শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে হচ্ছে সবচেয়ে বড় রেলসেতু

চলতি বছরে শুরু নির্মাণ কাজ

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ স্টিল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৭৩৪ কোটি টাকা
সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে : উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা বিধৌত ঐতিহ্যবাহী জেলা সিরাজগঞ্জ ও টাংগাইল পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে অনেক আগেই দুই অংশকে একত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্রিজের সঙ্গে যুক্ত ট্রেনের আউটার সিগন্যালিং খাচা দুষ্কৃতকারীরা অনেক আগেই ভেঙ্গে ফেলায় ট্রেন চলছে কচ্ছপ গতিতে। অথচ পাবনা লালনসেতু হার্ডিংজ ব্রিজ দিয়ে ট্রেন দ্রুতগতিতে চলছে। যেটা যমুনা সেতু দিয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এ সেতু দিয়ে কনট্রেইনারবাহী ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ। আর ইতিপূর্বে কয়েক দফায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে যাত্রীরা। এসব কিছু বিবেচনা করে সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে বিগবাজেটে এপ্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। চলতি বছর কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সিরাজগঞ্জ জেলাবাসী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের উচ্ছসিত প্রসংশায় এখন পঞ্চমুখ।     
জানা গেছে, বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে আরেকটি রেলসেতু হবে। জাপানের অর্থায়নে এ সেতু হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। ডুয়েল গেজ এ সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। বাকি ২ হাজার ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ৩০০ মিটার উজানে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ডুয়েল গেজ স্টিল রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে শূন্য দশমিক ৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও পশ্চিম রেলস্টেশন ভবন এবং স্টেশন চত্বর মেরামত ও রিমডেলিং এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম রেলস্টেশন আধুনিকায়নসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। ফলে নিরাপদ যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাবে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। প্রকল্পে জাপান সরকার বড় অঙ্কের সহায়তা দেবে। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুতে সীমিত এক্সেল লোড ও গতির সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকৃত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় যমুনায় প্রস্তাবিত রেল সেতুর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনটেইনার পরিচালনার জন্য ব্রডগেজ কনটেইনার ট্রেইন সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে লোড ও স্পিড প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা দক্ষতা বৃদ্ধি এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা সম্ভব হবে। সেতুটি সম্পন্নভাবে নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ, পূবাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হবে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে দেশে ২৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে দাঁড়াবে ৪৭৩০ কিলোমিটার। গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৬টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পাড় হয়। কিন্তু ঝুঁকির কারণে কনট্রেইনারবাহী ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ প্রকল্পটির আওতায় ভারি পণ্য পরিবহনেরও মহাপরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে থাকবে দুইটি কনট্রেইনার, একটি পেট্রোলিম ও দুইটি খনিজ সম্পদবাহী ট্রেন। ২০১৮ সালের মধ্যেই মংলাপোর্ট উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হবে। তখন বঙ্গবন্ধু সেতুর গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ইআরডি ও জাইকা প্রকল্পটির ওপর মিউনিটস অব ডিসকাশন (এমওডি) স্বাক্ষর করেছে। প্রথম পর্যায়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেলসেতুটি নির্মাণে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। পরে জাপান-বাংলাদেশ কম্প্রেহেনসিভ পার্টনারশিপ শীর্ষক যৌথ ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫টি প্রকল্পের মধ্যে যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অন্যতম হিসেবে রাখা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে জাইকা-এডিবির করা সমীক্ষার ওপর একটি সম্পূরক জরিপ করে গত বছরের নভেম্বরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন