মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ঢাকা-মাওয়া-লৌহজং-বালিগাঁও সড়কে চলাচলরত গাঙচিল পরিবহন ও ইলিশ পরিবহনের শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা পরস্পরকে দোষারোপ করে বাস বন্ধ রেখেছে উভয় পক্ষ। খবর পেয়ে লৌহজং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিবেশ শান্ত হয়। তবে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই দিকে সারা দিন দুইটি পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি ও আশপাশের এলাকার সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। ইলিশ পরিবহনের যাত্রী মো. আসাদুজ্জামান জানান, বুধবার সকাল ৮টায় লৌহজংয়ের খেতের পাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ইলিশ পরিবহনের একটি বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই পরিবহনের আগে পরে আরও দুটি গাংচিল পরিবহন ঢাকার দিকে রওয়ানা দেয়। এতে মালির অংক স্ট্যান্ডে ইলিশ পরিবহনের যাত্রীদের উঠতে বাধাগ্রস্ত করে। এক পর্যায়ে ইলিশ পরিবহনের যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গাংচিল পরিবহনের এক সহকারীকে মারধর করে। এরপর গাংচিল পরিবহনটি মালির অংক বাজারে এসে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে দুই পরিবহনের শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষ লৌহজং থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন।
ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, ইলিশ পরিবহন ও গাঙচিল পরিবহনের মালিকেরা কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।শুধু মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। ইলিশ পরিবহনের সভাপতি মো. আলী আকবর শেখ বলেন, ইলিশ পরিবহন চলাচলে গাংচিল পরিবহন বরাবর বাধা প্রদান করে আসছে। খেতের পাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ইলিশ পরিবহনটি ছেড়ে গেলে গাড়িটির আগে পরে দুটি গাংচিল গাড়ি ছেড়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তিনি আরও জানান, গাঙচিল পরিবহনের শ্রমিক-মালিকেরা কখনই চায়নি এ সড়কে অন্য আরেকটি পরিবহন চলাচল করুক।
গাঙচিল পরিবহনের সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংঘর্ষের জন্য ইলিশ পরিবহনের স্টাফরা দায়ী। তারা বিনা কারণে আমাদের বাসের শ্রমিকদের মারধর করেছে। তবে তিনি স্বীকার করে জানান, ইলিশ পরিবহন এ সড়কে আসায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগি যাত্রীরা জানান, এর আগে গাঙচিল পরিবহন ঢাকা টু লৌহজংয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় তাদের যাত্রী সেবার মান একেবারেই নিম্ন পর্যায়ে। সেবার মান অনুযায়ী ভাড়াও বেশি,সাধারন যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপার-কনট্রাকটারদের প্রয়ই বাঁকবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অতি পুরোন ফিটনেসবিহীন লোকাল বাস গুলোতে রং করে নতুনভাবে চালু করা এই সিটিং গাঙচিল পরিবহন। সিটিং সার্ভিস হলেও রাস্তার বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ওঠানো নামানো হয়। এবং গাদাগাদি করে যাত্রী দাড় করিয়ে নেয়া হয়। এর যেন কোন প্রতিকার নেই। রাস্তার যেখানেই লোক দাড়ানো দেখে সেখান থেকে তাদের গাড়িতে তোলেন। শেষ পর্যন্ত গাড়িতে দাড়ানোর জায়গাও থাকে না। গাড়িতে উঠার স্থলে ঝুলে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখাযায় তাদের। শিশু, মহিলা, প্রতিবন্ধিদের জন্য কোন নির্দিষ্ট আসন থাকার কথা থাকলেও অন্যান্যদের মতো তারাও দাড়িয়ে যায়। এ নিয়ে কোন যাত্রী কথা বললে তাদের বিভিন্ন ধরনের ধমকি দেওয়া হয়। হেলপার-কনট্রাকটার বলে ১'শ টাকায় গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি নাকি। চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাই ভাল না লাগলে ভাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নামুন। প্রাইভেট কার কিনে তারপরে যান আপনাদের উঠতে কে বলে৷
যাত্রীরা আরো জানান, এ ধরনের হয়রানী থেকে তারা কিভাবে মুক্ত হবে তারা তা জানে না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান। লৌহজংয়ে গাঙচিল ব্যাতিত অন্য পরিবহনের বাস আসলেই ওই বাসের সামনে একটা গাঙচিল পিছনে একটা গাঙচিল ছাড়েন এরপর অন্য পরিবহনকে আর আগে যেতে দেয়না তারপর একটা গন্ডগোল সৃষ্টি করে নতুন আসা পরিবহনকে বন্ধ করে দেয়৷ এর আগে বিভিন্ন পরিবহনের বাস চালু করলেও গাঙচিলের অত্যাচারে টিকে থাকতে পারেনি। গাঙচিলের দৌরাত্য দেখলে মনে হয় পুরো লৌহজং ওদের। সাধারন যাত্রীগণ এই ধরনের হয়রানী থেকে তারা কিভাবে মুক্ত হবে এ ব্যাপারে এলাকার জনসাধারণ জনপ্রতিনিধি উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা দাবী যানান। অচিরেই যেন এ দূর্ভোগ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর থেকে এ সড়কে ইলিশ পরিবহনের বাস চালু হওয়ায় স্থানীয় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। গাঙচিল পরিবহন ৩০ বছর ধরে এ সড়কে আধিপত্য চালিয়ে আসছে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। প্রতিযোগিতা না থাকায় ভোগান্তির অপর নাম হয়ে উঠেছিল গাঙচিল পরিবহন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন