ময়মনসিংহের সাথে জেলা বাস বন্ধ, হামলার আশঙ্কা, পথে পথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের তল্লাশিসহ সকল বাধা পেরিয়েই গতকাল শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। চট্টগ্রামের পর ময়মনসসিংহেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সমর্থন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ও আ.লীগের হামলায় নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশের পর গতকাল শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে দ্বিতীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গণসমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিষ্কারভাবে বলছি, এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। সরকারকে বিদায় করে নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।
তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বলেন, কথায় কথায় হুঙ্কার দেবে, ভয় দেখাবে, তোমাদের হুঙ্কারে বাংলাদেশের মানুষ এখন আর ভয় পায় না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে উত্তাল তরঙ্ক দেখা যাচ্ছে এতে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো কোন দিন কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়না। তাই অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে. সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সময়ে নতুন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি স্বচ্ছ পার্লামেন্ট গঠন হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এদিকে গতকাল পূর্বনির্ধারিত ২টার কিছু সময় আগে বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হয়। তবে তার আগে থেকেই ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিএনপির হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ ও তার আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শনিবার গণসমাবেশের কর্মসূচি থাকলেও সমাবেশের দিন বাধা আসতে পারে এমন আশঙ্কায় আগের দিন শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে যান। তারা কেউ রাত আটটার মধ্যে, কেউ ভোরে এসে পৌঁছেছেন। কেউ এসেছেন বাসে, কেউ ট্রেনে আবার কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। রাতে সমাবেশস্থলে পৌঁছার পর নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ মাঠে, কেউ কেউ পাটি পেতে ঘুমিয়েছেন সড়কের ফুটপাতে। তাঁরা বলেন, সমাবেশে আসার পথে নানা বাধার আশঙ্কা ছিল। যে কারণে তাঁরা রাতেই চলে এসেছেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বিএনপি কর্মী মাসুদ রানা বলেন, রাতে যমুনা এক্সেপ্রেস ট্রেনে করে তাঁরা এসেছেন। ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে এসেছেন সমাবেশস্থলে। যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে বিএনপির অন্তত দেড় হাজার কর্মী এসেছেন।
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি রহিছ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকেই নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ রুটে বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত দেড়টার দিকে ২৫টি সিএনজিচালিত অটোকিশায় তাঁরা রওনা হয়ে তিনটায় এসে পৌঁছান সমাবেশস্থলে। দুওজ ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী আবুল কাশেম বলেন, তাঁরা বাড়ি থেকে পাটি নিয়ে এসেছেন। রাতে সেই পাটি পেতেই কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছেন।
সমাবেশের দিন সকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে ৮টার দিকে সমাবেশস্থল পলিটেকনি ইনস্টিটিউটের মাঠ ও আশপাশের এলাকায় বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। আর অন্যদিকে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের দিকে ছুটছেন। বিএনপি সূত্রে ও সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শনিবার সকাল থেকেই ময়মনসিংহের আশপাশের জেলাগুলো থেকে যাতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সমাবেশে অংশ নিতে না পারে সেজন্য পথে পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সড়কে পাহাড়া বসিয়ে প্রতিটি গাড়িতে তল্লাসি চালিয়েছেন, সমাবেশমুখী হলে তাদের মারধর বা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এতোকিছুর পরও সমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ময়মনসিংহের গণসমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। ককটেল, গুলি, লাঠিসোঁটা ও মোটরসাইকেলের মহড়া উপেক্ষা করে যাঁরা সমাবেশে এসেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানাই। ঢাকা থেকে আসার পথে গাজীপুর পার হতেই দেখেছি, সড়কে যানবাহন নেই। মনে হলো একি! হরতাল চলছে, নাকি কারফিউ। আরও সামনে এসে দেখলাম, ছোট ছোট ট্রাকে করে আমাদের কর্মীরা ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছেন। আরও শুনলাম, পথে পথে সোনার ছেলেরাও (ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে) নাকি লাঠি হাতে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সবার আগে তরুণদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, জ¦ালানি তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, গণতন্ত্র ও শান্তি প্র্রতিষ্ঠা করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দাবি পরিস্কার, মিথ্যা মামলা সাজাপ্রাপ্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা, সে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আর অবিলম্বে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়েছে, এখন ময়মনসিংহের মানুষ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন নতুন করে। এদেশের মানুষ এখন জেগে উঠছে, জেগে উঠবে। ইনশাল্লাহ আপনাদের সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় এই সরকারকে প্রদত্যাগে বাধ্য করব,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব। এই হোক আমাদের আজকের শপথ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পাঁচ জন বীর সেনা ছাত্রদলের নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম, যুবদলের নারায়ণগঞ্জ শাওন ও মুন্সিগঞ্জের শাওন, যশোরের আব্দুল আলিম তারা প্রাণ দিয়েছেন। রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, পুলিশের গুলির সামনে বুকে পেতে দিয়ে আওয়াজ তুলছে যে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা তাদের সম্মান দেখাতে চান, তাদের শ্রদ্ধা করতে চান, তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেবেন না বলে শপথ নিয়েছেন। ওই শপথে আজকে আমাদের অটুট থাকতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অবৈধ এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশের পর সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মামুদ আলম ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়মারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মশিউর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুল আলম, ইশরাক হোসেন, মহিলাদলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, সেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আন্ত:জেলা বাস যোগাযোগ বন্ধ: বিএনপির সমাবেশের আগে গতকাল শনিবার অভ্যন্তরীণ রুটসহ ময়মনসিংহ থেকে আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল করেনি কোন বাস। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। গতকাল সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ও শম্ভুগঞ্জ মোড় এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলেনি। নগরের পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনালেও কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনাগামী কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। ওই তিন জেলা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাগামী যেসব বাস চলাচল করে, সেগুলোও চলেনি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী হাতে গোনা কয়েকটি বাস ময়মনসিংহ হয়ে চলতে দেখা গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশে পরিবহনমালিকেরা আন্তজেলা ও ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাগামী বাস বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সমাবেশে যাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা না আসতে পারে, সেজন্য অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) ময়মনসিংহের সমাবেশে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের ৪ জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা আসার কথা। কিন্তু, সেসব জেলা থেকে ময়মনসিংহে আসার যে রুট, এসব রুটে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট করা হয় তাতে করে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসতে না পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের যেসব নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহে হোটেলে অবস্থান করেন তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মহড়া দিয়েছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা টহল দিয়েছে।
তবে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা কোনো ধরনের ধর্মঘট করিনি। মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এটা করছে। আপনি নিজেও একজন পরিবহন মালিক, আপনি কেন বন্ধ করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো ১ বা ২ জন মালিক করেননি। সবাই মিলেই করেছে। আসলে চট্টগ্রামে যানবাহন ভাঙচুর হওয়ায় আতঙ্কিত হয়েই পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে আসলে আমাদের কারো কিছু করার নেই।
পথে পথে বাধা:
বিএনপির সমাবেশে যাতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত হাতে না পারেন সে কারণে পথে পথে তাদের বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। তাদের অভিযোগ, সমাবেশে কর্মী সমাগম ঠেকাতে যান চলাচল বন্ধের পর সড়কে সরব ছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোকজন। কোথাও লাঠি হাতে, কোথাও মিছিল নিয়ে সড়কে অবস্থান করেন তাঁরা। এ সময় গাড়ি তল্লাশি, গাড়ির চালককে মারধরসহ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ত্রিশাল বাজার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের লোকজন,
তাঁদের কারও হাতে লাঠি, কেউবা দাঁড়িয়ে আছেন কাঠের টুকরা নিয়ে। তাঁরা অবস্থান নেন সড়কের ঠিক মাঝখানে। এর মধ্যে কোনো ট্রাক, পিকআপ বা ছোটখাটো যাত্রীবাহী বাস আসতে দেখলেই পথ আটকে ধরেন তাঁরা। যানগুলো তল্লাশি করে তাঁরা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কোনো যানবাহন তাঁদের সামনে এলেই বিএনপিবিরোধী স্লোগান আর মিছিল নিয়ে ওই যানবাহনকে ঘিরে ধরেন তাঁরা। এ সময় বিএনপির কোনো কর্মী বা নেতা সমাবেশে যাচ্ছেন কি না, দেখতে পুরো গাড়ি তল্লাশি করেন। কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে ময়নসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোড, নেত্রকোণা, জামালপুরসহ অন্যান্য জেলাগুলো থেকে যাতে সমাবেশে নেতাকর্মীরা অংশ নিতে পারে সেজন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পথে পথে তল্লাশি বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয়া, বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সমাবেশে থাকতে পারছেন, এতেই আনন্দিত মো. হায়দার আলী। তিনি বলেন, তিনি আগে থেকেই জানতেন, সরকার দলের লোকজন সমাবেশ ঠেকাতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তাই তিনি ও তাঁর বন্ধু নাদির আলী আগের দিন (শুক্রবার) সন্ধ্যায় চলে আসেন ময়মনসিংহ শহরে। এরপর রাতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে ঘুমিয়ে সকালে সমাবেশে যোগ দেন। হায়দার বলেন, সমাবেশে প্রচুর লোকজন। এটা দেখেই খুব ভালো লাগছে। কষ্ট হলেও সমাবেশে অংশ নিতে পারছি এটাই আনন্দের।
খালেদা জিয়ার আসন খালি:
ময়মনসিংহের গণবিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্মানে একটি চেয়ার খালি রাখা হয়। এ সময় মঞ্চের মাঝখানে খালেদা জিয়ার জন্য সংরক্ষিত খালি চেয়ারের এক পাশে বসেন সমাবেশের প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরেক পাশে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ অন্য নেতারা। ফলে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে এই খালি চেয়ারকে ঘিরে তৈরি হয় বিশেষ কৌতূহল। এ সময় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওই খালি চেয়ারের বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আপনারা দেখছেন সমাবেশের মঞ্চে একটি চেয়ার খালি। এই চেয়ারটি খালেদা জিয়ার। ইনশাআল্লাহ অচিরেই বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে এভাবেই আমাদের মধ্যমনি হয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই যে দেখছেন চেয়ারটা খালি আছে। এটা কার জন্য? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি আমাদের কারাবন্দী। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন