ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে একটি সরকারী পুকুর পাড়ে শ^শানে শ^শান কালি পূজা করা নিয়ে এলাকার হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বুধবার সকালে মুসলমান সম্প্রদায়ের স্থানীয় কিছু লোক ঐ পুকুর পাড়ের আংশিক জমি বাঁশ দিয়ে ঘিড়ে নিয়ে দখলের চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি শান্ত করলেও উভয় সম্প্রদায়ের লোক জনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে যে কোন সময় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা প্রকাশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার গড়গাও, দুর্গাপুর, নারায়নপুর ও ক্ষিদ্রগড়গাও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে বড় গড়গাঁও গ্রামের ঠাকুর হাল পুকুরপাড়ের উত্তর-পশ্চিম কোনের অংশ শ^শান ঘাট হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। বাকি অংশ স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু লোক নিজেদের দাবী করে বাঁশঝাড় সহ গাছ পালা লাগিয়েছেন। গত মার্চ মাসে মুসলমান সম্প্রদায়ের স্থানীয় কিছু লোক ঐ শ^শানের পূর্বে পুকুরপাড়ে হঠাৎ করেই একটি মসজিদ স্থানের উদ্যোগ নেয় এবং রাতারাতি মসজিদের অর্ধেক নির্মান কাজ সম্পন্ন করে। এ নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে কন্দোল দেখা দেয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ঐ নির্মান কাজ বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে তা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। পরে নির্মানাধীন ঐ সমজিদ ঘড়ের ভিত্তির উপরের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। সে যাত্রায় থেমে যায় ঊভয় সম্প্রদায়ের কন্দোল। এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ^শানের জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শ^শানের জমিতে প্রাচীর করার জন্য সীমানা পিলার স্থাপনও করেন। সম্প্রতি সেখানে শ^শান কালি পুজা করার সিদ্ধান্ত নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে এবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে। এ নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। গত মঙ্গলবার শ^শাস কমিটি সেখানে কালি পুজা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকালে ঐ পুকুরের উত্তর-পূর্ব অংশ এবং আংশিক পশ্চিম ও দক্ষিন অংশ বাঁশ দিয়ে ঘিড়ে নিজেদের দখলে রাখা চেষ্টা করেন মুসলমান সম্প্রদায়ের স্থানীয় কিছু লোক। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী আফিসার শাহরিয়ার নজির, থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ও মকলেসুর রহমান চৌধুরী সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তারা উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন এবং বাঁশের বেড়া খুলে ফেলেন। যে যে অবস্থানে আছে, সে অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেন প্রশাসন। এতে উত্তেজনা সাময়িক নিরশন হয়।
শ^শান কমিটির সভাপতি অমল চন্দ্র রায় জানান, তাদের বাপ দাদার আমলের শ^শান দখল করার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে এবং আগামী ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শ^শান কালি পুজায় নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করে আসছেন এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে তারা চরম শংকিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, হিন্দুরা গোটা পুকুরপাড় দখল করা পায়তারা করছে। আমরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।
থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেখানে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, পুকুর এবং পুকুর পাড়ের জমি সরকারি। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের শ^শান ঘাট রয়েছে। কিছু অংশ মুসলিম পরিবার দখল করে আছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের সাথে কথা হয়েছে। এটা নিয়ে বসা হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তারপরও প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন