শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

ইসলামী শিক্ষা তাহজীব তামাদ্দুন ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে

বিভিন্ন ইসলামী দলের প্রতিবাদ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ৭:২৭ পিএম

শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা তাহজীব তামাদ্দুন ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্তি ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। শিক্ষা কারিকুলামে ভিনদেশী আগ্রাসন রুখে দিতে না পারলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকারে চলে যাবে। ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি বিনষ্ট হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মাদরাসা শিক্ষা সঙ্কোচন এবং শিক্ষা কারিকুলামে ভিনদেশী আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঃ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা শায়খ যিয়া উদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের মত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের শিক্ষা কারিকুলামে ভিনদেশী আগ্রাসন রুখে দিতে না পারলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকারে চলে যাবে। কারণ ইসলামী কৃষ্টি-সভ্যতা ধ্বংসের প্রধানতম হাতিয়ার হলো সুকৌশলে পাঠ্যপুস্তকে আঘাত করা। সে লক্ষ্যেই জাতীয় শিক্ষা কমিশনের একটি অশুভ চক্র পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা সিলেবাসে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির রচনা-প্রবন্ধ ঢুকিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ইসলামী বোধ-বিশ্বাস বিনষ্টের চক্রান্ত করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই চক্র অনেক দূর অগ্রসরও হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে, পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্তি বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। নেতৃদ্বয় পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসের চলমান অশুভ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সময়োপযোগী ভূমিকা জন্য দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বলেছেন,আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার পাঠ্যপুস্তকের কোথাও ইসলামবিদ্বেষী কোন কিছুই রাখা যাবে না। অন্যথায় এর পরিণাম শুভ হবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঃ শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা, ইসলামী তাহজীব তামাদ্দুন ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। তিনি আজ এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার সকল আয়োজন সম্পন্ন। সরকারের এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদে এবং সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী ১০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিশাল গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সেদিন সকাল ১০টায বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জমায়েত শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল রওয়ানা দেবে।
মহাসচিব আরো বলেন, ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষে সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচন করা হয়েছে। মাদরাসা সিলেবাসেও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষা সিলেবাসে বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের চিন্তাচেতনা বিরোধী কার স্বার্থে? শিক্ষানীতির মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি, তাহজীব-তামাদ্দুন প্রকাশ পায়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ভারতের আদলে সিলেবাস থেকে ইসলামীকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। সিলেবাসে আছে, পাবলিক পরীক্ষা ইসলামী শিক্ষার পরীক্ষা রাখা হবে না।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতিতে ভারতীয় আগ্রাসন ভয়াবহভাবে চলছে। ইসলামবিদ্বেষী অপসংস্কৃতির চেতনাধারীরা এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের ঈমান-আক্বিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা উঠিয়ে দিতে চায়। মোদি অনুসারী ওই নাস্তিক্যবাদীরা প্রশাসনে থেকে ইসলামী চিন্তা-চেতনার বদলে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সুকৌশলে অপসংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে শিক্ষা কারিকুলামে নাস্তিক্যবাদী লেখা ও ভিনদেশী সংস্কৃতি সংযোজনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনষ্টের নানামুখী চক্রান্ত চলছে। একটি শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে মানুষের ঈমান আক্বিদা, ইতিহাস এতিহ্য কৃষ্টি কালচার ও ধর্মীয় চেতনা জড়িত। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে কিছু নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী ভিনদেশী শিক্ষা ও সংস্কৃতি ঢুকিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান আক্বিদা ধ্বংস করে হিন্দু ও নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছে। ইসলাম বিরোধী শিক্ষা কারিকুলাম দেশের মানুষ প্রত্যখ্যান করবে এবং চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। নেতৃদ্বয় আরও বলেন, নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস সংশোধন করে মুসলমানের চিন্তা চেতনার আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে এবং সকল শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, ইসলামী শিক্ষা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এম এম বাহাউদ্দীনের ১৩ দফা কর্মসূচি সময়োপযোগী। তারা ইসলামী শিক্ষা রক্ষা ও ভিনদেশী আগ্রাসন প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, এ দেশ ইসলাম প্রিয় জনগণের মুসলিম পাঠ্যপুস্তক থাকবে কোরআন সূন্নাহ ভিত্তিক। সকল শ্রেণিতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এক শ্রেণির কর্মচারীরা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাদ দিয়ে ভারতের অপসংস্কৃতির শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র করছে। এমন কি সকল শিক্ষা কারিকুলাম ভারতীয় শিক্ষা ধাঁচে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করার ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে ভারত অর্ধসহা¯্রাদিক মাদরাসা বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছে। সেই দেশের অনৈইসলামিক শিক্ষা ব্যবস্থা এই দেশের পাঠ্যপুস্তককে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা তৌহিদী ইসলাম প্রিয় জনগণ মেনে নিবে না যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবেই। কোমল মতি ছাত্র ছাত্রীদের ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখার নতুন ষড়যন্ত্র আঁকা হয়েছে । অদূর ভবিষ্যতে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা মুছে ফেলা ও হিন্দুদের স্মৃতি ধারনা করে শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করাই উদ্দেশ্য । ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে দেশের উলামায়ে কেরামগণের সহযোগিতা ও সার্বিক সাহায্যের নিতে পারেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ১৩ দফা দাবীনামা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সকল তৌহিদী জনতাকে সাথে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি সকল মতপার্থক্য ভুলে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া ও সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই গুলো থেকে ইসলামী বিদ্বেষী কারিকুলাম বাদ দেয়ার আহ্বান জানান।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ ঃ মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি বিনষ্ট হলে ১৯৭১ এ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি বিনষ্টের চক্রান্তের প্রতিবাদ, দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট কারীদেরকে আইনের আওতায় আনা এবং চাল, ডাল, চিনি ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি কমানোর দাবীতে আগামী কাল বুধবার বেলা ১১ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি এ কর্মসূচি ঘোষণা করে তা সফল করার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ । এদের ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। এই ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি বিনষ্ট করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে দাঁড় কারাতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করতে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। ব্যবসার নামে একটি গোষ্ঠী মনোপলী ব্যবসা করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধার ও তাদের সন্তানদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলাম দেশ ও মানবতার সঙ্কটময় মুহূর্তে কাজ করতে হবে বলে বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির উল্লেখ করেন।
সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট ঃ সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর কাসেমী ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান এক বিবৃতিতে বলেন, শতকরা বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ শিক্ষা কারিকুলামে বিজাতীয় কালচার চালু করলে কোন মুসলমান এটা মেনে নেবে না। বাংলাদেশের পাঠ্যক্রমে অন্য কোন দেশ বা জাতির কালচার পড়ানোকে আমরা গর্হিত কাজ বলেই মনে করি। নেতৃদ্বয় আরো বলেন, সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু নাস্তিক কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে আছে যারা বিজাতীয় কৃষ্টি চালু করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত। তারা আমাদের দেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
নেতৃদ্বয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা এবং বাংলাদেশের সকল পাঠ্যসূচীতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার উদাত্ত আহ্বান করেন। তাহলেই এদেশের আলেম ওলামাসহ সর্বস্তরের মুসলমান খুশি হবে এবং জনগণকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা রক্ষা হবে। বাতিল প্রতিরোধ পরিষদ ঃ বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজা জালাল উদ্দিন বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এক শ্রেণির ভিনদেশী প্রেমিক কর্মকর্তা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচনের স্বপ্ন দেখছে। ২০২৩ সালের পরীক্ষায় ইসলামী পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়ার চক্রান্ত দেশবাসী মেনে নিবে না। তিনি শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন