শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিমানের প্রশ্নপত্র ফাঁস মহাসড়ক অবরোধ

গ্রেফতার ৫

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। যে কারনে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন নিয়োগপ্রার্থীরা। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ডিবি পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় উত্তরার আইইএস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জুনিয়র অপারেটর জিএসই (ক্যাজুয়াল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিনা নোটিশে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের উত্তরার আজমপুরে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ নিয়োগপ্রার্থীরা। এতে প্রায় কয়েক শ নিয়োগপ্রার্থী অংশ নেন। আবার কিছু নিয়োগপ্রার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনেই আন্দোলন করেন।

তারা বিমানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেøাগান দেন। আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা জানান, গতকাল ১০০ জন ড্রাইভারসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী আমরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কন্দ্রে এসেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আন্দোলন শুরু করি। পরে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছি।

তারা জানান, অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পরীক্ষা না দিয়েই আবার গ্রামে চলে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১০০ জন ড্রাইভারসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির আজমপুর পুলিশ বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) কাজী মিজান বলেন, হঠাৎ করে বিমানের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে নিয়োগপ্রার্থীরা ঢাকায় প্রবেশগামী মহাসড়কের আজমপুরে অবরোধ করেছিল। যার কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার দাস বলেন, বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। যার কারণে পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবাদে পরীক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করলে তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কয়েকজনকে ডিবি-পুলিশ আটক করেছে।

প্রশ্নফাঁস প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডি ও সিইও মো. যাহিদ হোসেন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষাটি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে স্থগিত করা হয়েছে। এখনো গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করেছে। পরে আমরা বলতে পারব। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময়সূচি আমাদের ওয়েব সাইটে এবং মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে নিয়োগপ্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আজ
পথে পথে বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে
খুলনামুখী জনতার স্রোত
পুলিশের গণগ্রেফতার : সারাদেশের সাথে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ষ
মোড়ে মোড়ে যুবলীগ ছাত্রলীগের সশস্ত্র শোডাউন : ট্রেনে ঠাঁই নেই
ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে
হঠাৎ করে যেন সবার দৃষ্টি চলে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনখ্যাত খুলনার দিকে। আজ শনিবার বিএনপি সেখানে বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছে। অথচ খুলনাসহ আশপাশের জেলাগুলোর সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেন খুলনাঞ্চলে অঘোষিত হরতাল চলছে। চিরাচরিত দৃশ্য হলো হরতালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা পিকেটিং করেন রাস্তায় শোডাউন করেন। অথচ খুলনায় দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লোকজন রামদা, লাঠিসোঁটা, অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করেছে। মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্নভাবে ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী ‘ঠিকানা খুলনা’ মরণপণ দৃঢ়তা নিয়ে খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ট্রেনে, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশাসহ নানাভাবে মানুষ খুলনা যাচ্ছেন। যশোরসহ বিভিন্ন জেলার নানা পয়েন্টে খুলনাগামী যানবাহন আটকে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খুলনামুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। পথে পথে বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে খুলনামুখী সবার মুখে এক আওয়াজ ‘চলো চলো খুলনা চলো’।

চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে সাজ সাজ রব পড়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ সমাবেশে অংশ নিতে খুলনামুখী হয়েছে। কিন্তু মহাসমাবেশে যাতে জনসমাগম বেশি না হয় সে উদ্দেশ্যে সারাদেশের সাথে খুলনার সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দুই দিন আগে সড়ক ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় সরকার সমর্থিত বাস মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ নসিমন করিমন ইজিবাইক বন্ধের দাবিতে তারা ২১ ও ২২ অক্টোবর ধর্মঘট আহ্বান করে। খুলনায় ধর্মঘট আহ্বানের সাথে সাথে বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও ২১ অক্টোবর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনার সাথে সারাদেশের নৌ চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অঘোষিত লঞ্চ ধর্মঘট চলছিল। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করেছেন। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

গতকাল সকালে খুলনা সোনাডাঙ্গা বিভাগীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কোনো বাস খুলনা ছেড়ে যায়নি। যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো খুলনার প্রবেশ পথ ফুলতলা ও রূপসা ব্রিজের অপর প্রান্তে যাত্রী নামিয়ে দেয়। বাস চলাচল বন্ধ রাখায় সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এ ধর্মঘটের সাথে সাধারণ শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সরকার সমর্থিত পরিবহন নেতারা ধর্মঘট ডেকে আমাদের পেটে লাথি মেরেছে। দুদিন আমাদের উপার্জনহীন হয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে।

নগরীর ৫নং বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রী রয়েছেন কিন্তু লঞ্চ ছাড়ছে না। খুলনা থেকে প্রতিদিন স্থানীয় ৪টি রুটে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করে।

সারা শহরে মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র মহড়া কেরছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও সরকার সমর্থিত অন্যান্য সংগঠনের ক্যাডারেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নগরীর খালিশপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হকিস্টিক নিয়ে মোটর সাইকেল মহড়া দিয়েছে। যা নিয়ে জনমনে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের নামে পুরো শহরজুড়ে ব্যাপক শোডাউন করেছে তারা। সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিএনপিকে সমাবেশের নামে কোনো প্রকার নৈরাজ্য করতে দেয়া হবে না। শনিবার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা রাস্তায় থাকবে। এ বিষয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এহতেশামুল হক শাওন বলেছেন, আমরা ধারণা করছি, যুবলীগ ছাত্রলীগ ক্যাডারেরা সমাবেশে বাধা দিতে পারে। আমরাও প্রস্তুত রয়েছি। তাদের আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। যেখানে বাধা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। হামলা মামলা এখন আর আমরা ভয় পাই না।

সড়ক ও নৌপথে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ট্রেনে এবং ইজিবাইক, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন বাহনে হাজার হাজার নেতাকর্মী খুলনায় আসছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তারা খুলনায় আসা শুরু করেন। তবে তাদের পথে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী এসেছেন। তাদের অনেকেই স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছেন। পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় হোটেলে ওঠেননি।

এদিকে সমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে খুলনায় গণগ্রেফতার শুরু করেছে পুলিশ ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪ শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা জানান, সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িবাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে হেনস্তা করছে। খুলনার বাইরেও বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় একইভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।

খুলনার বসুপাড়ায় যে বাড়িতে কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বরচন্দ্র রায় গত বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থান করছিলেন, সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার সামনেই ১৫ থেকে ১৬ নেতাকর্মীকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। খুলনার বিভিন্ন স্থান থেকে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসমিউদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভূট্টো, মো হাসান, মোল্লা কওসার, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূঁইয়া, মামুন ও উজ্জল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী।

বাগেরহাট থেকে আগত ৪ জনকে খুলনা থানা পুলিশ এবং মোড়েলগঞ্জ বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান শিপনের বাসা হতে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সী, কৃষক দল আহ্বায়ক মুকুল মেম্বারসহ ১১ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে। মনা জোরালোভাবে বলেন, যত বাধাই আসুক, আমরা পিছু হটে যাব না, প্রতিরোধ গড়ে তুলব। সমাবেশ হবেই। এ সমাবেশ থেকে সরকারের পতন ঘণ্টা বাজানো হবে।

বিএনপি নগর কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, মাগুরায় বাধা দেয়া হয়েছে, বাগেরহাটে বাধা দেয়া হয়েছে। সমাবেশে আসার সময় বৃহস্পতিবার বাগেরহাটে দফায় দফায় হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এসব করে কোনো লাভ নেই। বিএনপির সমাবেশ হবেই। যত বাধা দেয়া হবে, ততো বেশি শক্তি সঞ্চয় করে বিএনপি নেতা কর্মীরা সরকার পতন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখন একটাই দাবি, এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা জনগণের সরকার চাই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু জানিয়েছেন, খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনস্রোতে পরিণত হবে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি সফল করতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদেরকে উস্কানিমূলক আচরণ না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি খুলনা বিভাগ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সমাবেশকে বানচাল করতে গোটা বিভাগজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লঞ্চ ঘাট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা পায়ে হেটে আসবেন? নদী সাঁতরে খুলনায় আসবেন? এ কেমন মানসিকতা? স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারী, পুরুষ, শিশু বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। সেই দেশের এমন পরিস্থিতি হবে কেন?

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রাতে যেখানে অবস্থান করছিলেন, পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ রীতিমতো অপমান করেছে। এমন অপমানের মুখোমুখি তাকে হতে হবে কেন?

অন্য বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি প্রদানে প্রশাসন কালক্ষেপন করলেও খুলনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে জানিয়ে শামমুজ্জামান দুদু বলেন, খুলনায় অনুমতি চাওয়া মাত্র প্রশাসন তা দিয়েছেন। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু তারপর থেকে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বলবো, যা হয়েছে হয়ে গেছে। এবার এসব বন্ধ করেন। আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিন। উস্কানি না দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা এই শহরে থাকেন। এই শহর হবে শান্তিরÑ মন্তব্য করেন দুদু। তিনি বলেন, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে। এই সমাবেশ দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে। যেকোন মূল্যে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কর্মসূচিতে যত বাধা আসবে, ততই আন্দোলনে সফলতা আসবে চলমান আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না তাদের হঠানোর আন্দোলন। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একযোগে কাজ করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না। কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভয়ভীতি ছড়াতে মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং অন্যান্য জেলা থেকে খুলনায় আসা নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। অসংখ্য বাড়িতে চলেছে পুলিশের তল্লাশি অভিযান। একইসঙ্গে শাসক দলীয় ক্যাডাররা এলাকাভিত্তিক নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করছে। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করছে বিএনপি। এই সরকার উন্নয়নের নামে সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। পাচারের সাথে জড়িতরা সবাই সরকারের সাথে জড়িত। সরকারের ব্যর্থতা ও লুটপাটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বিএনপি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আন্দোলন করছে। অবৈধ পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। গয়েশ্বর রায় আরো বলেন, মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশি রায়ে বন্দি রাখা হয়েছে। একমাত্র নজির তিনি যাকে জামিন দেয়া হয়নি।

স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দদের মধ্যে নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, অব্যাহত হুমকি প্রদর্শন করছে। প্রকাশ্যে রামদা হকিস্টিকসহ অস্ত্রের মহড়া চলছে। মনে রাখতে হবে, এই সরকার শেষ সরকার নয়। এসব কাজের পরিণতি শুভ হবে না। আমাদের বাধা দিতে এলে আমরা দাঁত ভাঙা জবাব দেব। কিন্তু বিএনপি শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা সুন্দরভাবে একটি সফল সমাবেশ করতে চাই।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান জানান, পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার জন্য। মনে রাখতে হবে, আজ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগামীকাল থাকবে না। তাই পুলিশকে নিরপেক্ষ আচরণ করতে আহ্বান জানান তিনি। এজাজ আরো বলেন, সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসবেন। খুলনা থেকে সরকার পতনের ঘণ্টা বাজবে। আমরা সমাবেশ থেকে সরকারকে লাল কার্ড দেখাব। রাতের নির্বাচনের এই অবৈধ সরকারের আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

নগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জহীর বলেন, সমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্মরণাতীতকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ দেখবে দেশবাসী। সমাবেশ বানচালের ষড়যন্ত্র করলে তার উপযুক্ত জবাব দেব আমরা। রাজপথে নেমেছি, সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবো।

আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। দুপুরে নগরীর ডাকবাংলো চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ হতে বাধা দেয়া হলেও সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমবেত হবেন। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন