শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রশ্ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়ন প্রয়োজন

মাজহার মান্নান | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোতাকাহিনী পড়েছিলাম। তখন বিষয়টির গভীরতা নিখুঁতভাবে বুঝতে না পারলেও শিক্ষকতা পেশায় এসে সেটা বুঝতে পেরেছি। উপমহাদেশের মুখস্থনির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কবি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, মুখস্থনির্ভর শিক্ষা জীবনের কোনো কাজে আসে না, শুধু একটি স্বীকৃত সনদ অর্জিত হয় মাত্র। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও তার অনেক বিশ্লেষণী পর্যবেক্ষণ ছিলো। শিখন, প্রশ্নের ধরন, পরীক্ষা পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার অ-আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে মৌখিক প্রশ্ন করার মাধ্যমে মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞান যাচাইয়ের প্রচলন ছিল যেটাকে আমরা সক্রেটিয় পদ্ধতি বলে থাকি। কিন্তু আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন দেখতে পাই এবং এটি সারা বিশ্বে প্রচলিত। কালচক্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একটি মানসম্মত শিখন ও মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রবর্তন করতে সক্ষম হলেও আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের এই পিছিয়ে পড়ার বহুমাত্রিক কারণ থাকলেও শিক্ষার রাজনীতিকরণ, পরীক্ষায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নৈরাজ্যের মতো বিষয়গুলি শিক্ষা বিশ্লেষকদের ভাবিয়ে তোলে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও আমরা একটি মানসম্মত এবং সাসটেইনেবল প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি দাঁড় করাতে পারিনি। বার বার পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বিচার সংযোজন ও বিয়োজন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ানোর রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ, দুর্নীতি এবং গুণগত শিক্ষার প্রতি চরম অবহেলা সমগ্র শিক্ষা পদ্ধতিকে অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরে রেখেছে। একজন চিকিৎসকের কাছে যখন কোনো রোগী যান, তখন চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের উদ্দেশ্য থাকে, প্রকৃত রোগ সনাক্ত করা। পরীক্ষার মাধ্যমে যদি রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হয়, তবে সেটাকে সঠিক পরীক্ষা বলে। অন্যথায় সেটা ব্যর্থ পরীক্ষায় পর্যবসিত হয় এবং রোগী মৃত্যুর পথে আগাতে থাকে। যাহোক, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য কী, সেটা আগে জানা প্রয়োজন। পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য হলো একজন শিক্ষার্থীর মেধা, যোগ্যতা এবং দক্ষতা খুঁজে বের করা এবং সেটার প্রমাণস্বরূপ একটি দলিল প্রদান করা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলি নেয়ার মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের পাশ করানো এবং একটি সনদ দিয়ে দেয়া। শিক্ষক হিসেবে আমিও এই পাশের সাথে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দুর্নীতি এবং পরীক্ষা পদ্ধতির দুর্বলতাগুলির নানা দিক থেকে সম্পৃক্ত। পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কোন প্রতিষ্ঠানে পাশের হার কত, সেটার একটা চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং জরিপ লক্ষ করা যায়, কিন্তু এর পাশাপাশি অন্যান্য অনুষঙ্গ জরিপ বা বিশ্লেষণ হয় না। যার পাশের হার বেশি সে বাহবা পেতে থাকে সব পর্যায় থেকে। আর যার পাশের হার কম তাকে তুলোধুনা করা হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের শিক্ষার্থীদের যেনতেনভাবে পাশ করাতে মরিয়া হয়ে উঠে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের উপর। স্কুল ও কলেজ জীবনে পরীক্ষা দিতে দিতে তারা ক্লান্ত হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলি শুধু তাদের স্বার্থটুকুই বিবেচনায় রাখে, গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে তাদের মাথা ঘামানোর কোনো ইচ্ছা বা সময় কোনটিই নেই। পরীক্ষা শাসিত শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে নতুন একটি শিক্ষাক্রম চালু হতে চলেছে। কিন্তু সেখানেও পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে বেশ কিছু দুর্বলতা দৃশ্যমান। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক এবং বছরব্যাপী মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। পদ্ধতিটি ভালো কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটি মনোপলির শিকার হতে পারে। শিক্ষকদের প্রাইভেট এবং কোচিংয়ের সরাসরি প্রভাব এর উপর পড়তে পারে, যেটা বুমেরাংও হয়ে যেতে পারে। আবার প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এটার অপব্যবহার করতে পারে। কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। দু’ চারটি দুর্বল দিকের মধ্যে আলোচনা সীমিত রাখতে চাই। পাঠ্যবই, প্রশ্ন এবং পরীক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি দৃশ্যমান। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে পাঠ্যবইয়ে খুঁজে পায় না বা বুঝতে পারে না। এর ফলে তারা গাইড ও নোট বই নির্ভর হয়ে পড়ে, যেটা শিক্ষা এবং পরীক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। ইংরেজি বিষয়ের কথাই বলা যাক। ইংরেজি পাঠ্যবইকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে পারে না। এর ফলে গুটি কয়েক গাইড বইয়ের উপর তারা ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এমনকি ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নের ধরন এমন হয়ে গেছে যে, তাতে শিক্ষার্থীদের মাইন্ড সেটআপ হয়ে গেছে যে, এখন আর গ্রামার পড়ার দরকার নেই। তাদের এই মাইন্ড সেটআপ ইংরেজিতে দুর্বলতা আরো প্রকট করে তুলছে, যার প্রমাণ মিলছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়। বহু বছর ধরে রচনামূলক প্রশ্নে বোর্ড পরীক্ষার প্রচলন ছিল এবং সেটা ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তখন বোর্ড পরীক্ষায় একই দিনে দুই পত্র (সকাল-বিকাল) অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৯২ সালে পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্রে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক প্রশ্নের প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত প্রতি বিষয়ে ৫০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন নির্ধারিত ছিলো এবং বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক মিলে একত্রে পাশ নম্বর ৩৩ নির্দিষ্ট ছিল। রচনামূলকে ১০ নম্বর তুলতে পারলেই পাশ সুনিশ্চিত। এর ফলে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পাশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে থাকে। প্রথম বিভাগে পাশের হারও ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। পাশের হারে আসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যা অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি ভিন্ন ধরনের স্বস্তির সঞ্চার করেছিলো। একই সাথে শিক্ষা বিশ্লেষকদের সমালোচনাও ছিল। আর এই সমালোচনার ফলে বহুনির্বাচনী ও রচনামূলকে পৃথকভাবে পাশের বিধান করা হয়, যেটার প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর পড়তে থাকে। ’৯২ থেকে ’৯৫ এ সহজে পাশ হয়ে গেলো কিন্তু বিধান পরিবর্তন করায় ফলাফলের তারতম্য প্রকট হতে লাগলো। নির্দিষ্ট ৫০০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নকে অনির্দিষ্ট করে দেয়া হলো। নব নব পরীক্ষা পদ্ধতি আর বিধানের কারণে শিক্ষার্থীদের উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে গেলো। ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু হলো যেটা মোটেও প্রয়োজন ছিল কিনা, সে প্রশ্ন থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষা ভীতি বাড়তে লাগলো। ২০১০ সাল থেকে জেএসসি শুরু হলো, যেটাকে শিক্ষা বিশ্লেষকরা সাধুবাদ জানাতে পারেননি। কারণ, প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষা ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত চাপ। পরীক্ষা ভীতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীদের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীরা ভাবতে শুরু করে যে, শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য পড়লেই হবে। যাহোক, পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ভারসাম্য আনার জন্য ২০১৭ সালে মাধ্যমিকে সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা শুরু হলো। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসে ঘটলো উল্টো ঘটনা। পরীক্ষা পদ্ধতি বিতর্কের মুখে পড়লো। প্রশ্ন এবং পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের পাশাপাশি ফলাফল পদ্ধিতেও পরিবর্তন আনা হলো। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের পরিবর্তে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হলো এবং ১৯৯১ সালে এই পদ্ধতি প্রথম বুয়েটে চালু হলো। ২০০১ সালে এসএসসি-তে এবং ২০০৩ সালে এইচএসসি-তে চালু হলো। ২০০১ এ এসএসসি-তে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭৬ জন। পরবর্তীতে পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন প্রণয়নের দুর্বলতার কারণে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং এটা এখন লাখে উন্নীত হয়েছে। জিপিএ ৫ অর্জনই যেন শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন, পরীক্ষা আর মূল্যায়নের নির্বিচার পরিবর্তনে সাল ভেদে শিক্ষার্থীদের রেজাল্টে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় এবং চাকরি জীবন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ নানা জায়গায় তারা বৈষম্যের মোকাবিলা করতে থাকে। প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষায় নকল, মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা ছিল। রাষ্ট্র সেই সমালোচনাকে আমলে নিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করে ২০১০ সালে। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের পরিবর্তে সৃজনশীল প্রশ্নের প্রবর্তন শিক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো। কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক। কেননা, সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে যে দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন সেটার বড় অভাব দেখা দেয়। অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ শিক্ষকরা গাইড বই থেকে উদ্দীপক নিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে থাকে, এমন কি প্রশ্নগুলিও গাইড থেকে দিতে থাকে। এর ফলে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ্য বই পড়ার যে মিশন নেয়া হয়েছিলো সেটা ব্যাহত হতে থাকে। পরীক্ষা ও প্রশ্ন পদ্ধতির নানা দুর্বলতা তো আছেই, সেইসাথে খাতা মূল্যায়নেও রয়েছে অনিয়ম। বেশি নম্বর প্রদানের একটি সংস্কৃতি চালু হয়েছে, যা গুণগত শিক্ষার বড় অন্তরায়। শিক্ষার্থী এ প্লাস পেতে মরিয়া, শিক্ষকরাও এক্ষেত্রে যেন আরো উদার। আর অধিকসংখ্যক এ প্লাস পাওয়ার কৃতিত্ব রাষ্ট্র নিতেই পারে। আসলে সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেবো কোথা? পরীক্ষায় পাশই যেহেতু পড়ালেখার একমাত্র উদ্দেশ্য, তাই সেটাকে পেতে হবে যে কোনো মূল্যেই হোক। সেটা হতে পারে প্রশ্ন ফাঁস করে, নকল করে, পরীক্ষার হলে অন্যের খাতা দেখে লিখে, হলের ঢিলেঢালা ডিউটি, পরীক্ষার কেন্দ্র সুবিধাজনক স্থানে নেয়া, খাতা রিলাক্স করে দেখাসহ নানা অনিয়ম। বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন ১৯৭৪ সালে পরীক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে যে সুচিন্তিত মতামত দিয়েছিলো, সেটার বাস্তবায়ন থেকেও আমরা বহুদূরে। সত্যি বলতে কি, পুরো সিস্টেমটির পরতে পরতে দুর্বলতা বিদ্যমান। আর এই দুর্বলতার সুযোগে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে পাশের হার। পদ্ধতিগত দুর্বলতায় পাশের হার বাড়ছে কিন্তু গুণগত শিক্ষার উন্নয়ন নেই সে অর্থে। আর এই পাশের হারের চাপ পড়ছে উচ্চ শিক্ষায় গিয়ে। আর উচ্চ শিক্ষা শেষে সেই চাপ আরও প্রকট হচ্ছে বেকারদের ক্ষেত্রে। যারা ফাঁকফোকর দিয়ে পাশ করে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি এমএ সনদ নিয়ে সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু দেশে এত উচ্চ শিক্ষার আদৌ কি প্রয়োজন আছে?

প্রশ্ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। পাঠ্যবই, সিলেবাস এবং প্রশ্ন প্যাটার্নের ঘনঘন পরিবর্তন বন্ধ করতে হবে। একটি সাসটেইনেবল এবং মানসম্মত সিলেবাস, প্রশ্ন প্যাটার্ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে। আমাদের পরীক্ষার আরেকটি দুর্বলতা হলো সময় নির্ধারণ। একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের জন্য তিনঘণ্টা সময় ধরে পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দু’ ঘণ্টাই যথেষ্ট। পাশ নম্বর ৩৩ বহু বছর ধরে চলছে। এটাকে সংস্কার করে ৪০ এ উন্নীত করা যেতে পারে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও পাঠ্যবইয়ে একটি মানসম্মত প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা সম্ভব হলো না কেন? উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে পাঠ্যবইয়ের শেষে প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করে দেয়া হয় এবং সেখান থেকে কৌশলে পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইমুখী হয় এবং তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হয়। প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের সাথে একটি প্রশ্ন ব্যাংক সংযুক্ত করে দিয়ে সেখান থেকে প্রশ্ন করা যেতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। বেশি বেশি পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা শিখে, এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পরীক্ষা ভীতি দূর করা অতি জরুরি। প্রশ্ন প্রণয়নে অবশ্যই মান বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপোসের সুযোগ নেই। এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পড়তে বাধ্য হয় এবং গাইড বই বর্জন করে। একাডেমিক ধারাবাহিক মূল্যায়নে শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি পরীক্ষার উদ্দেশ্য হোক জ্ঞান অর্জন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, কবি, কলামিস্ট ও গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন