ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হবার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংগঠনের ৫ নেতাকে অব্যহতি দিয়েছেন মৎসজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর। অব্যহতি পাওয়া ৫ নেতার মধ্যে ৩ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে মৎসজীবি লীগে ৩ জনের মধ্যে ৩ জন কেই অব্যহতি দেয়ায় কোন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নেই। এতে করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক যদি বিদেশ যান অথবা মারা যান তাহলে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার মত কোন নেতা রইলো না।
এছাড়া আজগর নস্করের বিরুদ্ধে একক কর্তৃত্ব, বিতর্কিত কর্মকাÐ, কমিটিতে পদ বিক্রি করা, বিতর্কিতদের পদ দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। মৎসজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদকের একক কর্তৃত্বের দাপটে দিশেহারা সংগঠনের সভাপতিসহ অন্যান্য নেতারা।
অব্যহতি পাওয়া নেতাদের অভিযোগ, নিজের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে অসাংগঠনিক উপায়ে সংগঠন চালাচ্ছেন আজগর নস্কর। সারা দেশে কমিটি বিক্রি করে টাকা নেন। সংগঠনের কারো সাথে পরামর্শ করে কিছু করেন না। বিদেশ গেলেও কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান না। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে তুলে ধরার কারণে সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর তার ব্যক্তি আক্রশে ৩ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৫ নেতাকে অব্যহতি দিয়েছেন। নেতারা আরো জানান, সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে গেলে অথবা মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সহ-সভাপতি বা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেন। এটা আওয়ামী লীগের সকল সংগঠনেরই নিয়ম। যা মানেন না মৎসজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদক।
নেতারা বলেন, আজগর নস্কর বলেছেন, ‘এতো বার বিদেশ গিয়েছি কখনো ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার কথা উঠেনি, এবার কেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলা হল। যারা বলেছে তাদের রাজনীতি দেখে নেব।’ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় ওবায়দুল কাদেরকে এসব বিষয়ে কথা বলার পর
তিনি সংগঠনের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার জন্য মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. সায়ীদুর রহমানকে নির্দেশ দেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অনুযায়ী আলিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পর দলীয় কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে নিজের অবর্তমানে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি নস্কর। এরপর আজগর নস্কর দেশে ফিরে গত ৩ অক্টোবর ৩ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ নেতাকে অব্যহতি দেয়া হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে সাময়িক অব্যহতি, একজন পুরোপুরি অব্যহতি দেয়া হয়েছে।
অব্যহতি প্রাপ্তরা হলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুল আলিম, রফিকুল ইসলাম খাঁ, ফিরোজ আহমেদ তালুকদার, দপ্তর সম্পাদক এম এইচ এনামুল হক রাজু এবং উপ-প্রচার সম্পাদক ইউসুফ আলী বাচ্চুকে দল থেকে অব্যাহতি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে নস্কর একাই স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে অব্যহতি পাওয়া ১ নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুল আলিম ইনকিলাবকে বলেন, পুরো সংগঠনকে নষ্ট করে ফেলেছেন সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর। তার অন্যায়, অসাংগঠনিক কাজের প্রতিবাদ করায় তাদের অব্যহতি দেয়া হয়েছে। আজগর নস্কর কমিটি বিক্রি করে সারাদেশ থেকে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, তার কর্তৃত্বে দাপটে কেউ সংগঠন করতে পারছে না।
আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাস ইনকিলাবকে বলেন, মৎসজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদক চিরাম আমি। মৎসজীবি লীগের শুরু থেকে এ পর্যন্ত থেকে সংগঠনকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি। অথচ আমাকে খুচরা চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সকলেই আমাকে চিনে, সারা বছর এখানেই থাকি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কমিটি বিক্রি করে টাকা নেয়, সংগঠনকে পুজি করে ব্যবসা করে, কাউকে কোন পাত্তা দেয় না। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আজগর নস্কর আমাদের অব্যহতি দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সায়ীদুর রহমানও নস্করের ভয়ে কোন কথা বলে না।
আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বিষয়টি আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি।
দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক রাজু ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর দেশের বাইরে থাকায় একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেন আওযামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে মৎসজীবি লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ইনকিলাবকে বলেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকরা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছেন। তাই আজগর নস্কর তাদের খায়েশ মিটিয়ে দিয়েছেন।
এর আগেও ২০১৯ সালে ২৯ নভেম্বর সম্মলনের দিন ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরের মাসে ৯ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে প্রথম ঘোষিত ১১ সদস্যের ৫জনকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। পদ হারানো নেতারা হলেন, সহ-সভাপতি, নূরে আলম রবু, শাহ আলম, মীর রাশেদুজ্জমান, নাসরিন সুলতানা এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান।
এছাড়া আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনের ঘটনায় মূল আসামি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সমালোচনার মুখে পড়ে। অভিযোগ উঠে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দেলোয়ার হোসেনকে এই পদ দিয়েছেন সভাপতি সায়ীদুর রহমান। দেলোয়ারের টাকায় তিনি মগবাজার ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া দেলোয়ারের ভাড়া করা গাড়িতে এখন তিনি চলাচল করেন।
এ বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর বলেন, যাদেরকে সংগঠনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। পদ বাণিজ্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা। আমি কোনো পদ বাণিজ্যে জড়িত না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন