শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদ রোগীদের জন্য এনজিওগ্রাম এবং স্নায়ু রোগীদের রোগ নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে এ দুটি মেশিন দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক। গত ১৫ দিনে এ হাসপাতালে ৩ জন রোগীর হার্টের ব্লক অপসারণ করে রিং স্থাপন সম্ভব হয়েছে বলেও পরিচালক জানিয়েছেন। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনের সাহায্যে এখন এ অঞ্চলের হৃদরোগী বিশেষ করে যাদের হ্রাদযন্ত্রের ধমনিতে ব্লক রয়েছে, তাদের রিং পরানোসহ রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে বলে হাসপাতালটির সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন।
একইসাথে এ হাসপাতালে রেডিওগ্রাম করার লক্ষে ‘কোবাল্ট-৬০’ মেশিনটিও সচল করা সম্ভব হওয়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রেডিও থেরাপী প্রদান শুরু করায় এখানের রোগীদের আর ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সরকারি চিকিৎসা সেবাপ্রতিষ্ঠান, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির সিটি স্ক্যান, এমআরআই, কোবাল্ট-৬০ মেশিন ছাড়াও সেল সিরাম সেপারেটর এবং একাধিক আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিকল ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব মেশিন মেরামত বা পুনর্বাসনসহ নতুন মেশিন সরবারহে স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনেক দিন ধরেই দেন দরবার করে আসছিলেন।
কিন্তু এতদিন সেসব প্রচেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসু না হলেও অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটির বিকল এনজিওগ্রাম এবং সিটি স্ক্যান ছাড়াও রেডিও থেরাপীর কোবল্ট-৬০ মেশিনগুলো সচল হয়েছে। তবে অন্যান্য বিকল মেশিনগুলো কবে নাগাদ সচল বা পুনর্বাসন সম্ভব হবে, সে বিষয়ে আপতত কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে না পারলেও ‘প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে’ বলে জানিয়েছেন পরিচালকসহ দায়িত্বশীল মহল। তবে অতি সম্প্রতি মেরামত হওয়া অতি স্পর্ষকাতর ৩টি মেশিন সচল হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সরকারি এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও উন্নত ও সহজতর হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুপমেন্ট ও জনবল সঙ্কট সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা পরিচালন-এ সব চেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে আছে। দৈনিক গড়ে ১৮শ’ রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও ৫শ’ শয্যার জন্য অনুমোদিত জনবলেরও প্রায় ৩০ ভাগ শূন্য এ হাসপাতালে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও প্রতিদিন আরো প্রায় দেড় হাজার রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকগণ।
চিকিৎসক থেকে শুরু করে রেডিওলজিস্ট, রেডিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট-এর অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত রোগীদের দুর্ভোগে। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎগণও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। বিশেষ করে গরব ও অসহায় রোগীরা বাইরে থেকে ক্লিনিক্যাল পরিক্ষাসহ এক্স-রে করাতে না পাড়লে দিনের পর দিন হাসপাতালের বেড বা মেঝেতে পরে থেকে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অনুমোদিত চিবকিৎসকের পদ মাত্র ১০টি হলেও সেখানেও আছে শূন্যতা।
হাসপাতালটির প্যাথলজি বিভাগে ৪ জন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের বিপরীতে আছেন দু’জন। ১০ জন টেকনিশিয়ানের ৪ জনই অন্য হাসপাতালে প্রেসনে নিযুক্ত। ফলে বিশাল এ হাসপাতালটিতে রোগ নির্ণয় কার্যক্রমে যথেষ্ঠ বিপত্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শ’ রোগীর রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা পরিক্ষার জন্য গ্রহণ করতে হলেও ১ জন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ও দু’জন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট-এর পক্ষে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করেও এ বিপুল সংখ্যক নমুনা পরিক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
এসব ব্যাপারে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা এ হাসপাতালের অচল সব মেশিন সচল করা ছাড়াও পরিবর্তনেরও চেষ্টা করছি। অতি সম্প্রতি এখানে নতুন আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনসহ কয়েকটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় ইলেট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই এমআরআই মেশিনসহ আরো কিছু অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জনবল সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি জানান, এক বছর আগে যেখানে হাসপাতালটিতে মঞ্জুরিকৃত পদের প্রায় ৫৫ ভাগ শূন্য ছিল এখন সেখানে শূন্য পদের হার ৩০ ভাগেরও কম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন