যক্ষ্মা রোগ বা টিউবারকুলোসিস আমাদের দেশে খুব পরিচিত। বাংলাদেশ সহ বিশ্বে প্রতিবছর যক্ষ্মায় প্রচুর রোগী মারা যায়। তাই যক্ষ্মা রোগের ব্যাপারে সবারই জানা উচিত। যক্ষ্মা রোগ আবার অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।
যক্ষ্মা রোগী হাঁচি বা কাশি দিলে জীবানু ছড়িয়ে পড়ে। তারপর তা সুস্থ্য মানুষকে আক্রান্ত করে। তবে যক্ষ্মার জীবানু শরীরে ঢুকলেই যে সবার যক্ষ্মা হবে তা নয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের যক্ষ্মা বেশী হয়। ‘যক্ষ্মা হলে আর রক্ষা নাই’ এ কথার বর্তমানে কোন ভিত্তি নেই। ৬ থেকে ৮ মাস ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে সেরে যায়। তবে যক্ষ্মার ওষুধ কোন কোন রোগীরা ৬ মাস খেতে চায়না।
যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই অনেক রোগী ভাল বোধ করেন। তখন কেউ কেউ ছেড়ে দেন। আবার যক্ষ্মার ওষুধের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেজন্যেও অনেকে যক্ষ্মার ওষুধ খেতে খেতে বাদ দেন। তখন নানারকম বিপত্তি দেখা দেয়। তাই যক্ষ্মার চিকিৎসা থেকে প্রতিরোধের দিকেই সবার নজর দেয়া উচিত। নিম্নে যক্ষা প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যক্ষ্মা বেশী হয়। একঘরে অনেকে অবস্থান করলে সহজেই একজনের থেকে অন্যজনে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে। পুষ্ঠিকর খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই জীবনযাত্রার মান বাড়লে যক্ষ্মা রোগ অনেক কমে আসবে।
২। রাস্তাঘাটে কফ ফেলা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বে যক্ষ্মার প্রকোপ নেই বললেই চলে। যেখানে সেখানে কফ এবং খুতু ফেলার ফলে বাংলাদেশে যক্ষ্মাসহ সংক্রামক রোগ অনেক বেশী ছড়ায়।
৩। বাড়িঘরে প্রচুর আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। আগে যখন যক্ষ্মার ওষুধ ছিলনা তখন স্যানিটোরিয়ামে (যেখানে প্রচুর আলোবাতাস আছে) রোগীকে পাঠানো হতো।
৪। ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাবধান থাকতে হবে। তাদের প্রায়ই যক্ষা রোগীদের সংস্পর্শে আসতে হয়। যক্ষ্মা যেহেতু সংক্রামক রোগ তাই তাদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেশী। সেজন্য মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। যক্ষ্মা রোগীদের হাসপাতালে পৃথক কক্ষ থাকা উচিত। নাহলে অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হতে পারে।
৫। কয়েকজন মিলে একই সিগারেট, বিড়ি বা হুক্কা খাওয়া ঠিক নয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে।
৬। স্কুলগামী শিশুদের যক্ষ্মা হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্কুলে পাঠানো উচিত নয়। তাহলে অনেকের মধ্যে জীবানু ছড়িয়ে যাবে। শুধু যক্ষ্মা কেন যে কোন সংক্রামক রোগ হলেই স্কুলে পাঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
৭। পাঠ্যসূচীতে স্বাস্থ্য শিক্ষা থাকতে হবে। বিভিন্ন রোগ সহ যক্ষার ব্যাপারে সবাইকে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে।
৮। ছোট বেলায় বিসিজি টিকা নিয়ে রাখতে হবে, এতে করে যক্ষ্মা হলেও তার শরীরে তার প্রকোপ কম হবে।
৯। প্রচার প্রচারণা বাড়াতে হবে। গনমাধ্যমগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে সরকারসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যক্ষ্মা নির্মূরের চেষ্টা চালাছে। তবে সবাই সচেতন হলেই কেবল যক্ষ্মা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। আশা করি সবাই সচেতন হবেন।
ডা. মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন