আমেরিকায় মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে রিপাবলিকানরা যে সংসদের নিম্ন কক্ষ হাউস অফ রেপ্রেজেনটিটিভের নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে। যদিও রিপাবলিকানদের জয়ের ব্যবধান খুবই কম। যেমনটা তারা আশা করছিল যে এই মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে তারা একটা “লাল ঢেউ”এর জোয়ার আনবে তেমনটা হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা বিশ্লেষকদের ভাষায় একটা “হালকা লাল তরঙ্গ”।
কিন্তু পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সেনেটেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। সেনেটের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ কোন দলের হাতে যাবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। সেনেটের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের উপর যার পূর্বাভাস এখনো পাওয়া যায়নি। সেনেটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৫০টি আসন। এখন পর্যন্ত ডেমোক্রাট এবং রিপাবলিকানদের ঝুলিতে রয়েছে সমান সমান ৪৮টি আসন। চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যে চারটি অঙ্গরাজ্যের দিকে সবার চোখ, সেগুলো হচ্ছে জর্জিয়া, পেনাসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা আর নেভাডা। পেনসিলভানিয়া আর নেভাদা এই দুই রাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণের জন্য জর্জিয়াতে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফা আবার ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে কিনা।
এই নির্বাচনের আগে শোনা যাচ্ছিল রিপাবলিকানরা ভাল করলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করবেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফলাফল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য খুব সুখবর নয়। তিনি নিজে যাদের প্রার্থী হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে বাছাই করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই তেমন ভাল করতে পারেনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট গতকাল সন্ধ্যার মুখে তার মার-এ-লেগোর বাসভবন থেকে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণে দাবি করেন যে তার অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেটা হয়নি। তার সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি বলে জানাচ্ছেন ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা অ্যান্টনি যুরকার।
পেনসিলভেনিয়াতে ইতোমধ্যেই হেরে গেছেন তার বাছাই করা প্রার্থী মোহাম্মদ ওজ। জর্জিয়া এবং অ্যারিজোনায় তার অনুমোদিত প্রার্থী ভাল করেননি। ওহাইওতে তার প্রার্থী সুস্পষ্ট জয় পেয়েছেন, তবে অল্প ব্যবধানে। যুরকার বলছেন, ফলে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখনও যাচাই করছেন রিপাবলিকানরা। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প যদি ২০২৪এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেনও, তাহলেও তা কতটা সমর্থন পাবে সেটা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানাচ্ছেন বিবিসির ওয়াশিংটন সংবাদদাতা।
অন্যদিকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিসান্টিস বিপুল ব্যবধানে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য জিতেছেন। এবং ধারণা করা হচ্ছে এই জয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি ২০২৪এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানানোর একটা অবস্থান তৈরি করেছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হবার ইচ্ছা তিনি এখনও প্রকাশ করেননি। ফ্লোরিডা আমেরিকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট এবং সেখান থেকে তার এই বিপুল ব্যবধানে বিজয়কে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গতকাল ডিসান্টিসের সমর্থকদের তার জয়ের পর ধ্বনি দিতে শোনা গেছে “আর মাত্র দুবছর”।
ট্রাম্প ২০২৪এ নির্বাচনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার ব্যাপারে আগ্রহী বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যেই ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসকে ২০২৪এ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য না দাঁড়ানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন তিনি দাঁড়ালে রিপাবলিকান পার্টির ক্ষতি হবে। ট্রাম্প ফক্স নিউজ টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে ৪৪ বছর বয়সী ডিসান্টিসের প্রতি এমন হুমকিও দিয়েছেন যে, ডিসান্টিস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দাঁড়ালে তার ভাষায় “তাকে রীতিমত পস্তাতে হবে”। কারণ তিনি বলেছেন তিনি তার সম্পর্কে এমন সব তথ্য ফাঁস করে দেবেন যা তার জন্য সুখকর হবে না।“আমি জানি না তিনি দাঁড়াবেন কিনা, কিন্তু যদি দাঁড়ান, তার খুবই ক্ষতি হবে। আমি সত্যি মনে করি সেটা তার নিজের এবং পার্টির জন্য খুবই খারাপ হবে।”
শোনা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন। আর রন ডিসান্টিস যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মিডটার্ম নির্বাচনে জিতেছেন তাতে তার জনপ্রিয়তা নিয়ে রিপাবলিকানরা উচ্ছ্বসিত। তিনিও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে থাকতে পারেন এমন জল্পনা বাড়ছে এবং সেই ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি ট্রাম্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন