এক ভুয়া কাজীর ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হন সিলেট ওসমানী নগরের এক গূহবধূ। তার নাম তানজিলা বেগম। উপজেলার পশ্চিম রোকনপুর গ্রামের বেনি আমিনের স্ত্রী। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ভুয়া কাজী নুরুল হক সহ সাত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন আদালতে। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে ওসমানী নগর থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
২০২০ সালের ২৬ জুন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। যৌতুকের জন্য স্বামীর কাছে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতেন। এরেই মধ্যে ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তানজিলাকে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলনের কথা বলে তাজপুর কদমতলায় ভুয়া কাজী নুরুল ঋণ উত্তোলনের ফরমের নামে তানজিলার স্বাক্ষর নেয় তালাকনামায়। সরল বিশ^াসে কথিত ঋণ ফরমে স্বাক্ষর করে দেন তানজিলা। এ স্বাক্ষরে যে ঋণের নয়, ভেঙে যাচ্ছে তার সংসার বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হন তিনি। স্বাক্ষরের পরও দিব্যি সংসার করছেন স্বামী বেনি আমিনের সাথে।
পরবর্তীতে গত ১১ আগস্ট পূনরায় তানজিলার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করেন তার স্বামী বেনি আমিন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তানজিলাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। নির্যাতন অসহ্য হয়ে এক পর্যায়ে স্বামীর কাছে ডিভোর্স চেয়ে মোহরানা দাবি করেন তানজিলা। এসময় তার স্বামী জানান ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কাজী অফিসে তালাকনামা সম্পন্ন করে মোহরানার টাকা পরিশোধ করেছেন। তখন তানজিলার বুঝতে আর বাকী থাকেনি স্বামী ও কথিত কাজীর ফাঁদে পড়ে ঋণের নামে তালাক নামায় স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। এরপর ভুয়া কাজীর অফিসে গিয়ে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার অফিস স্বাক্ষরিত একটি তালাকনামা বের করতে সক্ষম হন তানজিলা। তালাকনামা দেখে শুধু তানজিলা নয়, তার আত্মীয় স্বজনরা হতবাক হয়ে যান। এর প্রেক্ষিতে স্বামী ও প্রতারণায় জড়িত কাজী নুরুল হক সহ অন্যান্য সহযোগীদের আসামি করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন তানজিলা।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, কাজী নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে তাজপুর এলাকায় সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের কাজ করতেন। এ ব্যাপারে সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত তাজপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী আবুল কালাম আজাদ ২০২১ সালের জুন মাসে ভুয়া কাজী নুরুল হকসহ তার সহযোগীদের অপতৎপরতা বন্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওসমানী নগর থানায়। বিষয়টি মীমাংষার জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয় একটি শালিসি বৈঠক। বৈঠকে নুরুল হক তাজপুর এলাকায় কখনো বিবাহ সম্পাদন কার্যক্রম করবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করে মুচলেখা দেন। কিন্তু এসবের পরেও থেমে থাকেনি তার বিবাহ সম্পাদন কার্যক্রম। তার এসব অবৈধ ও বেআইনি কার্যক্রমে তানজিলার মতো অনেক গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তানজিলার পিতা সাকির আলি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলনের কথা বলে তাজপুর প্রাইম ব্যাংকের নিচে কাজী নুরুল হক আমার মেয়ের কাছ থেকে একটি স্বাক্ষর নেয়। দীর্ঘদিন পরে জানতে পারি সেই স্বাক্ষর তালাকনামার। এমন প্রতারণার আইনি শাস্তি দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নুরুল হক বালাগঞ্জ এবং দয়ামীর ইউনিয়নের কাজীর সহকারি বলেন, উভয়ের সম্মতি ক্রমে তালাকনামাটি সম্পন্ন করা হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তালাক নামায় উভয়ের স্বাক্ষীও ছিল।
কিন্তু তানজিলার বাবা বলেন, সবকিছুই সাজানো আমার মেয়ে তালাক প্রদান করবে তার স্বামীকে সেই অপ্রত্যাশিত কাজ সম্পাদনে কি আমাদের অংশগ্রহণ থাকবে না? চক্রান্ত করেই ভুয়া কাজী নুরুলকে দিয়ে এমন কাজ করান বেনি আমিন। এরপর সংসার করছে, অথচ আমরা কিছ্ইু জানিনা, এর নাম কি তালাক?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন