জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, শেখ রাসেল হতে পারতেন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার নবতর দূত, যে শিশুটি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এবং তাঁর সামাজিকীকরণের প্রভাবে অপার গুণাবলি, মানবিকতা, সাহসিকতা ও নতুন পৃথিবীর নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠতে পারতেন; সেই শিশুটির সকল সম্ভাবনাকে হত্যা করা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যে শিশুটির অধিকার ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে নিজেকে নিজস্ব স্বকীয়তায় গড়ে তোলার, আমাদের সবুজে-শ্যামলে, স্নিগ্ধতায়, অপূর্ব বাংলায় নিজেকে মেলে ধরার, তুলে ধরার; স্বাধীন বাংলাদেশে সেই শিশুটিকে প্রত্যুষের আলো ছড়ানোর আগেই পৃথিবী থেকে চিরতওে সরিয়ে দেয়া হলো। আজও তার উত্তর খুঁজে পাওয়া গেলো না- কী ছিল সে শিশুপুত্রটির অপরাধ?’
মঙ্গলবার (১৮অক্টোবর) বিকালে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেইমে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) আয়োজিত শেখ রাসেল দিবস ২০২২ উপলক্ষে ‘শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাÐ: ন্যায়বিচার, শান্তি ও প্রগতির পথে কালো অধ্যায়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘মাত্র ১০ বছর বয়সের সম্ভাবনাময়ী কিশোর শেখ রাসেলকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে রক্তাক্ত করা হলো সাইকেলে চক্করের সেই রাজপথ। ধানমন্ডি থেকে গোটা বাংলাদেশ সেদিন কালো ছায়ায় বিবর্ণ, শোকার্ত আর পাথর বর্ণে গন্ধে বাঁধনে স্তব্ধ। রাসেলের সেই ভয়ার্ত কণ্ঠ যেন আজো শঙ্কা ছড়ায় বাংলাদেশের ভিতে, যেন আজো আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেÑ কেমন করে বাঙালি কুলাঙ্গার সন্তানরা হত্যা করে জাতির পিতাকে? এমনকি ১০ বছরের শিশুপুত্রকেও।’
শিশু রাসেলের বেড়ে ওঠা, মানবিকতা ও প্রজ্ঞার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কিশোরের কথা ছিল পরের দিন বিশ^বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে নিজের পিতাকে জাতির পিতা হিসেবে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার। নিশ্চয়ই সে শিশুটির জন্য ঐদিনটি হতো অপূর্ব আনন্দের বিরল এক ক্ষণ। পিতা আনুষ্ঠানিকভাবে যে শিশুপুত্রটির কাছ থেকে ফুল নিতো, সে পিতা নিশ্চয়ই গৌরব বোধ করতেন, পুলকিত হতেন। হতে পারতো সে এক আনন্দঘন চমৎকার পরিবেশ। কিন্তু খুনীদের পরিকল্পনায় পৃথিবীর আনন্দঘন সেই বিরলক্ষণটুকু বদলে গিয়ে হলো পিতা-পুত্রের রক্তাক্ত লাশ নিথর হয়ে পড়ে থাকার। এমনকি একই সঙ্গে পিতা-পুত্রের কবর পর্যন্ত একই জায়গায় দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর লাশ পাঠানো হয়েছিল নিভৃত গোপালগঞ্জে যেনো তাঁর অস্তিত্ব কেউ খুঁজে না পায়। ইতিহাস হত্যকারীদের উল্টোপথে হেঁটেছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরের জায়গা আজ বাঙালির তীর্থে পরিণত হয়েছে। আর শিশুপুত্র রাসেল আজ বাস করে কোটি কোটি বাঙালীর হৃদস্পন্দনে, রাসেল বসবাস করে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে হত্যার বিচারের দাবি হয়ে। রাসেল আজ অন্যায্য হত্যার প্রতিবাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। রাসেল আজ বাঙালির অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র শ্লোগান। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবির অনন্য প্রতীক। রাসেল আমাদেরকে জাগ্রত রাখে সমাজ ও রাষ্ট্র প্রহরায়।’
জাতীয় বিশ্বব্যিালয় ভিসি আরও বলেন, ‘আর কোনোদিন যেনো কোনো খুনির ষড়যন্ত্র উদ্যত না হয়, রাসেলের কফিন আমাদের সেই মিছিলে শামিল করে। রাসেল তার নিজ হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালিকে আরও শুদ্ধ করে ক্রমাগত। তাই রাসেল বিস্মৃত হয় না, বেঁচে থাকে, জেগে থাকে আমাদের মধ্যে। রাসেল আমাদের তাড়না হয়ে, চেতনা হয়ে, জাগ্রত আলোকবর্তিকা হয়ে সমাজের পাহাড়ায় সজাগ রাখে সর্বক্ষণ।’
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে জাতীয় সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, সূচনা ফাউন্ডেশনের সিওও ডা. সাকি খোন্দকার। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। সেমিনারে শেখ রাসেলের ওপর তথ্য চিত্র, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিথিলা ফারজানা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন