মাদরাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা, স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম,পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সহ ১৩ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেনী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দ আজ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানবন্ধন কর্মসূচীতে ৬ উপজেলার প্রায় ৩ শতাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ২ ঘটিকায় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আফছার ফারুকীর নেতৃত্বে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূঁইয়া,জেলা সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্ল্যাহ,সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা সেক্রেটারি সুপার আবদুল লতিফ, ছাগলনাইয়া উপজেলা সেক্রেটারি সুপার মোহাম্মদ ইউনুছ,দাগনভূঞা উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ ভূঞা , পরশুরাম উপজেলা সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক নুরুল আলম, ফাজিলপুর ওয়ালিয়া ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা মাইন উদ্দিন খন্দকার, অধ্যক্ষ মাওলানা ইলিয়াস, অধ্যক্ষ মাওলানা গিয়াস উদ্দিন, অধ্যক্ষ মাওলানা ইসমাইল প্রমুখ।
স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়,মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর অবদান এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ বিশেষকরে মাদ্রাসা শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কৃতজ্ঞতার সাথে আজীবন স্মরণে রাখবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, কওমি মাদরাসার ¯œাতকোত্তর (মাস্টার্স) সনদের মান প্রদান, জনবল কাঠামো অনুমোদন, মাদরাসার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ৫৬০টি মডেল মসজিদ, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-কে জাতীয় দিবস ঘোষণাসহ বহুমুখি পদক্ষেপ ইসলামি শিক্ষার ইতিহাসে সোনালী হরফে লেখা থাকবে। যুগের চাহিদা পূরণে রূপকল্প ৪১, চতুর্থ শিল্প বিল্পবের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, উন্নয়ন কিংবা যুগোপযোগী করা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। শতকরা ৯১% মুসলমান যে দেশে বসবাস করে সে দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য , কৃষ্টি, দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির সাথে সাথে বর্তমান চাহিদাকে সমন্বয় করে দেশবরেণ্য আলেম ওলমাদের অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। উন্নয়ন ও সংস্কার সম্পর্কে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দদের সাথে ০৫টি কর্মশালায় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হয়। আলেম-ওলামাগণ বারবার একই দাবী করেন যে, মুসলিম জনগোষ্ঠির ইমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে আধুনিক বিষয়সমূহঅন্তর্ভূক্তি ও মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট উপযোগী পরিমার্জন সাপেক্ষে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০২২ইং সনের জন্য ঘঈঞই ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে ০৯টি বই (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান) পাইলটিং/পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান করা হয় এবং ২০২৩ইং সাল থেকে ৬ষ্ঠ, ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ঐসমস্ত বই স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে মর্মে ঘঈঞই ঘোষণা দিয়েছে, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্ণিত পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ-উদ্দেশ্য (জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ বর্ণিত) এবং স্বতন্ত্র বৈষম্য উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে। এসব পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি, চিত্র, শব্দ, বাক্য, তথ্য ও উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত করে তুলবে। অধিদপ্তরসমূহ ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ০৯টি বইয়ের মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বানী, উদ্বৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি।
সামগ্রিক বিবেচনায় ৯১% মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগি নয়। মাদরাসায় এসকল বই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রশ্নেই আসেনা।
এধরনের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।
১৩ দফা দাবী হলো, মাদরাসা শিক্ষার জন্য এ সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যবই, ঘঈঞই, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করার বিকল্প নেই। অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে। দাবীকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিতপঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে। সাধারণ শিক্ষায় ঝঝঈ পরীক্ষা দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে। বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকুরী জাতীয়করণ করতে হবে। সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধান সহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান করতে হবেএবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৮ সালে প্রণিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নীতিমালা শতভাগবাস্তবায়ন করতে হবে এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা মঞ্জুরীর ১৪ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আরবি প্রভাষকগণের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে। কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে। মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) স্কুল ও কলেজের নীতিমালা ২০২১ এর সাথে সমন্বয় করে মাদরাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে যা অমানবিক। অনতিবিলম্বে বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যৌক্তিকদাবী এবং জাতীয়ভাবে গৃহীত মাদরাসা শিক্ষার স্বতন্ত্র্য অক্ষুন্ন রাখতে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবেন এবং আমাদের দাবী বাস্তবায়ন করে লক্ষ লক্ষ আলেম, ওলামা, পীরমাশায়েখ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে দোয়া পাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন