রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম শুরু সিটি স্ক্যান এবং কোবল্ট মেশিনও সচল হল

বিপুল ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপন্টে অচলের পাশাপাশি জনবল সংকটেও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৪:৪৯ পিএম

শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদ রোগীদের জন্য এনজিওগ্রাম এবং ¯œায়ু রোগীদের রোগ নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান চালু করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে এ দুটি মেশিন দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। গত ১৫ দিনে এ হাসপাতালে ৩জন রোগীর হার্টের ব্লক অপসারন করে রিং স্থাাপন সম্ভব হয়েছে বলেও পরিচালক জানিয়েছেন। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ এনজিও গ্রাম মেশিনের সাহায্যে এখন এ অঞ্চলের হৃদরোগী বিশেষ করে যাদের হ্রাদযন্ত্রের ধমনিতে ব্লক রয়েছে, তাদের রিং পড়ানো সহ রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে বলে হাসপাতালটির সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন। একই সাথে এ হাসপাতালে রেডিওগ্রাম করার লক্ষে ‘কোবাল্ট-৬০’ মেশিনটিও সচল করা সম্ভভ হওয়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রেডিও থেরাপী প্রদান শুরু করায় এখানের রোগীদের আর ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে না।

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান, বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির সিটি স্ক্যান, এমআরআই, কোবাল্ট-৬০ মেশিন ছাড়াও সেল সিরাম সেপারেটর এবং একাধিক আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিকল ছিল। হাসপাতাল কতৃপক্ষ এসব মেশিন মেরামত বা পূণর্বাশন সহ নতুন মেশিন সরবারহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনেক দিন ধরেই দেন দরবার করে আসছিলেন।
কিন্তু এতদিন সেসব প্রচেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসু না হলেও অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটির বিকল এনজিওগ্রাম এবং সিটি স্ক্যান ছাড়াও রেডিও থেরাপীর কোবল্ট-৬০ মেশিনগুলো সচল হয়েছে। তবে অন্যান্য বিকল মেশিনগুলো কবে নাগাদ সচল বা পূণর্বাশন সম্ভব হবে, সে বিষয়ে আপতত কতৃপক্ষ কিছু বলতে না পারলেও ‘প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে’ বলে জানিয়েছেন পরিচালক সহ দায়িত্বশীল মহল।
তবে অতি সম্প্রতি মেরামত হওয়া অতি স্পর্ষকাতর ৩টি মেশিন সচল হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও উন্নত ও সহজতর হবে বলে কতৃপক্ষ আশা করছেন।
এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুপমেন্ট ও জনবল সংকট সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা পরিচালন-এ সব চেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে আছে। দৈনিক গড়ে ১৮শ রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও ৫শ শয্যার জন্য অনুমোদিত জনবলেরও প্রায় ৩০ ভাগ শূণ্য এ হাসপাতালে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও প্রতিদিন আরো প্রায় দেড় হাজার রোগীর ব্যাবেস্থাপত্র দেন চিকিৎসকগন।
চিকিৎসক থেকে শুরু করে রেডিওলজিস্ট, রেডিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট-এর অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য থাকায় হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত রোগীদের দূর্ভোগের সীমা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎগনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। বিশেষ করে গরীব ও অসহায় রোগীরা বাইরে থেকে ক্লিনিক্যাল পরিক্ষা সহ এক্স-রে করাতে না পাড়লে দিনের পর দিন হাসপাতালের বেড বা মেঝেতে পরে থেকে আরো দূর্বল হয়ে পড়ছেন। এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অনুমোদিত চিবকিৎসকের পদ মাত্র ১০টি হলেও সেখানেও আছে শূণ্যতা।
হাসপাতালটির প্যাথলজি বিভাগে ৪ জন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের বিপরিতে আছেন দু জন। ১০ জন টেকনিশিয়ানের ৪ জনই অন্য হাসপাতালে প্রেসনে নিযুক্ত। ফলে বিশাল এ হাসপাতালটিতে রোগ নির্ণয় কার্যক্রমে যথেষ্ঠ বিপত্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শ রোগীর রক্ত সহ বিভিন্ন নমুনা পরিক্ষার জন্য গ্রহন করতে হলেও ১জন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ও দুজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট-এর পক্ষে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করেও এ বিপুল সংখ্যক নমুনা পরিক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
হাসপাতালটির রেডিও এ্যন্ড ইমেজিং বিভাগে ১৫টি এক্স-রে মেশিনের ১৩টি বিকল ছিল এতদিন। সচল দুটি এক্স-রে মেশিনের সাহায্যে হাসপাতালের ইনডোর ও আউট ডোরের ১০ভাগ রোগীরও এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে সিংহভাগ রোগীকেই হাসপাতালের বাইরে এক্স-রে করাতে হচ্ছে । তবে অতি সম্প্রতি আরো কয়েকটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন এখানে দেয়া হয়েছে। ৪টি পর্টেবল এক্স-রে মেশিনের দুটি শিশু বিভাগ ও হৃদরোগ বিভাগে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। এখানেও রেডিওলজিস্ট থেকে শুরু করে অন্যসব পদে জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালটির রেডিওলজি, জেনারেল রেডিওলজি ও নিউরো রেডিওলজি বিভাগে অধ্যাপকের পদ শূণ্য। দুজন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে একজন দায়িত্বে থাকলেও ৩জন সহকারী অধ্যপকের বিপরিতে কর্মরত একজন।
এসব ব্যাপারে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা এ হাসপাতালের অচল সব মেশিন সচল করা ছাড়াও পরিবর্তনেরও চেষ্টা করছি। অতি সম্প্রতি এখানে নতুন আল্ট্রাসোনো গ্রাম মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন সহ কয়েকটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় ইলেট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেই এমআরআই মেশিন সহ আরো কিছু অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট আসবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি। জনবল সংকট প্রসঙোগ তিনি জানান, এক বচল আগে যেখানে হাসপাতালটিতে মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৫৫ ভাগ শূণ্য ছিল এখন সেখানে শূণ্য পদনে হার ৩০ ভাগেরও কম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন