আগামী ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গতবারের সমাবেশের চেয়েও এবার বড় শোডাউন করতে চান দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে, নেতাকর্মীদের মাঝে গণগ্রেফতারের শঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনি সমাবেশ বানচাল করতে সরকারি দলের বাধা প্রদানের বিষয়টিও তাদের চিন্তার মধ্যে রেখেছে। অন্যদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আ.লীগ নেতারা এক প্রকার অস্বস্তিতে রয়েছেন। যদিও তারা বলেছেন, সমাবেশ করার অধিকার গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের রয়েছে, কিন্তু সমাবেশের নামে কোনো প্রকার অরাজকতা মেনে নেয়া হবে না।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এহতেশামুল হক শাওন জানান, সমাবেশ সফলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। ১৬ টি উপ কমিটি রাত দিন কাজ করছে। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের সমাবেশের বিশাল সফলতা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। খুলনায় কয়েক লাখ নেতাকর্মী জমায়েত হবেন। প্রত্যেকের হাতে লাঠি ও লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা থাকবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। তবে যদি কেউ বাঁধা দেয়, সেখানেই আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি আমাদের বাধা না দিয়ে কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খুলনার বিভাগীয় সমাবেশ হবে এ সরকারের কফিনের শেষ পেরেক।
নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হিল্টন জানান, সমাবেশকে ঘিরে একদিকে যেমন উৎসবের আমজে রয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েছে। আ.লীগ সরকার যেকোনো উপায়ে বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত। অতীতেও আমরা দেখেছি, বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচি আহ্বান করলে আ.লীগ পুলিশ দিয়ে তা দমনের চেষ্টা চালায়। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তবে এবার অন্যায় গ্রেফতার মেনে নেয়া হবে না। সরকার পতনের মাধ্যমে এ আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ আজ আ.লীগের উপর চরম ক্ষুব্ধ। এক মুহূর্তও জনগণ এই সরকারকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া মধ্যরাতের ভোটের এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরব। ২২ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতা কর্মীরা খুবই উজ্জীবিত। আশা করছি কয়েক লাখো নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পাচ্ছি, সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হতে পারে। যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এমনটি হলে সবাই পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দেবেন। সরকারের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জনগণের আন্দোলনে বাধা দিলে তার পরিণাম শুভ হবে না। তারপরও আমরা আশা করি খুলনার সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে।
এদিকে, খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মাঝে অস্বস্তি কাজ করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। খুলনার কয়েকটি সংসদীয় আসন বিএনপির শক্ত ঘাটি। ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে বিএনপির। কাজেই প্রকাশ্যে বাধা দেয়া বা এমন কোনো কিছু আওয়ামী লীগ করতে চায় না যাতে সাধারণ মানুষ বিএনপিকে আরো বেশি সমর্থন করে। তাই আওয়ামী লীগ কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ করে দেয়া, পুলিশের সহায়তায় জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন, সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচির নামে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো ওই দিন মিছিল সমাবেশ করে রাজপথ দখলে নেয়া প্রভৃতি করতে পারে।
এদিকে, সমাবেশে আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারে এমনটাও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। গত ১২ অক্টোবর বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যতই চিল্লাচিল্লি করুক, বিএনপিকে পদ্মার এপারে নামতে দেওয়া হবে না। জাতীয় শ্রমিক লীগের ৫৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয় রেলরোডে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমগ্র দক্ষিণের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুস্পুত্র শেখ হেলালউদ্দিন একটি ফ্যাক্টর। কাজেই তার একটি কথা অনেক গুরুত্ব বহন করে।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুজিত অধিকারী বলেছেন, সমাবেশের নামে বিএনপি কোনো প্রকার অরাজকতা করলে তা মেনে নেয়া হবে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন