ভয়ঙ্কর একটি চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে নৌ-রুট। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌ বন্দর থেকে নওয়াপাড়া নৌবন্দর পর্যন্ত এ চক্রটি ভয়ঙ্কর থাবা বিস্তার করে আছে। আর এ চক্রের সাথে বহিরাগত সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ, কতিপয় অসাধু নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী ও অসাধু কিছু ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি নওয়াপাড়া নদী বন্দর ব্যবহারকারী একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১২শ’ টন সার চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর এ রুটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে নানা অজানা তথ্য।
নওয়াপাড়া নদী বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নৌ-রুট জুড়ে ভয়ঙ্কর একটি মাফিয়া চোর সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে ট্রলার যোগে লাইটারেজ জাহাজগুলোতে হানা দেয়। এরা কখনও কখনও কার্গো জাহাজের শ্রমিক-কর্মচারী ও স্কটকে ম্যানেজ করে পণ্য চুরি করে। ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হলে অস্ত্র ঠেকিয়ে মালামাল ছিনতাই করে। অন্যথায় কৌশলে কার্গো জাহাজের দু থেকে একজনকে ম্যানেজ করে খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে অচেতন করে পণ্য চুরি করে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসার পথিমধ্যে নওয়াপাড়া বন্দরে পৌঁছানোর আগেই প্রতিটি লাইটারেজ জাহাজ হতে কমপক্ষে ৫০ থেকে ২শ’ টন পণ্য চুরি হয়ে যায়। আর এসকল চোরাই পণ্য বন্দর এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মোটা অংকের লাভের আসায় কিনে নিচ্ছে। এমন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
আরো জানা যায়, চোরাইকৃত পণ্য ট্রলারযোগে নওয়াপাড়া নৌ বন্দরের বেশ কিছু ঘাটেও আনা হয়। ঘাটের দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করে এসকল পণ্য রাতারাতি আনলোড করা হয়। তাদের অভিযোগ, এসকল চোরাই পণ্য ধরার পর চুরির সাথে নৌ-যানের কোন অসাধু শ্রমিক কর্মচারীর সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নিতে গেলেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তারা ফেডারেশনের মাধ্যমে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে লোড-আনলোড বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়।
বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করা কার্গো থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে পণ্য চুরি করে থাকে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে নানাভাবে নাজেহালও হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে চুরির ভয়ে স্বনামধন্য এ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি গম, কয়লাসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নওয়াপাড়া সার, সিমেন্ট, কয়লা ও খাদ্যশষ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শাহ্ জালাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গোটা নৌ-রুট ভয়ঙ্কর মাফিয়া চোর চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা রীতিমত হতাশ হয়ে পড়ছি। চোর ধরতে গেলেই নানামুখী বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে বলেন, এ চক্রের সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের শেকড় উপড়াতে না পারলে ব্যবসা করা দরুহ হয়ে পড়বে। ফলে নওয়াপাড়া নদী বন্দর গতিশীলতা হারাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়া গ্রæপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জনি বলেন, নওয়াপাড়া গ্রæপ ৯০ এর দশক থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকের হাতে সার পৌঁছে দিয়ে আসছে। কিন্তু নৌ-রুটে ভয়ংকর মাফিয়া চোর সিন্ডিকেটের কারণে সে উদ্দেশ্য বারবার বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। নৌ-পুলিশের চরম অবহেলা ও কোস্টগার্ডের গাফিলাতিকে দায়ি করে তিনি অভিযোগ করেন, গোটা নৌ-রুটে এ সিন্ডিকেট থাবা বিস্তার করে আছে। এর সাথে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী, সার্ভে কোম্পানীর অসাধু ব্যক্তি, নৌযানের কতিপয় অসাধু শ্রমিক-কর্মচারী ও সন্ত্রাসী গ্রæপ জড়িত রয়েছে।
নওয়াপাড়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুজ্জামান নৌ পুলিশের অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, নৌ-রুটকে নিরাপদ রাখতে নৌ-পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে নৌ-পুলিশের লোকবল ও ইকুইপমেন্টের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের নৌ-পথে টহল দেয়ার মতো কোনো নৌ-যান না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়। নৌ-পুলিশের টহলের জন্য একটি স্পীডবোর্ড ও লোকবল বাড়ানো গেলে এ চুরি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন