বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অন্য অনেক বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া সম্মেলনে থাকবেন সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানও।
তবে একইসময়ে একই সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও সউদী যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনো পরিকল্পনা নেই বাইডেনের। জ্যেষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শনিবার (১২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান শুক্রবার বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০টি শিল্পোন্নত দেশের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রোববার থেকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। এতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ অন্য অনেক বিশ্বনেতাও যোগ দেবেন। এর আগে বাইডেন মিশরে জলবায়ু সংক্রান্ত কপ-২৭ সম্মেলনে অংশ নেন। শুক্রবার সেখান থেকে তিনি কম্বোডিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
কম্বোডিয়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বার্ষিক মার্কিন-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যাবেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, আঞ্চলিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য কম্বোডিয়া যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে কথা বলতে গিয়ে জ্যাক সুলিভান বলেন, জি-২০ জোটের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে সউদী যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনো পরিকল্পনা নেই বাইডেনের।
এর আগে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে জ্যাক সুলিভান জানান, ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেখা করার ‘কোনো পরিকল্পনা নেই’। মূলত তেল উৎপাদন কমানো নিয়ে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় বাইডেন এই অবস্থান নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা সেসময় আরও বলেন, তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে সউদী আরবকে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে এবং মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার পরিবর্তনের বিকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘পদ্ধতিগতভাবে’ কাজ করবেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’এ কথা বলার সময় সেসময় সুলিভান বলেন, মার্কিন-সৌদি সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন আসন্ন নয়। তবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক বাইডেন পুনরায় মূল্যায়ন করছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, তেল উৎপাদন কমানোকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরবের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। প্রায় সাড়ে আট মাস ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে এবং রাশিয়ার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সউদী আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনঃমূল্যায়ন করছেন বলে আগেই খবর বের হয়েছিল। মূলত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদন বাড়ানোর চাহিদা জানালেও সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
মার্কিন মিত্র হলেও রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত কার্যত রাশিয়ার পাশে থাকার সমান। এতে করে বাইডেন প্রশাসনে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং সর্বশেষ সউদী আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুনঃমূল্যায়ন করছেন বলে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে জানায় হোয়াইট হাউস।
উল্লেখ্য, তেল-উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে সম্প্রতি ঐকমত্যে পৌঁছায়। যা ২০২০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। এছাড়া ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদান কমানোর এই হার বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশের সমান।
এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এতে করে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য আরও বেশি অর্থ আয় করতে পারবে রাশিয়া। আর এটিই সউদীর ওপর বাইডেনের ক্ষোভের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।সূত্র : রয়টার্স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন