বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য

১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

১৬ ই অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২২, আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত একটি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য “লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড”। খাদ্যগ্ধ, আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। তদুপরি, বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, খাদ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংস্থা, কৃষি বিকাশ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক তহবিল, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ইত্যাদি সংস্থা ্রবিশ্ব খাদ্য দিবসগ্ধ পালন করে। দিনটি সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করে। বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯৮১ সনে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা আর প্রতিপাদ্য নিয়ে। ১৯৪৫ সনের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দরিদ্র ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে (খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ পৃথিবীর প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে দরিদ্রের কষাঘাতে ধুঁকে মরছে। তাইতো চেষ্টা চালাচ্ছে ২০২৫ সনের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে, খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি , দরিদ্রতা, অসম খাদ্য বণ্টন ইত্যাদির কারণে এটি ২১৫০ সালের আগে অর্জিত হবে না বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান জানান। মানুষ এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে খাদ্যের অধিকার নিয়ে। আর এ অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে তা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। তবে খাদ্যের সঙ্গে কৃষির সম্পর্কটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যদি কৃষিকে বাদ রেখে আমরা খাদ্যের কথা বলি তবে বিষয়টি হবে অযৌক্তিক। এবারের প্রতিপাদ্য বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আর প্রতিপাদ্যে সবার জন্য খাদ্য বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে। কৃষি প্রধান এ দেশে ১ কোটির ওপর বসতবাড়ি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসতবাড়িগুলো শুধুই আবাসস্থল নয় বরং একেকটি কৃষি, মৎস্য, পশু, হস্ত ও কুটির শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের দেশের আবাসস্থলগুলোতেই মূলত শাকসবজি, মসলাজাতীয় ফসল, ভেষজ, ঔষধি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মৎস্য প্রকৃতি চাষাবাদ হয়ে থাকে। কৃষকদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে এসব সম্পদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রম সফল করা সম্ভব যদি কৃষকদের ধ্যান ধারণা চিন্তার পরিবর্তন করে এসব বসতভিটা কার্যকরী তথ্য নির্ভর জ্ঞান সহ পরিচর্যা করা যায়। এতে কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নসহ ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষক পরিবার হবে স্বাবলম্বী। দেশের পতিত জায়গার সুষ্ঠু ব্যবহার করে সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ দেশের কৃষি ক্লাবগুলো জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে নানা নামে কৃষি ক্লাব গড়ে উঠেছে। কৃষি ক্লাবগুলো মূলত কৃষি সম্প্রসারণ এবং আয়বর্ধনমূলক কাজ করে থাকে। এগুলো গড়ে ওঠার মূল কারণ উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, তথ্য বা সেবা যথাসময়ে সাধারণ জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বাংলাদেশের কৃষিকে ডিজিটাল কৃষি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক পরিচালিত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র নামে সক্রিয় কৃষি ক্লাব গঠিত হয়েছে। যেখানে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ওয়েব ক্যাম, মোবাইল সেট ও সিম, মডেম ও ইন্টারনেট সিমসহ আরও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

নিরাপদ খাদ্যের সঙ্গে এসডিজির সম্পর্ক গভীর। মানুষের আয় যত বেশিই হোক, খাদ্য নিরাপদ না হলে জীবন হুমকিতে পড়বে। উন্নয়ন টেকসই করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় আইনগত কাঠামো প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনের গুণগত মান বাড়াতে হবে। তবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বাড়াবাড়ির কারণে যেন কোনো ক্ষতি না হয়। শ্রীলঙ্কায় খাদ্য অর্গানিক করতে গিয়ে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। আমাদের দেশের মানুষ এখন খাদ্য গ্রহণে অনেক সচেতন। প্রচুর মানুষ এখনও খাদ্যের প্রাপ্যতা থেকে দূরে। যে খাবার তারা পাচ্ছেন, সেটিও নিরাপদ নয়। এরা সংখ্যায় অসংখ্য, তারা কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে। তাদের নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে।

খাদ্যের দাম এখন যে হারে বাড়ছে, সেটিও আমাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকে সংকুচিত করে ফেলছে। কারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন সক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন তারা নিরাপদ-মানসম্মত খাবার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কিছু কাজ দরকার। এটি শুধু একটি ভেজালবিরোধী অভিযান নয়। সারাদেশে পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর তা মানুষের সামনে প্রকাশ হচ্ছে কিনা, এটি দেখতে হবে। যারা নিয়ম মানছে না, তাদের পুরোপুরি আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আনতে পারছি কিনা।

> বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিশ্লেষণঃ-
খাদ্যনিরাপত্তার সাথে দারিদ্র্যবিমোচনের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, নগরায়ণ, শিল্পোৎপাদন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে এক দিকে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, অপর দিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যুগোপযোগী না হওয়ায় বিষয়টি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এ দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ; এর মধ্যে ১২.৫ শতাংশ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে। উল্লেখিত চ্যালেঞ্জের সাথে পরিবেশগত পরিবর্তন এবং অজ্ঞতা ও অতিমুনাফার লোভে মানুষের মনুষ্যত্ব হ্রাস পাওয়ায় বর্তমানে আরো একটি চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে নিরাপদ খাদ্য ধারণায়।

মানুষের প্রথম মৌলিক ও মানবিক অধিকার হলো খাদ্য। দেশের খাদ্য চাহিদা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- তিন-চতুর্থাংশ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষ গ্রামে বাস করে। বেশির ভাগ কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে কিন্তু ওই খাদ্য তারা গ্রহণ করতে পারে না, সামর্থ্যরে অভাবে। বাংলাদেশে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। জৈব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগে বিগত তিন দশকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভূমিহীন জনসংখ্যা ৩৫.৪ শতাংশ এবং ০.০৫ একরের কম ভূমির মালিক ৪৫.১ শতাংশ। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বে¡ও আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- ১৯৯৫-৯৬ সালে মোট খাদ্য আমদানি ২৪.২৭ লাখ টন যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৩১.২৪ লাখ টন; ২০২২ সালে আমদানির চাহিদা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টন। অর্থাৎ বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের প্রাপ্যতা অভ্যন্তরীণভাবে পর্যাপ্ত নয়। অথচ বাংলাদেশ ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। উল্লেখ্য, খাদ্যের প্রাপ্যতা, মোট দেশজ উৎপাদন, মজুদ, নিট আমদানি, বৈদেশিক সাহায্য এবং নিট বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসংস্থান করার তাড়নায় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন বেশির ভাগই উপেক্ষিত রয়েছে। পুষ্টিহীনতার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুতে মৃত্যুহার এখনো ৪৬ এবং শিশু মৃত্যুহার (এক বছরের কম) প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৩০ জন। দেশের ৩১.৫০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ১৭.৬০ শতাংশ লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

> খাদ্য মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেঃ খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবন ধারণ অসম্ভব। দৈনন্দিন কাজকর্ম ও চলাফেলা করার জন্য সবল, রোগমুক্ত ও সুস্থ শরীর প্রয়োজন। আর এই সুস্থ শরীর বজায় রাখতে খাবার প্রয়োজন। খাবার শরীর গঠন, বৃদ্ধি সাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে; তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য হতেও সাহায্য করে। তবে খাবারের রয়েছে অনেক শ্রেণিভাগ। আর দেহকে সুস্থ রাখতে কোন খাবার কতটুকু প্রয়োজন সেটি জানাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্য উপাদানের শ্রেণীবিভাগ করলে আমরা এসব উপাদানকে ছয়টি ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলোও আবার বিভক্ত মুখ্য ও গৌন উপাদানে। খাদ্যের মুখ্য উপাদান
শ্বেতসার বা শর্করা (উৎস-চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, আলু, মূল জাতীয় খাদ্য)।
আমিষ (উৎস-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি)।
স্নেহ জাতীয় খাদ্য (উৎস্য-তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি)।

খাদ্যের গৌন উপাদানঃ-খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (উৎস-রঙ্গিন শাক-সবজি, ফল, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি)। খনিজ উপাদান (উৎস-ছোট চিংড়ি, ছোট মাছের কাঁটা, ঢেঁড়স, কচুশাক ইত্যাদি)। নিরাপদ পানি।
কোন খাদ্য উপাদান দৈনিক কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন? শ্বেতসার বা শর্করা : মোট প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আমিষ : শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম (পূর্ণ বয়স্কদের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ২-৩ গ্রাম (৪ বছরের শিশুর জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৭ গ্রাম (৪-১৮ বছরের বয়সের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম (গর্ভবতী ও প্রসূতির জন্য)। স্নেহ জাতীয় খাবার : প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম (পূর্ণ বয়স্কদের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য দৈনিক ২-৩ গ্রাম (১ বছর পর্যন্ত শিশুর)ভিটামিন (তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয়):- ভিটামিন-এ: প্রায় ৫০০০ আইইউ (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। প্রায় ৬০০০ আইইউ (গর্ভবর্তী মায়ের জন্য )। প্রায় ২০০০-৪৫০০ আইইউ (১-১২ বছর বয়স পর্যন্ত)।

ভিটামিন-ডি : ২.৫ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য)। ১০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতী, প্রসূতি ও শিশুর জন্য)।

ভিটামিন-ই : প্রায় ৫-১০ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন (পানিতে দ্রবণীয়) :-ভিটামিন-সি : ২০ মিলিগ্রাম (শিশুর জন্য)। ৩০ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। ৫০ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী ও প্রসূতীর জন্য)

ভিটামিন-বি২ :১.৪ মিলিগ্রাম (পুরুষদের জন্য)। ১.০ মিলিগ্রাম (মহিলার জন্য)। ১.১ মিলিগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)। নায়সিন : ১৮.২ মিলিগ্রাম(পুরুষদের জন্য)। ১৩.২ মিলিগ্রাম (মহিলার জন্য)। ১৫.১ মিলিগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)। ভিটামিন-বি১২ : ১.০ মাইক্রোগ্রাম (শিশুর জন্য)। ২.০ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। ৩.০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)।

> খনিজ উপাদান:-* ক্যালসিয়াম : ৪৫০ মিলিগ্রাম। *ফসফরাস : ৮০০ মিলিগ্রাম * পটাশিয়াম : ২.৫ মিলিগ্রাম * আয়রন : ৯ মিলিগ্রাম * আয়োডিন : ১৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য *পানি : প্রায় ২-২.৫ লিটার প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য* সুষম খাদ্য : সারা বিশ্বের এখন স্লিম ফিগারের জয়জয়কার। মেদবিহীন ছিপছিপে আকর্ষণীয় দেহের গড়ন সবার প্রিয়। এই প্রত্যাশা পূরণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে স্বাভাবিক ওজন আর সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়া সহজেই সম্ভব।

যে খাদ্যের মধ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান পরিমাণমতো বর্তমান থাকে, তাকেই এক কথায় সুষম খাদ্য বলা হয়। অর্থাৎ মানবদেহের প্রয়োজনীয় ও পরিমাণমতো ছয়টি উপাদানযুক্ত খাবারকেই সুষম খাদ্য হিসেবে ধরা হয়। সুষম খাদ্য দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের জোগান দেয়। এ সুষম খাদ্যের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বুদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদনসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়ে থাকে।
> ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দৈনিক কতটুকু ক্যালরি পোড়ানো উচিত? ওজন কমাতে হলে একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ও মহিলার ৫০০ ক্যালরি কম খেতে হবে। ৫০০ গুণ ৭ = ৩৫০০ ক্যালরি কম খেলে ওজন কমবে সপ্তাহে এক পাউন্ড বা আধা কেজি। এই ৫০০ ক্যালরি কম খাওয়া হতে পারে প্রতিদিন ২৫০ ক্যালরি ব্যায়ামে বার্ন করা + প্রতিদিন ২৫০ ক্যালোরি কম খাওয়া। যেমন : একজন ব্যক্তি, যিনি প্রতিদিন ২২০০ ক্যালরি খান, তিনি যদি ব্যায়ামে ২৫০ ক্যালরি পোড়ান, তাহলে তিনি ওজন কমাতে ২৫০ ক্যালরি কম খাবেন। এটাই ওজন কমানোর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পথ। অনেকেই কম খাবার খান, তারা মনে করেন সে কম খাবার খেলে ওজন তাড়াতাড়ি কমবে।এটা ভুল ধারণা বরং প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরি কম খেলেই ওজন ঠিক মতো কমবে। একমাত্র অনেক বেশি ওজন যাদের তারা ওজন অনেক দ্রুত বা সপ্তাহে এক পাউন্ডের চেয়ে বেশি কমাতে (ডাক্তার/পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতে চলতে হবে। আর খাবার খাওয়া খুব না কমিয়ে বরং আপনার দৈনন্দিন কাজ কর্ম বা ব্যায়ামের পরিমাণ একটু বাড়াতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার যে ওজন কমবে,তা পরবর্তীকালে ধরে রাখতে পারবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের তথা মানুষেরই প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষা তথা পুষ্টিকর খাদ্য। পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস হয়। ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। ভেজালযুক্ত অনিরাপদ খাবার খেয়ে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্মত না হওয়ার ফলে রপ্তানিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রকারান্তরে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বর্তমানে বিপুলসংখ্যক মানুষকে জীবন-জীবিকা, নিত্যদিনের কর্মকান্ডের জন্য ঘরের বাইরে থাকতে হয়। বাধ্য হয়ে বাইরের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে হয়। এ ছাড়া খাদ্য এখন শুধু জীবনরক্ষাকারী উপাদান নয়, আচার-অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে পড়েছে। উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণনে, প্যাকেটজাতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে খাদ্য অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, খাদ্যসংশ্লিষ্ট রোগের কারণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং রোগের চিকিৎসা ব্যয় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

আয়তনে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮৮তম দেশ হলেও জনসংখ্যায় সারা বিশ্বে অষ্টম। জনসংখ্যার বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। গত ৬০ বছরে আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে দরকার সুস্থ দেহ-সুস্থ মন। কর্মব্যস্ত সুখী জীবন গড়তে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সর্বাগ্রে জরুরি।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠানতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মগবাজার মিডিয়া পাড়া,ঢাকা
ইমেইল : drmazed96@gmail.com
মোবাইল: ০১৮২২-৮৬৯৩৮৯

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন