ছাত্র নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় বহিষ্কৃত নেতাদের ফের ছাত্রলীগের পদে পদায়ন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটিত এসব নেতাদের পদায়ন করা হয়। এছাড়াও গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং মামলার আসামীও পেয়েছেন পদ।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে, মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ওমর ফারুক দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান রফিকের কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেয়। এহসান ওমর ফারুকের কাছে প্রায়ই ক্যালকুলেটর দাবি করত। কিন্তু ওমর ফারুক ক্যালকুলেটর পরে দিয়ে দিবে বলে জানাত। ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুকের কাছে এহসান ক্যালকুলেটর দাবি করলে ওমর ফারুক তাকে মারধর করে। এরপর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আরিফের মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেয়। এসময় টিভিরুমে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তানিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন ও আবু তাহের। সেখানে তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোরপূর্বক শিবির স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে বেদম মারধর করে। তারা মৌখিকভাবে এহসানকে হল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে হল গেটে বের করে দেয়। সেখানে আরেকধাপ ছাত্রলীগের হল শাখার সহ সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে রড, লাঠি সোটা দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে তিনটায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে তথ্য না প্রকাশের জন্য প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হল থেকে পালিয়ে আসে এহসান।
আর এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর এহসান লিখিত অভিযোগ দিলে, ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এহসান রফিককে মারধরের ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মারধরের মূল হোতা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুককে (মার্কেটিং বিভাগ) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া দুই বছরের জন্য বহিষ্কার হয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য সামিউল ইসলাম সামি (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) ও সদস্য আহসান উল্লাহ (দর্শন বিভাগ), সহ-সম্পাদক রুহুল আমিন বেপারি (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ), উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল (উর্দু বিভাগ) এবং সহ-সম্পাদক ফারদিন আহমেদ মুগ্ধ (লোক প্রশাসন বিভাগ)। প্ররোচণার দায়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামকে (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এবং হল শাখার সভাপতি তানভীর সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার স্বাক্ষরিত প্যাডে হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায় এসএম হলের ছাত্র এহসানকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত আহসান উল্লাহকে এক ১নং সহ-সভাপতি, ফারদিন আহমেদ মুগ্ধকে ৩নং সহ-সভাপতি, সামিউল ইসলাম সামিকে ৪নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, রুহুল আমিন বেপারিকে ৫নং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ থাকা আল-ইমরানকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত প্লাবনকে ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক , ইয়াসিন আল শাহিনকে ৯নং সাংগঠনিক সম্পাদক পদ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ মে ছাত্র দল নেত্রী মানসুরাকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগের ৩৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামী মো. নাজিম উদ্দিন সাইমুনকে ১১নং সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ প্রদান করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার বলেন, এসব ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তারা ছিল সাধারণ শিক্ষার্থী। আর এসব ঘটনা অনেক পুরোনো। এসব ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছিল। এসবের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের সংগঠনে যাদেরকে ডেডিকেটেড মনে হয়েছে তাদেরকেই পদায়ন করা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার বলেন, এ ধরনের বিতর্কিত কাউকে আমাদের কমিটিতে পদায়ন করা হয়নাই। আমাদের কমিটি শতভাগ স্বচ্ছ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন