শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

হত্যাকান্ডের শিকার বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন

বান্ধবীসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২২, ৫:২৮ পিএম | আপডেট : ৫:৪৮ পিএম, ৮ নভেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে ধারনা করেছেন তার লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা। তার শরীর ও মাথায় আঘাতের একাধিক চিহৃ পাওয়া গেছে। ফারদিনের রহস্যজনক নিখোঁজ এবং লাশ উদ্ধারের ঘটনাটিকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তাদের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জেরে ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে ফারদিনের মৃত্যু কিংবা হত্যা রহস্য উদঘাটনে নিহতের বান্ধবীসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে র‌্যাব পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে।
নিহত ফারদিন ছিলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার কাজী নুর উদ্দিনের পুত্র। রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় ফারদিন পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন ।
গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন ফারদিন। এর আগে তার বান্ধবীকে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্্েরর সামনে নামিয়ে দিয়েছিল। এর পর থেকেই ফারদিন নিখোঁজ থাকায় তার বাবা রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এরই মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রামপুরা থানার ওসি কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের বাবার দায়ের করা ওই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ নিহতের বান্ধবীসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নিখোঁজের আগে রাত ১০টায় বান্ধবীকে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্্েরর সামনে নামিয়ে দিয়েছিল ফারদিন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত চার বছর ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে ফারদিনের। ওই তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ৪ নভেম্বর ঘোরাফেরার পর রাত সোয়া ১০টায় ওই তরুণী বাসায় ফিরে আসেন বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, গত সোমবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফারদিনের মোবাইলফোনের লোকেশন পাওয়া গেছে। সর্বশেষ অবস্থান পাওয়া গেছে কেরানীগঞ্জ এলাকায়। তবে ফারদিন ছাড়া তার মোবাইল অন্য কেউ বহন করেছে কি-না বিষয়টির তদন্ত চলছে। জিডির পর ওই তরুণীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে ফারদিনের মোবাইলফোন কল রেকর্ডের সূত্র ধরেই তদন্ত করছে পুলিশ।
বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে র‌্যাব-পুলিশের একাধিক টিম।
ফারদিনের পরিবার জানায়, নিখোঁজের দিন গত ৪ নভেম্বর ফারদিন নূর কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট আবাসিক হলের উদ্দেশে বের হয়ে যান। গত ৫ নভেম্বর পরীক্ষা দিয়ে আবার কোনাপাড়ার বাসায় ফিরে আসার কথা থাকলেও তিনি আর ফেরেননি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়ায় সহপাঠীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ওই পরীক্ষায় অংশ নেননি। এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করে সন্ধান না পাওয়ায় থানায় অভিযোগ করে পরিবার।
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে কেউ হত্যা করে থাকতে পারে। তার লাশ পঁচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, ফারদিনকে ৪ নভেম্বর রাতেই হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আমার ছেলে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ডিবেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আগামী মাসে স্পেনের মাদ্রিদে একটি ডিবেটিং অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দাবি করছি।
এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। তবে তা ফারদিনসহ নাকি তাকে ছাড়াই তার মোবাইল অন্য কেউ বহন করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষ।
র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থীর নিখোঁজের খবরে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব। তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নারায়নগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক লাশর শরীরের আঘাতের চিহৃ ও ধরন দেখে ধারনা করছেন এটি একটি হত্যাকান্ড।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন