বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের উদ্যোগে কনফারেন্স অব দ্য কার্টিজ- কপ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘সবাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বললেও জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলনে (ইউএনএফসিসিসি) গণতন্ত্র নেই।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) সহ ২৫টি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্লাটর্ফম থেকে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সি.পি.আর.ডি’র নির্বাহী প্রধান মো: শামসুদ্দোহা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান শাহীন আনাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, ওয়াটার এইডের পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখসহ সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মর্কতা কর্মচারীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে না বরং এটি আমাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিচ্ছে। অনেকেই বলেন- এর আগের সম্মেলনগুলো থেকে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশ কি পেয়েছে। কিন্তু এখানে সেই বিষয়টি হলো দরকষাকষি কীভাবে হবে। যদি এটা ভালোভাবে করা না যায় তাহলে আমরা যে প্রত্যাশা করি তা পাব না।
সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭টি দেশ এখানে সদস্য। এখানে বলা আছে একটি শব্দ বা সেমিকোলনের যদি কেউ বিরোধিতা করে তাহলে হবে না। প্রত্যেকবার এমনটা হয়। এটা কেমন হলো না? এখন জরুরি অবস্থা, তখন যদি কেউ বিরোধিতা করে তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ জন্য আমি বলি সবাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বললেও জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলনে (ইউএনএফসিসিসি) গণতন্ত্র নেই। একটা বা দুইটা দেশ পুরো প্রক্রিয়া জিম্মি করে রেখেছে।
এ সময় কপ-২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেদের জায়গা থেকে শক্ত অবস্থান নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবে বলেও জানান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
বিগত বছরের সম্মেলনে সময়ক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে সাবের চৌধুরী বলেন, ‘বিগত বছরে কি হয় একটি নাটক, ড্রামা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত দরকষাকষি হচ্ছে। কপ শেষ হয়ে যাচ্ছে, আবার আরও একদিন চলবে। তখন কী হয়, অনেক দেশের প্রতিনিধিরা থাকে না। এখন যদি দেখা যায় ১৮ তারিখের জায়গায় ২০ তারিখ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা থাকবে না। দেখা গেল বাংলাদেশও থাকবে না। আমরা তো টিকিটে বুক করে চলে আসব। পরে যে কয় দেশের লোক থাকবে তাদের নিয়ে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বলা হয় এটা কপ-২৭ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত তাহলে তো হবে না।’
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বক্তব্য হবে ১৮ তারিখের মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত হবে সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ আছে। এরপর যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তা পরবর্তীতে কপ-২৮ সম্মেলনে সংশোধন করা হবে।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি কপ বা এমন সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকব, না নিজস্ব ফান্ড থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় খরচ করব? সেটা ভাবতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ফান্ডিং থেকে কিছু হবে না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে হওয়া উচিত বলেও মনে করেন এই সংসদ সদস্য।
দুর্ভিক্ষ নিয়ে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সংকট যেহেতু আসছে তখন নেতৃত্বের কোয়ালিটি দেখা দরকার। আমাদের জন্য সেটা স্বস্তির কারণ। যিনি রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্বে আছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন, তিনি বিষয়গুলো ভালো বোঝেন।
আমরা কপ-২৬ এর কাছ থেকে চেয়েছিলাম যে বৈশি^ক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে অঙ্গীকার আদায় করবে। কিন্তু আমরা সেটি পাইনি। আমরা বৈশি^ক কার্বন উদগীরণ কমানোর যে সীমা সেখান এখনো অনেক দূরে রয়েছি বর্তমান, টার্গেট গুলো ফিলাপ করলেও এই শতাব্দির শেষ নাগাদ ২.৫ ডিগ্রিসেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। এই সমঝোতা সম্মেলনে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বিবেচনায় রেখে নতুন জাতীয় ভাবে নির্নীত অবদান ঠিক করার কোন বিকল্প নেই। তিনি নতুন টার্গেটকে প্রতি দুই বছর অন্তর হালনাগাদ ও বর্ধিত করার সুযোগ রাখার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্ব অভিযোজন অর্থায়ন নিয়ে যে তালবাহানা শুরো করেছে তাকে অবিলম্বে বন্ধকরতে হবে এবং পূর্বে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণের ঘাটতি পূরণ করতে হবে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন চাহিদা বিচেনায় নিয়ে অন্তত বাষিক ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন প্রদান করতে হবে। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন বাংলাদেশের পরিকল্পনা এবং দলিল তৈরি করণে বিদেশি কনসালন্টে নিভৃসশলিতা থেকে সওে আসতে হবে এই কনসালেটেন্টরা অনেক সময় বাংলাদেশের সবার্থকে প্রধান বিবেচনায় রাখেনা।
ফারা কবির বরেন, আমরা ক্লাইমেট ন্যাগুসিয়েশনের শুরু থেকেই নানান তথ্য, যুক্তি এবং বক্তব্য হাজির করেছি কিন্তু ইন্নত বিশ^্যকে কোন কোথা বুঝাতে পারিনি, এই বছর (২০২২) সালকে বলা হচ্ছে সব থেকে বেশি দূর্যোগের বছর আর এই বর্ধিত দূর্যোগ আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। আমরা আশ্চয্য হই কেন বিশ^ নেতৃত্তের টনক নড়ছেনা। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্থানান্তরিত হচ্ছে ব্যপক হাওে, আমাদে মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার ব্যাপক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে কিন্তু আমরা দেখেছি বিজ্ঞানিরা বলেছেন ১০৫ ডিগ্রির মধ্যে উষ্ণায়নকে সীমিত করা না যায় তাহলে বাচাঁর আরকোন সুযোগ নেই। আমরা অভিলম্ব্যে উদগীরণ হ্রাসে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণের দাবি জানাই এবং অভিযোজন করার জন্য যথেষ্ট পরিবানে অর্থেও সর্বরাহ নিশ্চিত করেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, আমরা যদি নিরাপদে না থইক তাহলে উন্নত বিশ^ কি নিরাপদ থাকবে?
শাহীন আনাম বলেন, ‘বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধের জন্য বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন টাকা খরচ করছে। যে যুদ্ধের জন্য দুনিয়া গরদ করার সম্ভাবনা আছে। অথচ যেটার জন্য টাকা দিলে পৃথিবী বাঁচবে সেখানে তারা টাকা দেবে না। ইলন মাস্ক বিপুল টাকা খরচ করে টুইটার কিনেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কিছু করবে না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন