শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগী ফেলে চিকিৎসকরা কক্সবাজার ভ্রমণে!

চরম দুর্ভোগে হাজারো রোগী

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫৩ পিএম

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৩০ জন চিকিৎসক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে সস্ত্রীক কক্সবাজারে যাওয়ায় গত ৩ দিন ধরে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এতে বিপাকে পড়েন হাজারো রোগী। এভাবে চিকিৎসকদের একযোগে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ চিকিৎসকরা। অভিযোগ রয়েছে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের নামে ওষুধ কোম্পানির অর্থে এসব চিকিৎসকরা কক্সবাজার ভ্রমনে গেছেন।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এক মাস আগে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামানকে প্রধান উপদেষ্টা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হিমাদ্রি শেখরকে সভাপতি করে চিকিৎসক সার্জনস ওয়েল ফেয়ার নামে একটি সংগঠন করা হয়েছে। একমাত্র ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া দেশের অন্য কোন হাসপাতালে এই সংগঠন নেই। সদ্য গঠিত এ সংগঠনের ব্যানারে হাসপাতালের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্টরা গেছেন বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে। গত রবিবার তত্ত্বাবধায়ক মো. আক্তারুজ্জামান ইএনটি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রাশেদ আলী মোড়লের কাছে দায়িত্ব দিয়ে ৩০ জন চিকিৎসককে নিয়ে বেরিয়ে যান। এর ফলে হাতেগোনা কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া আর কোন চিকিৎসক নেই বৃহৎ এ হাসপাতালে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন সাড়ে ৫শ’ রোগী থাকেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে। বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় ২ হাজার রোগী। যশোর ছাড়া নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। গত মঙ্গলবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেয়ার ফাঁকা। পাশের আরেক চেয়ারে বসে প্রশিক্ষণার্থী (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। গত তিন দিন চিকিৎসা না পেয়ে বহি:বিভাগ ও ভর্তিকৃত হাজারো রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। ভর্তিকৃত রোগীদের হাসপাতালের ছাড়পত্র খাতায় পলাতক দেখানো হয়েছে। এতে রোগী ও স্বজনরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার শহরের বেজপাড়া এলাকার সাদেক আলী চোখের যন্ত্রনা নিয়ে যশোর ২৫০ শষ্যা হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তিনি ফিরে যান। বাঘারপাড়ার ধলগ্রামের রফিকুল বিশ্বাস তার স্ত্রী আসমাকে নিয়ে আসেন গাইনি সমস্যা নিয়ে। ওই বিভাগেও কোন চিকিৎসক না থাকায় তিনি ফিরে যান। রফিকুল ইসলাম বলেন, এতো দূর থেকে এসে চিকিৎসা পেলাম না। শুধু ওই দু’জন নয়, এরকম হাজারো রোগী গত তিন দিনে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, চিকিৎসক সার্জনস ওয়েল ফেয়ারের বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে আমরা কক্সবাজার এসেছি। আজ বুধবার আমরা ফিরে আসব। আমাদের আসার বিষয়টি খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক মহোদয় জানেন।
ভারপ্রাপ্ক তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রাশেদ আলী মোড়লের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মঞ্জুর মোর্শেদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে তত্ত্বাবধায়ক তাকে জানিয়ে ছিলেন কক্সবাজার যাবেন। এতো সংখ্যক ডাক্তার এক সাথে বাইরে যাবেন এটি তার জানা নেই।
এব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাক্তার আহমেদুল কবির জানান, যশোর ২৫০ শষ্যা হাসপাতাল থেকে একযোগে ৩০ জন চিকিৎসক যাবার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো, কি কারণে তারা কক্সবাজারে গেল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন