ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। এতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এই রেলপথের সাধারণ যাত্রীরা।
অভিযোগ উঠেছে, খোদ স্টেশন কর্মচারীরাই এই টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত। ফলে র্দীঘদিন সময় ধরে টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে অবৈধ টিকিট বাণিজ্য চললেও এনিয়ে খোদ স্টেশন কর্মকর্তার কোন ভ্রæক্ষেপ নেই। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী যাত্রীদের।
জানতে চাইলে টিকিট কালোবাজারি হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন খোদ স্টেশন সুপারিনডেন্ট মো: জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন- টিকিট কালোবাজারি আছে, থাকবেই। তবে আমি কালোবাজারি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি। কিন্তু অগোচরে হলে আমি কি করব, বলে প্রশ্ন রাখেন এই কর্মকর্তা।
তবে যাত্রীরা চাইলে কালোবাজারি বন্ধ হওয়া সম্ভব দাবি করে এই কর্মকর্তা আরও বলেন- স্টেশনে জিআরপি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী আছে, তাদের দ্বায়িত্ব এসব দেখা। তবুও বিভিন্ন পথে টিকিট কালোবাজারে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও রেজিস্ট্রি করা বীরমুক্তিযোদ্ধার টিকিট কালোবাজারিদের হাতে ধরা পড়েছে। কিন্তু সব দোষ হয় আমার।
তিনি আরও দাবি করেন- যতদিন পর্যন্ত টিকিটের চাহিদা এবং সরবরাহে সমন্বয় না হবে, ততদিন টিকিট কালোবাজারি থাকবেই। কারণ ময়মনসিংহ স্টেশনে প্রতিদিন যাত্রী আছে কমপক্ষে ১ হাজার জন। এর বিপরীতে সিট’সহ টিকিট পায় মাত্র ২৩৭ জন। এই অবস্থায় কি আর করার আছে, বলেও যোগ করেন স্টেশন সুপারিনডেন্ট মো: জাহাঙ্গীর আলম।
তবে নিয়মিত এই রেলপথে চলাচল করা একাধিক কর্মজীবী যাত্রীর অভিযোগ, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের খোদ টিকিট বুকিং হেড ও বুকিং সহকারিরাই এই কালোবাজারির মূলহোতা। তারাই এই কালোবাজারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ পথে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন- হেড বুকিং সহকারি হামিদুর রহমান, রেলওয়ে সহজ ডট কমের কর্মচারী জাকির, বুকিং সহকারি রফিক, রিমু, জুলফিকার ও সোহেল। তারা বিভিন্ন কায়দায় স্টেশন কাউন্টার থেকে এসব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে পৌঁছে দেয়।
এরপর স্টেশন এলাকার চিহ্নিত কালোবাজারি তপন সাহা, মিনার, আ: ছাত্তার, জাবেদ, মুহিত, ইজ্জত আলী, আবু তাহের এবং সংশ্লিষ্টরা মিলে এই টিকিট অতিরিক্ত মূল্যে কালো বাজারে বিক্রি করে থাকে।
সূত্রমতে, ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন ৪২টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে আন্ত:নগর ট্রেন ৭টি। এগুলি হল- তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, অগ্নিবীণা, হাওড়, মোহনগঞ্জ ও বিজয় এক্সপ্রেস। এদের মধ্যে একটি চট্টগ্রামমুখী এবং বাকি ৬টি ঢাকামুখী।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকে। এর বিপরীতে সিট’সহ টিকিট বরাদ্ধ রয়েছে ২৩৭টি, আর সিট ছাড়া টিকিট বরাদ্ধ আছে প্রায় ৭ শত।
অভিযোগ উঠেছে, আন্ত:নগর ৭টি ট্রেনে প্রতিদিন ২৮টি টিকিট যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের জন্য বরাদ্ধ থাকে। কিন্তু সংরক্ষিত এই ২৮টি টিকিটের একটিও পান না সংশ্লিষ্টরা।
ফলে প্রতিদিন এসব টিকিট বিক্রি হয় কালোবাজারে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার নামও চাউড় হয়ে উঠেছে স্টেশনের ভেতরে-বাইরে।
নগরীর বাকৃবি এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো: আল আমিন মন্ডল জানান, কয়েক বার আমি ট্রেনে যাতায়তের জন্য টিকিট কাটতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কোঠা থাকা স্বত্ব্ওে আমি টিকিট পাইনি।
তার অভিযোগ, কোঠা বরাদ্ধের টিকিটগুলো প্রতিদিন কালোবাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। অথচ যাদের নামে সরকার কবরাদ্ধ করেছে তারা তা পাচ্ছে না।
এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও টিকিট বুকিং হেড ও সহকারিদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানায়, কোন কিছুই স্টেশন কর্তাদের অগোচরে হয় না, সবই তারা জানেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন