শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ছাত্রীকে আটকে রেখে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় ও হেনস্তার অভিযোগ

শাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৭ পিএম

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ছাত্রীদের ‘বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী’ হলের ( ২য় ছাত্রী হল) আবাসিক এক ছাত্রীকে রুমে আটকিয়ে জোরপূর্বক শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্যের স্বীকারোক্তি রেকর্ড, এর আলোকে লিখিত আদায়ের চেষ্টা, ছাত্রত্ব বাতিল এবং ছিটকিনি দিয়ে একা রুমে বন্দী রেখে মানসিকভাবে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে হলটির প্রভোস্ট ও কয়েকজন সহকারী প্রভোস্টের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনা ‘স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে’ বলে উল্লেখ করে গত রোববার ( ২৩ অক্টোবর) ‘মানসিক এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা’র আবেদন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সে ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, গত ২০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৩ টায় টিউশনির উদ্দেশ্যে বের হলে তাকে প্রভোস্টের রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রভোস্ট জোবেদা কনক খান, সহকারী প্রভোস্ট ফাহমিদা আক্তারসহ আরও দুইজন সহকারী প্রভোস্টের উপস্থিত ছিলেন। তখন প্রভোস্ট জোবেদা কনক খান বাহিরে যেকোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও তাকে ঐ মুহূর্তে তাঁদেরকে সময় দিতে বলেন। তাকে মুঠোফোন বন্ধ করতে বলেন এবং তার ব্যবহার্য ব্যাগসহ মুঠোফোনটি বন্ধ করে তাদের জিম্মায় রেখে দেন। তখন তাঁরা ওশেনোগ্রাফি বিভাগের ছাত্রী ও তার সাবেক রুমমেট জেরি আক্তার কোন এক স্যারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেছে বলে জানায়। এমন অভিযোগের ব্যাপারে অবগত নন এবং এর সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী সে ছাত্রী ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক বরাবর দেয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, বিষয়টিতে আমার সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে আমার বক্তব্য প্রদান করেছিলাম; যা তাঁদের মধ্যে থেকে একজন ম্যাম রেকর্ড করে নেন। আমার সাথে কথা বলার কিছু সময়ের মাথায় সানজিদা সুলতানা জেরিন ম্যামসহ আরও একজন ম্যাম কক্ষে আসেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁরা কথা বলার সময় নানাভাবে আমার ছাত্রত্ব বাতিল এবং হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে ইত্যাদি নানা রকম হুমকি ধামকি দিতে থাকে। যেহেতু অভিযোগটির সাথে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা ছিলোনা তাই আমি শুরু থেকেই বিষয়টির বিপক্ষে ছিলাম এবং তাঁদের নিকট আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু সেই সময়েও তাঁরা আমাকে ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়ার ব্যাপারসহ নানা রকম ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং আমার সম্পৃক্ততা নেই এমন একটি বিষয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তিনি উল্লেখ করেন, এসব কর্মকান্ড চালানোর সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা রেকর্ডিংটি বন্ধ রাখে এবং আমাকে প্রলোভন দেখায় আমি বিষয়টি স্বীকার করে নিলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না; নতুবা আমার হল ক্লিয়ারেন্স ও ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া হবে, তখনো আমি আমার অবস্থানে অটল ছিলাম। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো কথা বলার পর জোবায়দা কনক খান ম্যাম ও মমতা খালা আমাকে সাইকোলজিস্ট ম্যামের কক্ষে নিয়ে যান এবং আমাকে সেই কক্ষের ভেতরে রেখে বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দেন। তার ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর মমতা খালা আমাকে সেই কক্ষ থেকে বের করে প্রভোস্ট ম্যামের কক্ষে নিয়ে যায় এবং পুনরায় নানাভাবে অভিযোগটি সত্য প্রমাণ করানোর জন্য নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এসময় আমার সাবেক রুমমেইটও উপস্থিত ছিলো।

লিখিত অভিযোগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর অপহরণের মতো একটি ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মানসিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো এবং আমি সাইকোলজিস্ট ম্যামের কাউন্সিলিং এ ছিলাম। যেটির ব্যাপারে হল কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছেন। এমতাবস্থায় ৩ ঘন্টার অসহনীয় মানসিক চাপ সহ্য না করতে পেরে শেষ মুহূর্তে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আমি বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলি, কিন্তু তখনো আমি পূর্বের-ন্যায় আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি এবং বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই ও এতে আমার সম্পৃক্ততা নেই বলে তাঁদের জানাই। তাঁরা সম্পূর্ণ বিষয়গুলো তাঁদের কাছে রেকর্ড করে রেখে দেয় এবং বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয় দেখাতে থাকে। সেই সাথে তাঁরা তাঁদের শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে আমাকে একটি লিখিত বয়ান দিতে বলে। আমি অবগত নই এবং আমার সম্পৃক্ততা নেই এমন একটি বিষয়ের উপর জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা এবং নানাভাবে হেনস্তা করায় আমি অনেক বেশি মানসিক চাপ অনুভব করছি, যা আমার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে।

অভিযোগের বিষয়ে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জোবেদা কনক খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “তার অভিযোগ আমি জানিনা। এটার দায়িত্ব তো ডিএসডাব্লিউর ( ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক)। ওনি এটা কাজ করবেন দেখবেন, বুঝবেন। আমার তো এখানে কিছু বলার নাই।” এছাড়া ‘ওই ছাত্রী যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলেও গণমাধ্যমে দাবি করেছেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক প্রফেসর আমিনা পারভীন বলেন, “আমি ওটা ( অভিযোগপত্র) পেয়েছি। আমার দপ্তরে আমি এটা দেখার চেষ্টা করছি এবং কনফিডেন্টশিয়ালি করছি। এর বেশি আমি শেয়ার করতে পারব না।”

এদিকে প্রভোস্ট ও ভুক্তভোগী ছাত্রীসূত্রে জানা যায়, ২০ অক্টোবর জেরি আক্তার ও ভুক্তভোগী ছাত্রী দুজনকেই লিখিত দিতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ অক্টোবর হল প্রভোস্ট বরাবর একটি লিখিত দেয়ার পাশাপাশি ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক বরাবর ‘মানসিক ও সার্বিক নিরাপত্তা’ চেয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন সে ছাত্রী। পরবর্তীতে সে ছাত্রীকে ‘২০ অক্টোবর জেরি আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার স্বীকারোক্তিতে অনুমতি ব্যতিত প্রভোস্টের ফোনালাপ রেকর্ড করার চেষ্টা করেছিলেন এবং অবৈধভাবে বহিরাগত এক শিক্ষার্থীকে রুমে রেখেছেন’ বলে উল্লেখ করে তিন কার্য দিবসের ভিতরে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না এবিষয়ে লিখিত প্রদানের জন্য শোকজ লেটার দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে শোকজ লেটারের লিখিত জবাব জমা দিয়েছেন সে ছাত্রী।

প্রভোস্টের কল রেকর্ডের বিষয়ে সে ছাত্রী বলেন, “ম্যামের ( প্রভোস্ট) সাথে বন্যার পর পর একবার ফোনে কথা হয়েছিল হলের পানির একটা ইস্যু নিয়ে। ওইখানে ম্যামের সাথে এমন কোনো কনভার্সেশন ছিল না যেটা রেকর্ড করতে হবে বা ফোন রেকর্ড করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”

জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রী, জেরি, তান্নি এবং তাজকিয়া নামের চার ছাত্রী একই রুমে থাকতেন। তাদের মধ্যে তান্নি সেই রুমের আবাসিক ছাত্রী হলেও ইন্টার্নশিপের জন্য নিয়মিত হলে থাকতেন না। ক্যাম্পাসে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে বা দিন শেষে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেলে তান্নিকে জানিয়ে তারই বিভাগের বান্ধবী লিজা মাঝে মাঝে তার সিটে থাকতেন।

শোকজ লেটারে উল্লেখিত অবৈধভাবে বহিরাগত শিক্ষার্থীকে রুমে রাখার বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “যাকে বহিরাগত বলা হয়েছে সে আমার রুমমেটের ( তান্নি) সিটে মাঝে মাঝে থাকতো। তাকে রুমে আনা, রুমে থাকতে দেয়ার ব্যাপারে আমার কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এবিষয়ে তান্নির সাথে কথা বললে তিনিও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, “তার ( লিজা) যেদিন বাসায় ফিরতে লেইট হয়ে যেত সেদিন সে ( লিজা) আমাকে বলতো সে আমার সিটে থাকবে। আমি যেহেতু ক্যাম্পাসে ছিলাম না। তাই সে বললে আমি না করতাম না। তার ( লিজা) থাকা না থাকা নিয়ে ওর ( ভোক্তভুগি ছাত্রী) কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না।”
খাতায় সাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে তান্নি বলেন, “আমি তাকে ( লিজা) জিজ্ঞেস করছি যে তুই আমার সাইন দিছোস কি না? আমার ফ্রেন্ড বলছে- না, ও আমার সাইন দেয় নাই। ও দুই তিন ছিল । কিন্তু খাতায় নাকি আমার সাইনে ভরা। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে এ কাজটা জুনিয়র করছে।”

লিজা বলেন, “ওর ( ভুক্তভোগী) সাথে আমার খুবই ফরমাল সম্পর্ক ছিল। রুমে থাকা না থাকা নিয়ে ওর সাথে আমার কখনো কথা হয় নাই। আমি দুইয়েকদিন সেখানে ছিলাম। তান্নির সাথে কথা বলে সেখানে ছিলাম। তবে যে কয়দিন ছিলাম আমি কোনো সাইন দেই নি।"

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন