রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দালালের খপ্পরে পড়ে সাগরে নিখোঁজ ছাতকের মুন্না: সন্ধান চায় পরিবার

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ৪:৩২ পিএম

পরিবারের অস্বচ্ছলতা দূর করতে সাগর পথে

স্বপ্নের দেশ ইতালিতে পাড়ি জমায় অনেকই। অধিকাংশ মানুষ সফল হলেও কিছু মানুষ ডুবে মরে সাগরে। যারা পাড়ি জমায় তারা অধিকাংশ কিশোর-যুবক। এ পথে পাড়ি দিয়ে বোর্ড বা প্লাস্টিকের আধুনিক নৌকা ডুবিতে সাগরের পানিতে ঝড়ে পড়ে অনেক তাজা প্রাণ। খালি হয় মা-বাবার কোল। লাশটিও দেখতে পারেনি পরিবার। উত্তাল সাগর গিলে খাচ্ছে মানুষ। তার পরও সাগর পথে এ মরন যাত্রা বন্ধ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত কত মানুষকে যে সাগর খেয়েছে তার সঠিক কোন হিসেব মিলছেনা। দালালরাও থেকে যাচ্ছেন আড়ালে। এ পথে মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও স্বপ্নের দেশের যাত্রীরা তাদের যাত্রা থেমে নেই। মানব পাচারকারী দালালদের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পাড়ি জমিয়ে সাগরে নিখোঁজ হয়েছে বিজয় আহমদ মুন্না (২১) নামের এক যুবক। সে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দনগর (লক্ষিপুর) গ্রামের জইনুদ্দিন আহারের একমাত্র পুত্র। বিজয় আহমদ মুন্নার কোন সন্ধান না পেয়ে এক মাত্র সন্তানের সন্ধানে পিতা-মাতার চোখের জ্বলে ভেসে যাচ্ছে বুক। গত রোববার বিকেলে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দনগর লক্ষিপুর গ্রামে নিখোঁজ বিজয় আহমদ মুন্নার বাড়িতে সরজমিন গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

জইনুদ্দিন আহার বলেন, তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। পরিবারের অস্বচ্ছলতা দূর করতে গত ডিসেম্বরে দেশ ছাড়েন তার পুত্র মুন্না। দুবাই, মিশর, সিঙ্গাপুর হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে সে বসবাস শুরু করেন। গত ১৯ অক্টোবর সাগর দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার পথে লিনোসা নামক দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছার পর সে নিখোঁজ হয়।

এদিকে, বিজয় আহমদ মুন্নার মা রোজিনা বেগম বলেন, ১১দিন ধরে তার একমাত্র পুত্রের কোন খোজ খবর পাচ্ছেন না। ইতালি ও বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে তিনি তার পুত্রের সন্ধান চান। একমাত্র বড় ভাইয়ের সন্ধান চান জলি আক্তার বিউটি।

মুন্নার সাথে সাগর পথে যাত্রী ছিল সিলেটের জকিগঞ্জের আবির আহমদ চৌধুরী। তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লিবিয়ার বাঙালী দালাল জনৈক সুহেল এবং লিবিয়ানি দালাল উসামার মাধ্যমে গত ১৯ অক্টোবর রাতে তারা গেইমে উঠেন। ৮৫জন বাংলাদেশী ও ১০জন মিশরিসহ ৯৫জন যাত্রী নিয়ে সাগর পথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় ইঞ্জিন চালিত আধুনিক প্লাস্টিকের নৌকায়। সাগরের লিনোসা নামের এক দ্বীপের পাশে পৌঁছার পর নৌকার ইঞ্জিনের তৈল শেষ হয়ে যায়। যে কারণে টানা তিনদিন নৌকাটি সাগরে ভেসেছিল।
যাত্রীরা সাঁতার কেটে নৌকাটি দ্বীপের কিনারে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে অদূরে লিনোসা নামক দ্বীপ দেখে মুন্নাসহ প্রথমে দুই যুবক নৌকা থেকে সাগরে ঝাপ দেয়। এদের পথ ধরে আরো ৫জনসহ ৭জন যুবক দ্বীপের উদ্দেশ্যে সাঁতারে নামে। এসময় নৌকায় থাকা অন্যান্য যাত্রীরা নৌকায় থেকে যান। তিনি বলেন, নৌকার যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য মুন্নাসহ ৭জন যুবক সাগরে ঝাপ দিয়েছিল। এসময় তারা সাঁতার না দিতে তাদেরকে বাঁধাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এসব কথা শুনেন নি। পরে মাছ ধরার নৌকার লোকজনের মাধ্যমে নৌকা ছাড়ার চতুর্থদিন তাদেরকে উদ্ধার করে ইতালির ক্যাম্পে নিয়ে যায় কোস্ট গার্ড। এর পর থেকে সাঁতারে পড়া লোকজনদের কোন খোজ খবর জানেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন