মা হওয়ার অনুভূতি অসাধারণ। দেহের ভেতর ছোট্র যে দেহ, তার জন্য মায়ের যত্নের তাই শেষ নেই। সময়মতো খাওয়া, ঘুমানো আর সারাক্ষণ তার সুস্থতা কামনা করা। অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য চাই মায়ের সুস্থ শরীর। মাতৃত্ব নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাতৃত্বকালীন নারীর শরীর-মনে প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়। মা হওয়াটা জীবনের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। আমাদের সকল মায়েদের জন্য চাই নিরাপদ মাতৃত্ব। নিরাপদ মাতৃত্ব প্রতিটি মায়ের অধিকার। কিন্তু সব মা এই সুযোগ পান না। ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ বলতে সন্তান জন্ম হবার আগে ও পরে সার্বিক যত্ন, পরামর্শ ও সুযোগ সুবিধাকে বোঝায়। আমাদের দেশের দরিদ্র মায়েরা নিরাপদ মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয় অভাব আর অশিক্ষার জন্য। আর অর্থ সম্পদশালী অনেক পরিবারের মায়েরা বঞ্চিত হয় সামান্য কিছু সচেতনতার অভাবে। যেমন- দীর্ঘদিন থেকে হয়তো দুই পা ফুলে গেছে। বাসার সবাই মনে করছেন, যে গর্ভাবস্থায় পা ফুলতেই পারে। এটা দুশ্চিন্তার কিছু না। কিন্তু পা ফুলে যাবার সাথে উচ্চ রক্তচাপ, দেহ থেকে প্রোটিন বের হয়ে যাওয়া, কিডনীর অসুখ (কোন কোন ক্ষেত্রে) বা কিছু ওষুধের পাশর্^ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। আবার অধিকাংশ মায়ের রক্তে এই সময়ে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকের ধারণা, গর্ভাবস্থায় রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়াটা তেমন ভয়ের কিছুই না। তাই অবহেলা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। কিন্তু এমন ধারণা ভীষণ হুমকিস্বরুপ।
গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়া, রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া (গর্ভধারণের আগে ও পরে) প্রস্রাবে ইনফেকশন, অতিরিক্ত বমি হওয়া, গলগন্ডের সমস্যা, থ্যালাসেমিয়া-নামে রক্তের অসুখ, জন্ডিস এই অসুখগুলো কখনোই অবহেলার নয়। এছাড়া ওষুধের মাত্রা ও পরিমাণ গর্ভধারণের পূর্বে ও পরে একেক রকম লাগে। গর্ভধারণের পূর্বে অনেকের ডায়াবেটিসের ওষুধ লাগে (মুখে খেতে হয়)। আবার একই মায়ের গর্ভধারণের পরে ইনসুলিন লাগতে পারে। যা চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা বুঝতে পারবেন না। নিজের অজান্তেই একজন মানুষের দেহে নানা রকম রোগের জীবাণু বাসা বাধতে পারে। আর গর্ভাবস্থার পূর্বে ও পরে একজন নারীর সাথে জড়িয়ে থাকে একটি শিশুর জীবন। তাই প্রয়োজন ধনী-দরিদ্র প্রতিটি মায়ের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব। সুস্থ সবল মা ও শিশুর জন্য চাই গর্ভধারণের পূর্বে ও পরে বাড়তি সচেতনতা ও যত্ন। অনেক মায়ের হাঁপানি, হরমোন এর সমস্যা, অতিরিক্ত রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা থাকে। আবার অনেকের রক্তপাত হয়, অতিরিক্ত বমির জন্য শরীরে লবণ পানির পরিমাণ কমে আসে। দেহে লবণ পানি অতিরিক্ত কমে গেলে, একজন সন্তান বহনকারী মাকে শিরায় স্যালাইন দিতে হয়। অনেকেই মনে করেন, বমি হতেই পারে। কিন্তু রক্তে লবণ পানি ও অন্যান্য জরুরি উপাদান এর পরিমান জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে শরীরের জন্য উপকারী উপাদানগুলো কতোটুকু কমে গেছে বা বেড়ে গেছে, তা জানা যাবে।
অনেকের সন্তান পেটে আসার আগেই দেহে রক্তের পরিমাণ (হিমোগ্লোবিন) কম থাকে, এই ধরনের মা’দেরকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। যেসব মা এর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হরমোন জনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস ও হাঁপানি রয়েছে, সেসব মায়েদের এই ধরনের সমস্যাগুলো হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। অনেক মা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খান। সব রকম ওষুধ সন্তান বহন কারী মা এর জন্য নিরাপদ নয়। অনেক সময় হয়তো অনেকেই চিকিৎসক এর কাছে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখেন বা মনে করেন, এই ধরনের সমস্যা তো হতেই পারে। অনেকে রাতে ঘুমাতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে ঘুম ঠিক মতো না হলে উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। যার কোনোটাই একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। সন্তান জন্ম নেওয়ার আগে ও পরে একটু অবহেলা ও অসচেতনতা আনতে পারে অনেক বিপদ। এই জন্য পরিবারের সবার সাথে গণমাধ্যম গুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
মো. লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন