আওয়ামী লীগ সরকার একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন করা যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সালের পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জয়ী হয়ে একটানা চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকায় আজ অন্তত বাংলাদেশের উন্নয়নটা আমরা করতে পারছি।
আসন্ন শীত-মৌসুমে শীতার্ত মানুষের সহায়তায় কম্বল ও শীতবস্ত্র প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডারে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অনুদান গ্রহণের সময় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়। এ সময় একটি দলের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবিধা প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি অনুষ্ঠানে কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি, রেহানা, মাহাথির মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী আমরা বসে এক কোনায় গল্প করছি। উনি বললেন, আসলে দেশের একটা উন্নতি করতে হলে একটু দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় না থাকলে হয় না। উন্নতিটা ঠিক মতো করা যায় না।
আমি (মাহাথিরকে) বললাম, জনগণ কতক্ষণ ভোট দেবে নাকি দেবে, সেটা তো বলতে পারি না। যদি ভোট পাই হয়তো থাকবো। কারণ, আমাদের দেশে পরিবেশটা অন্য রকম। দীর্ঘদিন মিলিটারি ডিক্টেটর, কখনও ডাইরেক্টলি কখনো ইনডাইরেক্টলি তারা ক্ষমতা দখল করে। আবার উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়। আর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এটা তো আমাদের দেশে লেগেই আছে। আমাদের তো ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা থাকে না এই দেশে। যার জন্য একটা স্থিতিশীল পরিবেশও কখনও আসেনি। যেজন্য সার্বিক উন্নতিটা ঠিক হয়নি। কাজেই যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও আমার প্রচেষ্টা থাকবে আমি যতটুকু আছি আমরা চেষ্টা করে যাবো।
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নতি প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে সম্মানটা আজকে আন্তর্জাতিকভাবে আছে এটা যেন অব্যাহত থাকে। আমরা বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি; এটা ধরেই যেন এগিয়ে যেতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন তো হয়ে গেল। মানুষকে তো এক সময় বিদায় নিতেই হবে। এটা তো আল্লাহ-ই বলে দিয়েছেন। সেটাও আল্লাহর ইচ্ছা, যেদিন যেতে হয় চলে যাবো। মানে এখান থেকেও..এই চেয়ার থেকেও চলে যাবো; আবার জীবন থেকেও চলে যাবো। যেতেই হবে। এটা হলো বাস্তবতা। যেদিন যাওয়ার সময় হবে। আর সময় না হলে ততদিন তো কাজ করতেই হবে। আল্লাহ যতক্ষণ সুযোগ দিয়েছেন।
সরকার প্রধান আরও বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য- যে স্বপ্ন নিয়ে, যে আদর্শ নিয়ে, যে লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশটা স্বাধীন করেছিলেন সেটা আমরা অর্জন করবো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ইইউ’র প্রতি আহŸান
এদিকে গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশন ফর হোম অ্যাফেয়ার্স ইভা জোহানসনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে আসেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্বকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বোঝা এবং নতুন শিশু জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে।
ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতা ইবা জোহানসন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইইউ বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি আরো বলেন, ইইউ বর্তমানে ৪৫ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে।
বৈঠকে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশী অভিবাসীদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এই অভিবাসন বন্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইইউ নেতা বলেন, ইইউ নেতৃবৃন্দ এবং বৈধ অভিবাসীরা পরস্পরের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। এ সময় ইইউ প্রতিনিধি দল জানতে চায় যে, বাংলাদেশ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন অভিযোজন ও প্রশমণ কর্মসূচি গ্রহণ করে বিধায়, আমরা যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ধনী দেশগুলো- যারা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রæত অর্থ দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেনি।
বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও ইইউ তাদের ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। নারী ক্ষমতায়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়নকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমরা প্রতিটি খাতে নারী কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছি এবং তারা খুব ভাল কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এটি আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ও ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন