চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস একটি সংক্রামক রোগ। ও রোগের সাথে আমরা কম বেশি অনেকেই পরিচিত। ঋতু পরিবর্তনের সাথে, বিশেষ করে বর্ষা ও গরমে এ রোগটির প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়।
কনজাঙ্কটিভাইটিস কী ?
আমাদের চোখের সাদা অংশ এবং পাতার ভেতরের অংশ একটি স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে, যা চোখকে সুরক্ষা দেয় এবং চোখের নানাবিধ কার্যক্রমে অংশ নেয় তাকে কনজাঙ্কটিভা বলে। এই আবরণটির সংক্রমনকেই কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা বলে। এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ।
কারণঃ
এটি নানা ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হয়
এর মধ্যে বেশির ভাগ ভাইরাসের সংক্রমনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়
এডিনোভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, স্কেলেরার সংত্রমন, ইউভিয়াল টিস্যু সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে সংক্রমন হয়
ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ইত্যাদির সংক্রমণ থেকেও রোগটি হতে পারে
এলার্জির কারণে এবং কিছু শারীরিক রোগ থেকেও এ চোখ ওঠা হতে পারে
এছাড়াও ধুলার কনা, পশু-পাখির লোম, দীর্ঘকাল কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার, দূষিত ধোঁয়া, বাষ্প ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে।
কুসংস্কার :
চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালে চোখ ওঠা রোগটি হয় এমন একটি কথা প্রচলিত আছে যা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। বরং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ।
লক্ষণ :
আক্রান্ত চোখের চারপাশে হালকা লাল রং হতে পারে। ধীরে ধীরে লাল রং বাড়তে থাকে
চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে
চোখ ব্যথা চুলকানী খচখচে ভাব ও জ্বালাপোড়া হতে পারে
চোখে অস্বস্তি হতে থাকে
রোদ বা আলোতে তাকাতে পারে না
চোখ থেকে পানি পড়ে
চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হয়
হলুদ রং এর পুঁজ সৃষ্টি হয়
ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে
চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে
এসব লক্ষনের সাথে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
কথায় আছে- ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’। যেহেতু এটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই এর প্রতিরোধের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের ধরণ বুঝে দেওয়া হয়ে থাকে। চোখের ফোট, চোখের মলম সাথে ব্যথার ও চুলকানির ওষুধ লাগতে পারে। সাধারন চোখ উঠলে সেরে উঠতে এক থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিও গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ
বেশি ছোঁয়াচে হওয়া রোগিকে আরোও বেশি সচেতন হতে হবে। অতি প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া উচিত নয়।
আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহৃত গøাস, গামছা, পানির গøাস, মোবাইল, কলম ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
পরিষ্কার কাপড়, টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
চোখে কোনমতে হাত দেওয়া যাবে না। হাত দিয়ে চোখ রগড়ানো যাবে না।
চোখ উঠলে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে।
হাত সবসময় সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
শিশুরা আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ সময় শিশুকে স্কুলে না দেয়াই ভালো। এতে স্কুলে সংক্রমণের হাড় বেড়ে যেতে পারে।
সকালে ঘুম হতে ওঠার পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে।
চোখে ব্যবহৃত টিস্যু বা নরম কাপড় নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে।
বাইরে গেলে রোদ চশমা ব্যবহার করতে হবে।
যে পাশের চোখ উঠবে সে পাশেই কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। না হলে অন্য চোখ সংক্রমণ হতে পারে।
চোখে বারবার পানি দেওয়া বা পানির ঝাপটা দেওয়া যাবে না।
চোখ ওঠা সমস্যা যদি বেশিদিন যাবৎ স্থায়ী হয় এবং চোখের অন্যান্য জটিলতা তৈরি হয় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের নিকট নিতে হবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক,
কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩ নবাব কাটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল,ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন