অপহরণকারীদের হাতে ১০ দিন জিম্মি থাকার পর কৌশলে রক্ষা পেয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র জাহিদ শেখ। পিরোজপুর জেলার ভাইজোড়া গ্রামের মিরাজ শেখ এর ছেলে জাহিদ গত ৫ অক্টোবর অপহৃত হয়। এ ঘটনায় থানায় জিডি ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন ফল পায়নি জাহিদের পরিবার।
দীর্ঘ ১০ দিন আটক থাকার পর ১৫ অক্টোবর শনিবার জাহিদসহ ৭ জনকে পিকআপে করে অন্যত্র নেওয়ার চেষ্টা চালায় অপহরণকারীরা। অপহরণকারীরা সন্ধ্যায় রূপসা এলাকায় এসে পিকআপ থেকে ৭ জনকে মাইক্রোবাসে তোলার সময় জাহিদ পালিয়ে পূর্ব রূপসা ব্যাংকের মোড়ে এসে একটি দোকান থেকে তার বাবা-মাকে ফোন করে। ফোন পেয়ে জাহিদের পিতা মিরাজ রূপসার রাজাপুর এলাকায় বসবাসকারী তার ফুফাতো ভাই মো. হাসিবুর রহমান শাওনকে বিষয়টি জানালে শাওন দ্রæত পূর্ব রূপসা ব্যাংকের মোড় এসে জাহিদকে তার হেফাজতে নেয়। অপহরণের শিকার জাহিদ পিরোজপুর টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। জাহিদ জানায়, ৫ অক্টোবর সকালে বাইসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে পিরোজপুর সদর হাসাপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে একটি রিকশা তাকে ধাক্কা দেয়। রিকশার তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ক্ষতিপূরণ দাবি করে ওই রিকশা চালক একটি দোকানে তাকে আটকে রাখে। এসময় জাহিদ ওই দোকান থেকে মোবাইলে তার বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এরপর অপহরণকারী দলের দুই সদস্য এসে আচমকা তার মাথায় আঘাত করে এবং ইনজেকশন পুশ করে। পরে যখন জ্ঞান ফেরে তখন জাহিদ নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরের ভিতর দেখতে পায়। কত ঘণ্টা বা কত দিন পর তার জ্ঞান ফিরেছে তার কিছুই বলতে পারেনা সে। ওই ঘরে তার মত আরো ৬ জনকে আটক রাখা হয়েছে যা দেখতে পায় জাহিদ। বাঁচার আর কোন পথ নেই ভেবে সারাক্ষন কাঁদতে থাকে জাহিদ। সেখানে ঠিকমত খেতে দেয়া হত না। ওই ঘরে আটক রাখার ১০দিন পর ১৫ অক্টোবর তাদের ৬ জনকে একটি পিকআপে করে অজানার উদ্দেশ্যে রওনা হয় অপহরণকারীরা। তারা রূপসা এলাকায় এসে পিকআপ থেকে তাদের ৭ জনকে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলার সময় ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যায় জাহিদ। তবে রূপসার কোন এলাকা থেকে পালিয়েছে তা সে বলতে পারেনি। পরে সে সেখান থেকে পালিয়ে পূর্ব রূপসা ব্যাংকের মোড় আব্দুল্লাহর মোবাইলের দোকানে এসে জাহিদ তার বাবা মা’কে ফোন করে। ফোন পেয়ে রাতেই তারা এসে পূর্ব রূপসা বাস স্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে ছেলেকে নিয়ে নিয়ে যায়। এর আগে জাহিদের বাবা মিরাজ শেখ রূপসার রাজাপুর এলাকায় বসবাসকারী তার ফুফাতো ভাই মো. হাসিবুর রহমান শাওনকে বিষয়টি জানালে শাওন দ্রæত পূর্ব রূপসা ব্যাংকের মোড় এসে জাহিদকে তার হেফাজতে নেয়।
শাওন জানায়, জাহিদকে হারিয়ে গত ১০দিন আমার ভাইসহ পরিবারের লোকজন পাগল হয়ে গেছে। অপহরণের তিন থেকে চার দিন পর অপহরণকারীরা ৪ লাখ টাকা দাবী করে। ওই টাকা নিয়ে ভেকুটিয়া ফেরিঘাট আসতে বলে জাহিদের পিতা মিরাজকে। সেখানে গিয়ে দুইজনকে পেলেও জাহিদকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় র্যাব ২জনকে আটক করে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। জাহিদের পিতা মিরাজ শেখ জানায়, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়েছি।
রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। জাহিদকে পেয়ে আমরা খুবই খুশি। তিনি অপহরণের শিকার বাকী ৬ জনকে উদ্ধার পূর্বক অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন