বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে তীব্রতর হচ্ছে। বহু দেশের মূল্যস্ফীতি সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। জ্বালানি, সার ও খাদ্য সংকট সর্বাধিক হয়েছে। তাই অসংখ্য মানুষ অনাহারের মুখে পড়েছে। দারিদ্র্য বেড়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব সম্প্রতি বলেছেন, ‘বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই’। ফাও বলেছে, এ বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন ২.১% কমবে। এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত আগস্টে ৯.৫২% ও সেপ্টেম্বরে ৯.১০% হয়েছে। এছাড়া, গত সেপ্টেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত (কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রলসহ জ্বালানি তেল, স্বর্ণ, পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি) মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯.১৩%। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট আরো বেড়ে আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে এবং তা ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অক্সফাম। তাই আইএফসি খাদ্য অনিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবেলায় বেসরকারি খাতের সক্ষমতা জোরদার ও খাদ্য অস্থিতিশীলতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে উৎপাদন সহায়তার জন্য ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ঋণ সহায়তা দিতে ২৩০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রীও কয়েকবার বলেছেন, আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে। তিনি প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানো এবং সব ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার ও খাদ্য অপচয় না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। উপরন্তু বলেছেন, তার সরকার পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায়। এদিকে, বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে দেশের রফতানি, রেমিটেন্স ও বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। শিল্পোৎপাদনেও ভাটা পড়েছে ব্যাপক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে। অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৫.২৯% আর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৪.১৪%। সর্বোপরি প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে কৃষি জমি কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে কৃষির। এই অবস্থায় দেশকে দুর্ভিক্ষ ও মন্দার হাত থেকে রক্ষা এবং উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কৃষির উন্নতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ, ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা আমদানি করে পূরণ করতে হলে সব উন্নয়ন কর্ম বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ এখনো কৃষিনির্ভর দেশ। বর্তমানে কৃষি খাতের অবদান জিডিপির ১৮%। এছাড়া, জনসংখ্যার ৬০%, মোট নারী শ্রমশক্তির ৭২.৬% সংশ্লিষ্ট (উন্নয়নশীল দেশে ৪০%) রয়েছে। উপরন্তু করোনা মহামারির সময়ে সব খাতে ধস নামলেও কৃষি খাতে উন্নতি অব্যাহত থেকেছে। চাল, মাছ, মাংস, সবজি ও ডিম উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংভর হয়েছে। অর্থাৎ দেশের কৃষি খাতের ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। অবশ্য, দেশ এখনো খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংভর হয়নি। গমসহ অন্য খাদ্যের অধিকাংশই আমদানি করতে হয়। তাতে বছরে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফলে, উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। মূল্যও বেশি হচ্ছে। তাই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষ খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২২ মতে, বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম (আগের বছর ছিল ৭৬তম)। এ বছরের স্কোর ১৯.৬ (২০১৪ সালে ছিল ২৬.৩)। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশের ৬৮% মানুষ এখন খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তাও ঝুঁকিপূর্ণ। ইকোনমিস্টের মতে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক টেকসই খাদ্য সূচকে ৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৪তম, স্কোর ৬১। এফএও বলেছে, ‘এ বছর বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমবে ০.৩%। তাই মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা ৪৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে’।

স্মরণীয় যে, খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংভর হয়েছে বলে বলা হলেও চাল ও গম বছরে গড়ে ৬০ লাখ মে. টন (চাল প্রায় ১০ লাখ মে. টন ও গম প্রায় ৫০ লাখ মে. টন) আমদানি করতে হয় বহুদিন থেকেই। যেমন: ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৬৭.৩ লাখ টন চাল ও গম আমদানি হয়েছে। চলতি বছর আরো বেশি চাল ও গম আমদানি করতে হচ্ছে। কারণ, অতি বর্ষায় হাওরে ও বিভিন্ন স্থানে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, অতি খরার কারণে আমন ধানের চাষ ৩০% কম হয়েছে। দেশে চাল ঘাটতির প্রথম কারণ হচ্ছে, উৎপাদন হার অনেক কম। তথ্য মতে, ‘বর্তমানে হেক্টর প্রতি চাল উৎপাদন বাংলাদেশে ২.৭৪ টন, জাপানে ৫ টন, চীনে ৬.৫ টন, ভিয়েতনামে ৫.৮৪ টন’ (একই অবস্থা কৃষির অন্যসব পণ্যেরও)। এর কারণ হচ্ছে, হাইব্রিড ব্যবহার না করা। বর্তমানে মোট জমির মধ্যে হাইব্রিডের আবাদ হচ্ছে বাংলাদেশে ১০% আর চীনে ৬০%। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অপচয়। ব্রির তথ্য মতে, দেশে এখন উৎপাদন পর্যায়েই ধানের গড় ফলন নষ্টের হার ১৮.৮৩%। অথচ, এর স্ট্যান্ডার্ড হার ৫-৭%। চীন ও জাপানে এ হার প্রায় ৫%। এছাড়া, গুদাম, ইঁদুর, আবহাওয়া ও পোকার কারণেও ধান-চালের ক্ষতি হয়। বীজ ও পশুখাদ্য হিসাবেও অনেক ধানের প্রয়োজন হয়। সব মিলে বছরে প্রায় ৮১ লাখ টন চাল নষ্ট হয়। তাই চালের ঘাটতি হয়। আর গমের উৎপাদন হয় চাহিদার মাত্র ২৫%। ফলে গমের ঘাটতি থাকে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মে. টন। খাদ্য বলতে সাধারণত চাল ও গমকেই বুঝায়। খাদ্য দ্রব্যের অন্য পণ্যগুলোরও উৎপাদন হার ও নষ্ট হওয়ার চিত্র অনুরূপই।

দেশ খাদ্যে স্বয়ংভর না হওয়ার আরো কারণ হচ্ছে: কৃষি এখনো প্রধানত সেকেলে তথা অযান্ত্রিক রয়েছে। এছাড়া, চাষযোগ্য জমির বিরাট অংশ চাষের আওতার বাইরে, চাষযোগ্য জমির বিরাট অংশ সেচের আওতার বাইরে ও অধিকাংশ জমিতে মাত্র এক ফসল উৎপাদন হয়। এছাড়া, সেচ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পানি মাটির নিচে নেমে যাচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতিরিক্ত ব্যবহার হওয়ায় মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে, খাদ্য দ্রব্য মজুদের গুদাম ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রচন্ড অভাব রয়েছে। তাই আলু সংরক্ষণের অভাবে বছরে নষ্ট হয় প্রায় ৩০ লাখ টন। উপরন্তু পেঁয়াজ, আম ও টমেটোসহ শাকসবজি সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ২৫-৪০% নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি দেশে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এবং সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা খাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যা’হোক, পচন ও নষ্ট হওয়া অন্য ফসলের হারও প্রায় অনুরূপ। তাই প্রতিটি ফসলের মূল্য ফুল সিজনে খুব সস্তা আর অফ সিজনে অত্যধিক হয়। উপরন্তু কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও কৃষি উপকরণের মূল্য অত্যধিক। এসব মিলে কৃষি পণ্যের মূল্য হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে, দেশে বীজ উৎপাদন হয় চাহিদার মাত্র ৭%। বাকিটা আমদানি নির্ভর। কৃষিতে জনপ্রতি বিনিয়োগও নগণ্য, মাত্র ১৬ মার্কিন ডলার। কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও কম (ভারতে এ হার ৪২%)। সর্বোপরি কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্রমান্বয়ে গরিব হচ্ছে। ফলে অনেকেই কৃষির উপর নিরুৎসাহ হচ্ছে।

এই অবস্থায় দেশকে সব খাদ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংভর ও মূল্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন এবং কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটাতে হবে। এসবের জন্য প্রধান করণীয় হচ্ছে: কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকরণ ও হাইব্রিড ব্যবহার, চাষযোগ্য সব জমিকে চাষের ও সেচের আওতায় আনা এবং সেচে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য সব নদী খাল বিল হাওর দীঘি পুকুর সার্বক্ষণিক সংস্কার ও সেচ মেশিন সৌর বিদ্যুতে চালানো, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, সার ও কীটনাশক পরিমিত ব্যবহার, প্রাকৃতিক সার ও বালাইনাশকের মাধ্যমে অর্গানিক ফুড উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শস্য বহুমুখীকরণ, ভাসমান চাষ, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের দিকে গুরুত্বারোপ, কমপক্ষে ৫০ লাখ মে. টন ধান, চাল ও গম মজুদ করার আধুনিক গুদাম, মাছ ও অন্য ফসল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় কোল্ড স্টোরেজ এবং সবজি ও পচনশীল ফল সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণ, ফলমূল প্রক্রিয়াজাত ও বোতলজাতকরণের জন্য পর্যাপ্ত শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া, সব সার, পাট ও চিনি শিল্পকে সার্বক্ষণিক চালু রাখা, কৃষি যন্ত্র ও কৃষি উপকরণ ক্রয়ের জন্য স্বল্প সুদে কৃষককে এবং কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান, হালাল কৃষি পণ্য রফতানির দিকে গুরুত্বারোপ, কৃষি যন্ত্র চালানো ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ লোক তৈরি, বীজ উৎপাদনে স্বয়ংভরতা অর্জন, কৃষিতে জনপ্রতি বিনিয়োগ তিনগুণ বৃদ্ধি, খাদ্যাভাসে পরিবর্তনে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রয়োজনীয় ফলদ বৃক্ষ রোপণ ও বনাঞ্চল সৃষ্টি ও কৃষি সংক্রান্ত সব আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ইত্যাদি করতে হবে।

বারি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২৫টি উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৬১২টি উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১,২৩৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এখন এসবকে এলাকাভিত্তিক তথা যেগুলো অধিক খরা সহিষ্ণু সেগুলোকে খরাপ্রবণ অঞ্চলে, যেগুলো লবণাক্ত সহিষ্ণু সেগুলোকে উপকূল এলাকায় এবং যেগুলো অধিক বন্যা সহিষ্ণু সেগুলোকে হাওর ও অধিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন মোতাবেক বীজ কৃষকের কাছে সরবরাহ করতে হবে। বিজ্ঞানীরা ২৭ প্রজাতির বিলুপ্ত মাছও ফিরিয়ে এনেছেন। এ অবস্থায় সব খাদ্য দ্রব্যের হালনাগাদ চাহিদা, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন হার সঠিকভাবে নির্ণয় করে পরিকল্পনা মাফিক ফসল ফলানোর জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলে খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন বাড়বে, মানুষের পুষ্টিহীনতা দূর হবে, কোনো খাদ্য অতিরিক্ত বা ঘাটতি হবে না। স্মরণীয় যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে পানিতে খাঁচায় মৎস্য চাষ, ভেলায় কৃষি চাষ, ছাদ বাগান, মাচা চাষ চলছে। কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার শুরু হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানী এজাজ আহমেদ সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে ভার্টিকাল ফার্মিং চালু করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন অনেক বাড়বে। ভার্টিকাল ফার্মিং হচ্ছে, ঘরের বা যেকোন আবদ্ধ স্থানে অনেকগুলো স্তর করে বা কাঠের ট্রে-তে বিভিন্ন ফসল ফলানো। বৈজ্ঞানিক উপায়ে আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করে সব ধরনের কৃষি উপকরণ দিলে উৎপাদন ভালো হয়, খাদ্যের গুণগত মান ও স্বাদ ঠিক থাকে এবং ফলন মাঠের সমানই হয়। দেশের অন্য এক কৃষি বিজ্ঞানী সব ধরনের মসল্লার প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ আবিষ্কার করেছেন। এতে ২-৩ বছর সংরক্ষণ করা যায় এবং মান ও স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান শকুন্তলা হারসিংগে সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে ৪০ লাখ পুকুর, হাজারো বিল, হাওর, নদী, খালসহ উন্মুক্ত জলাশয় আছে। সেখানে চাইলেই পরিকল্পিতভাবে ছোট মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উপরন্তু বঙ্গোপসাগরেও প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ আছে। পৃথিবীতে খুব কম খাবার আছে, যাদের মধ্যে মলার মতো পুষ্টিগুণ আছে। এই মাছ অল্প পরিমাণে খেলে অনেক পরিমাণে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ছোট মাছ হচ্ছে সুপার ফুড। ছোট মাছকে শুকিয়ে পাউডার হিসেবে তৈরি করতে পারি এবং মাছের চাটনি তৈরি করতে পারি। তাহলে তা অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। জাতিসংঘ সম্প্রতি বলেছে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট সমাধানে ‘স্মার্ট’ চাষ পদ্ধতি প্রয়োজন। তথা উপাত্ত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর কৃষি। কৃষির এই নতুনত্বকে দেশে ব্যবহার, কৃষির উন্নতর গবেষণা অব্যাহত ও নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হবে।

বর্ণিত কাজগুলো করতে হবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। তবেই দেশের কৃষি খাত আধুনিক হবে, উৎপাদন ব্যাপক বাড়বে, অপচয় ও নষ্ট কমবে ২০%, উৎপাদন ব্যয় কমবে ৩০%। ফলে মূল্য অনেক কমবে। দেশ প্রকৃতপক্ষেই সব খাদ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংভর হবে। অসংখ্য লোকের স্থায়ী কর্মস্থান হবে। রফতানি আয় অনেক বাড়বে। শিক্ষিত তরুণরা কৃষিতে সম্পৃক্ত হবে। বেকারত্ব হ্রাস পাবে। এসডিজি বাস্তবায়িত হবে। দেশের উন্নতি টেকসই হবে। বৈশ্বিক মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষ থেকে দেশ রক্ষা পাবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন