বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে শিশু কন্যাকে খুন করলেন মা!

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

একজনের সাথে পরকীয়া চলছিল। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এতে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সাত বছরের শিশু কন্যা। আর তাই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন গর্ভধারিণী মা। কথায় কথায় শারীরিক নির্যাতন করে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান নিষ্পাপ শিশুটিকে। আর মায়ের পরামর্শেই পরকীয়া প্রেমিক চলৎ শক্তিহীন শিশুটির পেটে সজোরে কিলঘুষি এবং শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। নগরীর ইপিজেড কলসিদীঘির পাড় এলাকায় চাঞ্চল্যকর শিশু হোসনে আরা আক্তার ইলমার এক খুনিকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। গ্রেফতার ইলমার মা বিউটি আক্তারের (২৫) পরকীয়া প্রেমিক মো. মনিরুল মোল্লা ওরফে মনির হোসেন (৩০) খুনের দায় স্বীকার করে গতকাল শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান জানান, শুক্রবার রাতে বাগেরহাট থেকে মনিরকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির মধ্যদিয়ে আলোচিত এ মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপর শিশু ইলমার মা এবং প্রধান আসামি বিউটি আক্তারকে গ্রেফতার করা হলেও সে এতোদিন মুখ খুলেনি। এবার তাকেও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

গত ১৫ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘির পাড় জালাল কলোনীর একটি বাসায় শিশু ইলমাকে হত্যা করা হয়। সন্তানকে হত্যা করে লাশ বাসায় রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা বিউটি আক্তারকে আটক করে পুলিশে দেয়। কিন্তু পালিয়ে যায় তার সহযোগী মনির। মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় তদন্তের জন্য দেয়া হয় পিব্আিইকে। বৃহস্পতিবার তদন্তভার পেয়েই এজাহারনামীয় দ্বিতীয় আসামি মনিরকে পাকড়াও করে পিবিআই।

মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে মনির স্বীকার করে বিউটির সাথে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। বাড়িতে তার ছেলে সন্তান থাকার পরও ইপিজেডে চাকরি করার সুবাদে বোন পরিচয় দিয়ে বিউটির সাথে একই বাসায় থাকতেন মনির। এ সময় তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা শারীরিক সম্পর্কেও জড়ায়। একপর্যায়ে বিউটি মনিরকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মনির তার সাত বছরের কন্যা সন্তান থাকায় বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না।

বিউটি বিষয়টি বুঝতে পেরে তার নিজ সন্তানকে বিয়ের পথে কাঁটা মনে করতে শুরু করে। এরপর তার উপর শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। কথায় কথায় তাকে মারধর, দেয়ালে মাথা ঠুকানোসহ নানান পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতনে তার শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তার হাঁটা-চলার শক্তিও চলে যায়। বিউটির পরামর্শে মনির নিজেও ওই শিশুটিকে নির্যাতন করেছে বলে স্বীকার করে। মনির জানায়, একদিন শিশুটিকে বাথরুমের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। এতে তার মুখে এবং মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। এভাবে শিশুটির উপর নির্যাতন চালানোর বিষয়টি টের পেয়ে দুইজন বাড়িওয়ালা তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। এরপরও শিশুটির উপর নির্যাতনের মাত্রা কমায়নি বিউটি। শিশুটিকে সাগরপাড়ে নিয়ে গলাটিপে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়ারও পরামর্শ দেয় বিউটি। তার যুক্তি সাগরে ফেলে দিলে কেউ লাশ খুঁজে পাবে না। তবে মনির এভাবে খুন করতে সাহস করেনি।

এদিকে উপর্যপুরি পাশবিক নির্যাতনে শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকদিন ধরে সে এতটাই দুর্বল ছিল যে টয়লেটে যেতে পারত না। একটি প্লাস্টিকের বাতলিতে পায়খানা-পেশাব করত সে। এ অবস্থায় বিউটির পরামর্শে শিশুটির পেটে প্রচণ্ড কিলঘুষি মারে মনির। তাতে তার দম বন্ধ হয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ অবস্থায় মনির তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তখন বিউটি মনিরকে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। মনির পালিয়ে যায়, বিউটিও শিশু কন্যার লাশ বাসায় রেখে কিছু মালামাল নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে। কারণ শিশুটিকে মারধর করার সময় তার চিৎকার শুনেন প্রতিবেশীরা।

পরে তারা বাসায় ঢুকে খাটের উপর শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস খান জানান, আটকের পর বিউটি নিজ কন্যাকে হত্যার কথা অস্বীকার করেন। দোষ দেন মনিরের। পুলিশও তা বিশ্বাস করে। কিন্তু মনিরের জবানবন্দির পর এ খুনের ঘটনায় বিউটির জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়। বিউটি আক্তার বাগেরহাট জেলার সদর থানার পাতিলাখালী উত্তর কন্ডোলার আইয়ুব আলী হাওলাদারের কন্যা। মনির একই গ্রামের মৃত আমীর আলী মোল্লার পুত্র। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পিবিআই জানায়, বিউটির দুইবার বিয়ে হয়, কোন সংসারই টিকেনি। শেষের সংসারে তার কোলজুড়ে আসে শিশু ইলমা। ইলমার বাবার সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর শিশুটি তার মায়ের কাছেই থাকত। তৃতীয় বিয়ে করার জন্য নিজ কন্যাকে দুনিয়া থেকে এভাবে সরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Joy ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ৪:৪৭ এএম says : 0
দুজনকেই আগুনে নিক্ষেপ করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত কষ্ট অনুভব করার জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন