শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

অটিজম ব্যাধি না ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্তির প্রভাব

মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাহাত খান | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৪ এএম

সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যেও অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধির প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। কিন্তু অনেক গবেষণায় অতিরিক্তভাবে এই রোগ নির্ণয় হয় বলে প্রমাণ হয়েছে। আজকের প্রজন্মের শিশুরা প্রচুর প্রযুক্তির মধ্যেই জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে, পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় শিশুদের দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি আসক্তির প্রবণতা অনেক বেশিভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, টেলিভিশন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পর্দায় মনোনিবেশ করার কারণে শিশুদের মষিÍষ্কে মেলানোপসিন-প্রকাশকারী নিউরনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং গামা-অ্যামিনোবুটারিক অ্যাসিড (গাবা) নিউরোট্রান্সমিটারের নিঃসরণ হ্রাস পাওয়ার সাথে সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ফলে শিশুদের বিভ্রান্তিকর আচরণ, জ্ঞান সম্বন্ধীয় বিকাশ এবং ভাষার বিকাশ ব্যাহত হয়ে থাকে। জম্মের পরে খুবই শৈশবে বিশেষ করে ২ বছর বয়সের নিচে শিশুদের মোবাইল, টেলিভিশন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি আসক্তি তাদের ভাষার বিকাশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। তবে এটি এখনো পরিপূর্ণভাবে মীমাংসিত হয়নি।

ভাষার বিকাশ এবং অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধি-সদৃশ আচরণের উপর প্রারম্ভিক জীবনে মোবাইল, টেলিভিশন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রভাব প্রকাশের লক্ষ্যে বহিঃবিশ্বে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাগুলোর ফলাফলগুলিতে দেখা যায় যে, যে শিশুরা প্রতিদিন ৩ ঘন্টা বা তার নিচে সময় ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখার জন্য ব্যয় করেছে তাদের মধ্যে ৬৬.৬% শিশুদের ভাষা বিলম্ব এবং মনোযোগের স্থায়িত্বের সময় স্বল্পতাসহ পিতামাতা-সন্তানের পরিপূর্ণ ভাবের আদান-প্রদানে ঘাটতি ছিল। সেখানে যে শিশুরা প্রতিদিন ৩ ঘন্টা বা তার উপরে সময় ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখার জন্য ব্যয় করেছে তাদের মধ্যে ৬৬.৬% শিশুদের ভাষা বিলম্ব, মনোযোগের স্থায়িত্বের সময় স্বল্পতা, পিতামাতা-সন্তানের পরিপূর্ণ ভাবের আদান-প্রদানে ঘাটতি এবং অতিরিক্ত সক্রিয়তার লক্ষণসমূহ প্রকট ভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল। গবেষণায় প্রাপ্ত লক্ষণসমূহ বেশির ভাগ সময়েই অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধির সাথে সদৃশপূর্ণ হওয়ায় অনেক চিকিৎসকগণই ভুলবশত শিশুকে অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধি আক্রান্ত বলে সনাক্ত করে থাকেন।

নি¤œউল্লিখিত কারণসমূহ শিশুর প্রারম্ভিক জীবনে দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি করেঃ
শিশুদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় না দেওয়া বা পিতামাতা-সন্তানের পরিপূর্ণ ভাবের আদান-প্রদানে ঘাটতি।
শিশুদেরকে চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রেখে লালন পালন।

শিশুদেরকে বয়স উপযোগী খেলনা দিয়ে খেলতে না দিয়ে মোবাইল ফোনে গেমস্ খেলতে দেয়া।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল বা টেলিভিশনের প্রতি আসক্তি।
শিশুকে খাবার খাওয়ানোর জন্য মোবাইল বা টেলিভিশনের উপর অধিক নির্ভরশীলতা।

পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম থাকায় মায়েদের ঘরের অন্যান্য কাজকর্মগুলো সম্পাদনে ব্যস্ততা।
অনেক চাকুরীজীবী পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিতে পারেন না, নিকট আতœীয় স্বজন না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়ির কাজের লোকদের উপর তাদের সন্তানদের লালন পালনের জন্য নির্ভর করতে হয়। পিতা-মাতার অনুপস্থিতিতে ছোট শিশুটি কান্না করলে বা ঘরের অন্যান্য কাজকর্মগুলো সম্পাদনের জন্য তাদেরকে মোবাইল ফোন বা টেলিভিশনের পর্দার সামনে দীর্ঘসময় বসিয়ে রেখে দেওয়া।

শিশুর প্রারম্ভিক জীবনে দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কমানোর পরীক্ষিত উপায়সমূহঃ
আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের একটি গ্রহণযোগ্য জীবনে দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সময়ের জন্য সুপারিশগুলি হলোঃ

০-১৮ মাস পর্যন্ত একেবারেই নয়, তবে ভিডিও কলে অল্প সময় দেয়া যেতে পারে।
১৮-২৪ মাস পর্যন্ত একেবারেই নয় থেকে অতি অল্প সময়
৩-৫ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা করে
৬-১০ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১-১.৫ ঘন্টা করে
১১-১৩ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা করে

সব ক্ষেত্রে, উচ্চ মানের শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো নির্বাচন এবং পিতামাতার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করাকে উৎসাহিত করা হয়। আপনার সন্তানেরা কী দেখছে সে সম্পর্কে তাদের সাথে বন্ধুসলুভ কথা বলা এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহায়তা করা। শিশুর প্রারম্ভিক জীবনে দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখার সময়ের সাথে প্রচুর পরিমানে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, কাল্পনিক খেলা এবং সমবয়সীসহ অন্যদের সাথে সামাজিক ভাবের আদান-প্রদান বজায় রাখাসহ অন্যান্য কার্যকলাপের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

প্রারম্ভিক জীবনে শিশুদের দৈনিক ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখার প্রতি আসক্তি প্রভাব খুবই ভয়াবহ হতে পারে, তাদেরকে অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধিসহ অন্যান্য মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত দুরারোগ্য ব্যধিসমূহে ভুলভাবে নির্ণয়ের মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

আপনার কোমলমতি শিশুটি কি সত্যিই অটিজম স্পেকট্রাম ব্যধিতে আক্রান্ত না প্রারম্ভিক জীবনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির প্রভাব তা সঠিকভাবে সনাক্ত করতে ও চিকিৎসা সেবায় সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

কনসালন্টেট, অকুপেশনাল থেরাপি ও ইন্চার্জ অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা শিশুবিভাগ,
সিআরপি, সাভার, ঢাকা।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭১১০৩৯৪৮৬
 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন