শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের উদ্যোগ ইতিবাচক

| প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজী হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেছেন। তবে কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি চীন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যবাসন ও সংকট সমাধানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবান নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। চীন এ ব্যাপারে এগিয়ে আসায় তাকে ধন্যবাদ। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বে একমাত্র চীনের সাথেই মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ট সম্পর্ক। পুরো বিশ্ব যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে, চীন তখন তাকে ছায়া দিয়ে রেখেছে। তাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে প্রভাবকের ভূমিকা রাখতে পারে। এটা প্রমাণিত, জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব যতই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে হুমকি-ধমকি দিক না কেন, তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব কম কথা বলেনি। অর্থনৈতিকসহ নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ নানা সিদ্ধান্তের কথা বলেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের এসব কথা কেবল ‘লিপ সার্ভিস’ ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। আমরা সবসময়ই বলে এসেছি, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের ভূমিকা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন উদ্যোগী হলে এ সংকট সমাধান দ্রুত সম্ভবপর হতে পারে। এ কথাও বলেছি, বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ, চীনকে সাথে নিয়ে মিয়ানমারের সাথে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতামূলক উদ্যোগ নেয়া। অবশেষে সরকার সেদিকেই হাঁটা শুরু করেছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং সংকট সমাধানের পথ ধীরে হলেও প্রশস্ত হচ্ছে। চীনের সাথে মিয়ানমারের বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। দেশটির কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে চীন ব্যাপক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। মিয়ানমারে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিস্তৃত হচ্ছে। মিয়ানমার আভ্যন্তরীণভাবে প্রায় ৩০টি বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করছে। দেশটির সরকার গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে গিয়ে নানাভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছে। ফলাফল স্বরূপ, বাংলাদেশের সীমান্তেও গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটছে।, বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। মিয়ানমারের সাথে পাল্টা সংঘাতে না জড়িয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতি অব্যাহত রাখছে। আমরা মনে করি, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব পোষণ করলে সংকটের সমাধান হবে না। বরং দুই দেশের মধ্যকার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। চীন মিয়ানমারকে কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে যে সহযোগিতা করছে, তার সুফল বাংলাদেশও পেতে পারে। সেখানকার কৃষি-শিল্পের বিনিয়োগের সুযোগও নিতে পারে। কিভাবে সে সহযোগিতা পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। মিয়ানমারের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি থেকে মাছ, চাল, গমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা হয়। আমাদের দেশ থেকেও বিভিন্ন পণ্য দেশটিতে রফতানি হয়। পারস্পরিক এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে পারলে উভয় দেশই লাভবান হবে।

ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক আগেই ‘লুক ইস্ট’ নীতি ঘোষণা করেছে। এ নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিকল্প নেই। আমাদের পূর্বমূখী অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল গেটওয়ে মিয়ানমার। এ বিবেচনায় আমাদের স্বার্থেই মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখা অপরিহার্য। শীতল সম্পর্কে কোনো লাভ হবে না। বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, রোহিঙ্গা সংকট একসময় না এক সময় সমাধান হবেই, যদি চেষ্টা অব্যাহত থাকে এবং দুদেশের সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নতি ও বিকাশ ঘটে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটের মাঝেও বাংলাদেশের উচিৎ হবে, মিয়ানমারের সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া। সুসম্পর্ক বজায় রেখে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা, যাতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসন দ্রুতায়িত হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন