শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রুহুল কবির রিজভী সরকারের প্রতিহিংসার শিকার

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই অনির্বাচিত, অবৈধ ফ্যাসিষ্ট সরকার, ক্ষমতাকুক্ষিগত করে রাখার জন্য এবং বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষে আবার পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। মিথ্যা, গায়েবী মামলা, গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশী এবং হয়রানী করে নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের কারাগারে নিয়ে যে ধরনের নির্যাতন করে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলাকে এই সরকার প্রজেক্টের মতো নিয়েছে। তারা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হচ্ছে। নেতারা জামিন নিয়ে যখন বের হবেন তখনই আবার জেলগেটে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে আছে বাণিজ্যের ব্যাপার। কারণ এখন পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আমাদেরকে প্রথম কারাগারে নেওয়ার পর কনডেম সেলে রাখা হয়েছিলো কোয়ারেন্টিনের নামে। যা চরম অমানবিক। এক্ষেত্রে কারাবিধি মানা হয়নি। কারাগারের আচরণ ও নিপীড়ন যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় নির্বাচনের আগে সরকার আবারও বিএনপিকে মাঠশুন্য করতে চায়।

তিনি বলেন, মিথ্যা, গায়েবী মামলা, গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশী এবং হয়রানী করে নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এই হীন পরিকল্পনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ ও অনেক সিনিয়র নেতাসহ অসংখ্য কর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। মিথ্যা ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে কারান্তরীণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং তাকে সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না, তাছাড়া তাকে সবসময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা নেয়া হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই এমনকি কোন কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা নেওয়া করানো হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে কোনো বন্দিকে আদালতে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেল কোড বিধির বিধান মতে আরামদায়ক পদ্ধতিতে বিধান থাকা সত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্ব পুলিশ আইন অমান্য করে যাচ্ছে যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছারই প্রতিফলন এটি।

তিনি আরো বলেন, মূলত: রিজভী আহমেদ বর্তমান সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বর্তমান অনৈতিক সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে আজ মানবিকতাবোধও হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একজন সোচ্চার কন্ঠ বলেই তিনি সরকারের রোষানলের শিকার। তাঁর মতো একজন জাতীয় নেতা কারাগারে ভীষণ অসুস্থ হলেও তাঁকে সুচিকিৎসা দিতে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

মির্জা ফখরুল বলেন, রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন জলিল কালু, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহবায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আলী ভাটারা থানা, মো: শাহজাহান ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক গুলশান থানা সহ অসংখ্য নেতাকর্মী বর্তমান সরকারের রোষানলে কারাবন্দী আছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল ও পর্যদুস্ত করতে নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেন আরও তীব্র মাত্রা লাভ করেছে। সরকার দেশকে বিএনপিশূণ্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়ে চারিদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়। বিশে^র গণধিকৃত সকল স্বৈরাচারকে টেক্কা দিয়ে জনসমর্থনহীন আওয়ামী সরকার এখন মানুষের জানমালের নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের হিংস্ররুপ দেশের মানুষকে নির্বাক করে ফেলেছে। অজানা আশঙ্কা, আতংক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বর্তমান স্বৈরশাহী দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব ধ্বংস করে নিজেদের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে চায়। তবে জনগণ তাদের এই মনোবাঞ্ছা কোনদিনই পূরণ হতে দেবে না। অতীতের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারায় বাংলাদেশের মানুষ যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা অবিলম্বে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সুচিকিৎসা প্রদান এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ বিএনপি’র সকল কারারুদ্ধ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, এডভোকেট মেজবাহ, তাইফুল ইসলাম টিপু, সাঈদ সোহরাব ও তারিকুল আলম তেনজিং, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন