নৌকা কিনে নদীতে যান ইলিশ শিকারে। মাছ ধরে মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করবেন। আনবেন সংসারে সচ্ছলতা। তবে এ বছর তাদের জালে সেই কাঙ্খিত ইলিশ না মেলায় সংসার চালানোতো দূরের কথা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলার দক্ষিন কামারকাঠি গ্রামের জেলে মামুন(৪৫) হতাশ মনে বলেন, এক সপ্তাহ পর্যন্ত টানা নদীতে দুই থেকে তিনবার জাল ফেলাই। তাতে দুই তিনটি জাটকা ইলিশ ছাড়া কিছুই জালে উঠছেনা। সে জাটকা মাছও মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে আড়তে গিয়ে দিয়ে আসতে হয়। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সংসার চলছেনা। তার উপরে আগামি ২২ দিন নদীতে অবরোধ। তাই সংসারের খরচ মিটাতে স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
উপজেলার সমেদয়কাঠি ইউনিয়নের জেলে পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, শুনসান নীরবতা। জেলেরা জাল নৌকা ঘাটে উঠিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। জানতে চাইলে, ইউনিয়নের লক্ষনকাঠি গ্রামের জেলে কৃষ্ণ দাস(৪২) বলেন, নদীতে কোন মাছ পাইনা। তাই সংসারে কোন পূজার আনন্দ নেই। এই পূজায় ছেলে মেয়েদের একটা নতুন পোশাক কিনে দিতে পারিনি। তিনি বলেন, মাছ না পাওয়ায় ক্রমেই দেনার জালে আটকে যাচ্ছি।
জলাবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব জলাবাড়ী গ্রামের জেলে সুজন দাস বলেন, বিশ বছর ধরে ইলিশ ধরার পেশায় নিয়োজিত আছি। গত পনের দিনেও নদীতে একটি বড় ইলিশ পাইনি। এই পনের দিনে যে মাছ পেয়েছি তা মহাজনকে দিয়ে এসেছি। তিনি আরো বলেন, এমনিতেই নদীতে মাছ নাই। তার উপর আগামি ৬ অক্টোবর রাত বারটা থেকে ২২ দিন নদীতে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ ষনা আসছে। তিনি বলেন এই সময়ে সরকারিভাবে ৩০ কেজি চাল ছাড়া আমাদের কপালে আর কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা মাছ ধরার পেশায় থাকলেও আজ পর্যন্ত সন্তানদের একটা বড় ইলিশ খাওয়াতে পারিনি। কোন সময় জালে একটা বড় ইলিশ মিললেও দাদনের টাকা পরিশোধ করতে মহাজনকে বাধ্য হয়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে।
নেছারাবাদ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো: ওবাইদুল হক জানান, এ বছর ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর মোট ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়কালে নদীতে ইলিশ মাছ আহরন,পরিবহন,মজুদ,বাজারজাতকরণ,ক্রয় বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। তাই বাইশ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ সময়ে সরকারিভাবে বরাদ্দনুযায়ি জেলেদের চাল দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলায় মোট ২৮৫৬ জন জেলেকেই নিষদ্ধ সময়ে চাল দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন