স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত দু’দিন ব্যাপী (১৩-১৪ অক্টোবর ২০২২) চতুর্থ গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ সামিটে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য-‘দক্ষতা, অধিকার এবং যত্ন’ এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সকলের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের ৫২টি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশগ্রহণ করে। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে জাহিদ মালেক এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ১৩ অক্টোবর ‘কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় তিনি বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরেনজা বক্তব্য রাখেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের জনসম্পৃক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিস্ময়কর অর্জনের উদাহারণ দিয়ে কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। ১৪ অক্টোবর সকালে কান্ট্রি ইন্টারভেনশন পর্বে জনাব জাহিদ মালেক কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ এবং ইনোভেশন এন্ড মেন্টাল হেলথ এর উপর তথ্য ও উপাত্তসহ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোভিড মোকাবেলা এবং কোভিড টিকাদানে বাংলাদেশের অনন্য সাফল্যের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মানসিক স্বাস্থ্যকেও সফলভাবে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশ সক্ষম হবে। তিনি বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ আইন, নীতি এবং কর্মকৌশল রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন দেশের জনগণের মানসম্মত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নীতি ও কর্মকৌশলের বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরো জানান যে, ইতোমধ্যে ৮টি বিভাগীয় শহরে নতুন ৮টি মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এবং জেলা উপজেলা পর্যায়ে এনসিডি কর্ণারে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য স্কুল মেন্টাল হেলথ কার্যক্রম, এমএইচগ্যাপ প্রশিক্ষণসহ সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের বিষয়ে মন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অবহিত করেন।
জাহিদ মালেক আরো বলেন, বাংলাদেশের সম্পদ সীমিত এবং মানসিক স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবলের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ই-মেন্টাল হেলথ, এ্যাপভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবাসহ নানা উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া চলমান। এই প্রক্রিয়াসমূহকে আরো বেগবান করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভূক্ত করতে ‘স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ’ কার্যক্রমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করায় মন্ত্রী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া, সম্মেলন শেষে মাননীয় মন্ত্রী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলের সাথে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দেশে দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি কোভিড মোকাবেলা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মন্ত্রী বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার প্রতিনিধির সাথে আলোচনায় কমিউনিটি বেইজড মেন্টাল হেলথ সার্ভিস প্রদানে দেশের বিদ্যমান প্রাথমিক স্বাস্হ্য সেবা অবকাঠামো যেমন ১৪০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক, ৪০০০ ফেমিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার, ৫০০ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্হ্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন। তিনি কমিউনিটির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্হ্য সেবা প্রদানের জন্য ব্যক্তি নির্বাচন, তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি, অর্থায়ন ইত্যাদির উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এসকল বিষয়ে তিনি বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া, প্রধান মন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে প্রণীত মানসিক স্বাস্হ্য বিষয়ক আইন, নীতিমালা ও কর্মকৌশলের কথা উল্লেখ করেন।
এর আগে ১২ অক্টোবর মাননীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৪-সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল রোমে পৌঁছালে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শামীম আহসান মন্ত্রীকে বিমান বন্দরে স্বাগত জানান। মন্ত্রী রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং দূতাবাসের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন