শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শরীরের রোগে মুখে আলসার

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

সুস্থ থাকার জন্য বিধি নিষেধ অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ যেমন জরুরী, তেমনি খাদ্য দ্রব্য হজম হচ্ছে কিনা সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থাৎ যদি আপনার পায়খানা শক্ত বা নিয়মিত না হয় তাহলে শরীরে টক্সিন সৃষ্টির মাধ্যমে মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ সৃষ্টি হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে বর্জ্য পদার্থগুলো কিছুটা হলেও পুনঃ শোষণ হওয়ায় শরীরে টক্সিন তৈরী হয়ে মুখে আলসার সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মুখে ক্যানডিডা অ্যালবিকানস্ সংক্রমন হতে পারে। যদি খাবার পরিপাক ঠিকভাবে না হয় তাহলেও মুখে ফাঙ্গাল সংক্রমন দেখা দিতে পারে। এ সময় জিহ্বার রং সাদাটে দেখাবে। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতন হতে হবে।

আই.বি.এস. বা ইরিটেবল্ বাওয়েল সিনড্রোম রোগে কোলন বা বৃহদান্ত্র আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগ থাকলে আপনার মুখে ঘাঁ বা আলসার হতে পারে। আই.বি.ডি রোগে মুখে অ্যাপথাস আলসার হয়ে থাকে। মুখের আলসারের অন্যতম কারণ সিলিয়াক ডিজিজ যার কারণে গম, রাই অথবা বার্লি খেলে মুখে আলসার হতে পারে। গম, রাই, বার্লি এগুলো এক ধরণের প্রোটিণ যা গ্লুটেন নামে পরিচিত। সিলিয়াক ডিজিজকে গ্লুটেন সেনসিটিভ এন্টারোপ্যাথি ও বলা হয়। সিলিয়াক ডিজিজ ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহজণিত রোগ। গ্লুটেন জাতীয় খাদ্য দ্রব্য দ্বারা এলার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের আভ্যন্তরীন আবরণের প্রদাহ এবং ক্ষয় বা ধ্বংস হয়ে থাকে ধীরে ধীরে। সিলিয়াক ডিজিজ এর ক্ষেত্রে দাঁতের এনামেলের ত্রুটি এবং বার বার অ্যাপথাস আলসার দেখা যায়। যদি গ্লুটেন ইনটলারেন্সের কারণ হয় তাহলে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ রুটি জাতীয় খাবার, কেক, পাই, কুকিজ, বিস্কুট, বিয়ার ইত্যাদি কমিয়ে দিতে হবে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্লুটেন মুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ক্রনস্ ডিজিজ হলো প্রদাহজণিত অন্ত্রের রোগ। ক্রনস্ ডিজিজ মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত যে কোনো স্থানে হতে পারে। ক্রনস্ ডিজিজের কারণে মাড়ির প্রদাহ, মাড়ি ও চিবুকের ভাঁজে আলসার বা ক্ষত, ঠোঁট ফুলে যাওয়া, অ্যাপথাস আলসার, মুখের কোনায় ঘাঁ এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে জিহ্বার প্রদাহ, ঠোঁটের প্রদাহ, অ্যাপথাস আলসার ও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। সাইকো সোমাটিক কারণেও মুখের আলসার দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস, ঔষুধ সেবন ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
মুখের অভ্যন্তরে আলসার যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে দেখে নেওয়া ভাল আলসারটি ভাইরাসজণিত কিনা ? সাইটোমেগালো ভাইরাসের কারণে মুখের আলসার দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। এন্টিবায়োটিক মুখে সংক্রমণ ও আলসার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এন্টিবায়োটিক মুখে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের মাসিকের সময় মুখের আলসার ও মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
সিফিলিসের কারণে ঠোঁটে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিতে পারে। প্রজনন অঙ্গের বাহিরে সবচেয়ে বেশি সিফিলিসের লক্ষণ দেখা যায় পুরুষদের উপরের ঠোঁটে আর মহিলাদের নিচের ঠোঁটে। এ সময় ঠোঁটে ক্ষত দেখা দিতে পারে। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ-১ সাধারণত ঠোঁটকে আক্রান্ত করে থাকে। তবে আপনি যদি সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করেন এবং বিষন্নতায় ভোগেন তাহলে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি আপনার মুখের আলসার বা ঘাঁ সহজে ভাল হবে না। কারণ আপনি ক্রমাগত দুশ্চিন্তা বা বিষন্নতায় আক্রান্ত থাকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। আর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মুখের ঘাঁ কেন, সব রোগই একটু একটু করে দেখা দিতে পারে। তাই জীবনে দুঃখ কষ্ট ভুলে হাসি মুখে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুণ।

ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন