শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

অপুষ্টিই রোগের বড় কারণ

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

আমাদের দেশে অপুষ্টি হলো একটি জাতীয় সমস্যা। আর্থিক অনটন, খাদ্য সংকট, পুষ্টি জ্ঞানের অভাব ও কুসংস্কার হলো এর মূল কারণ। মা ও শিশুরা হলো অপুষ্টির সহজ ও নির্মম শিকার। বিদেশী বিশেষজ্ঞ ব্রাডফিল্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তত অর্ধেক লোকের মধ্যে পুষ্টিহীনতা রয়েছে। পুষ্টি উপাদানের অভাবে বিভিন্ন বয়সের লোকদের মধ্যে নানারকম রোগবালাই দেখা দেয়। সময়মত এসব রোগের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে দৈহিক ও মানসিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য ও জনপুষ্টি দু’টিই যে অত্যন্ত নাজুক তাতে সন্দেহ নেই। ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিপণন একরকম অবাধে চলছে বলা যায়। এ বিষয়ে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনগত ব্যবস্থার অভাব খুব একটা নেই। কিন্তু কর্মকাণ্ড প্রায় অদৃশ্য। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযানের কথা শোনা গেলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত কম।

অতিসাম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে অপুষ্টির নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মায়ের ওজন বেশি বা স্থূলকায়; কিন্তু তার সন্তানের ওজন কম, শরীর শীর্ণ ও বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম; কিংবা মায়ের শীর্ণ শরীর, সন্তান অতি ওজন ও স্থূলতায় ভুগছে এমন দৃষ্টান্ত ক্রমেই বাড়ছে। দু’টিই আসলে অপুষ্টির নমুনা। পুষ্টিবিজ্ঞানের ভাষায় এটি হলো, ডাবল বারডেন অব ম্যালনিউট্রিশন (ডিবিএম) যাকে বাংলায় বলা যায়, অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা। পুষ্টিবিদরা বলেন, অতি ওজন বা অতি শীর্ণ মা ও শিশু পরিবারে দ্বিগুণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২১ শতাংশ পরিবার এ ধরনের অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে অতি ওজনের মা ও খর্বকায় বা কৃশকায় বা কম ওজনের সন্তানের হার ১৩ শতাংশের বেশি। আর কম ওজনের মা ও অতি ওজনের সন্তানের হার প্রায় ৮ শতাংশ। এ সমস্যার কারণ অনেকের জানা। বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে মা নিজের যত্ন না নিয়ে সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। যত্নের নামে সন্তানকে বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়ান। এ দিকে সন্তনের কায়িক শ্রম, যেমন মাঠে ছুটোছুটি করে খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রবণতা শহরের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি। তারা ফাস্ট ফুড বেশি খায়, খেলাধুলা করে কম ও টেলিভিশন, মোবাইলে বেশি সময় দেয়। এতে তারা স্থূলতার শিকার হয়। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে অতি ওজন ও অপুষ্ট সন্তান এবং কম ওজন ও অতি ওজনের সন্তানের হার বেশি। যেসব মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যেও এ সমস্যা প্রকট। মায়েদের স্থূলতা বাড়লে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেড়ে যেতে পারে হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি। প্রতিটি সমস্যা দেশে খুব দ্রুত বাড়ছে।

সমাজে সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তার মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার পেছনে পুষ্টিহীনতা অন্যতম কারণ। কিন্তু এর সমাধান আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। পুষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের চিরাচরিত অচলাবস্থা বিদ্যমান। দেশে পুষ্টি বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দিতে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) নামের প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশে সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয়ও আছে; কিন্তু এর সার্বিক অগ্রগতির চিত্র বড়ই করুণ। ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরুর ৫৩ বছর পর প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে নিজস্ব কার্যালয়, গবেষণা মাঠ ও গবেষণাগার। গবেষণা শুরু করতে লেগেছে মাত্র ৫০ বছর! প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে লেগেছে ৪৫ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে কতজন মানুষ প্রতিষ্ঠানটির নাম জানেন তা গবেষণার বিষয়। ফলে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আশা আপাতত না করাই ভালো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৯ সালে একটি অপুষ্টির মানচিত্র প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি উপজেলায় শিশুরা অপুষ্টিজনিত চারটি রোগে ভুগছে। এর মধ্যে খর্বাকৃতি ও ওজনস্বল্পতার সঙ্কট সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশীরা প্রায়ই খর্বকায়; কিন্তু সম্প্রতি অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি; বরং আরো খাটো হচ্ছে। এটি সত্যি আশঙ্কার কথা। তাই আমাদেরকে পুষ্টি জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা সুস্থ খাবারের সমন্বয়ে দৈনিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করে সুস্থ ও নীরোগ জীবন লাভ করে কর্মঠ ও উচ্চ মেধা শক্তির অধিকারী হয়ে বিশে^র দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। তাই সুস্থ সবল জীবন চান-সুষম খাবার রোজই খান।

পাপড়ি রানী রায়
শিক্ষক-কলামিস্ট
ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট।
মোবা: ০১৭৪৩-৫৫৩৪১৫।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন