বুধবার ০৯ অক্টােবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ রবিউস সানী ১৪৪৬ হজিরী

স্বাস্থ্য

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম প্রতিরোধ

ডাঃ শাহজাদা সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওস) প্রজননক্ষম মহিলাদের একটি হরমোনজনিত রোগ। পিসিওএস-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যে উচ্চ মাপের আন্ড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনগুলির উপস্থিতি থাকে। মেয়েদের দেহে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এর প্রভাবে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বড় হয়ে বের হবার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্থ হয়।

পিসিওএস জীনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। জীনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি এ রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

পিসিওএস দেখা দেয় যখন, ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়। যার পিছনে পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক অতিরিক্ত এলএইচ নিঃস্বরণ ও দেহে ইনস্যুলিন রেজিটেন্সের উপস্থিতি।

অনিয়মিত ঋতুগ্রাব অধিকাংশ সময়ে ঋতুগ্রাব কম হলেও কিছু কিছু সময় তা বেড়ে যেতে পারে এবং কারো বেলায় তা যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠে।

মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি), ব্রণ দেখা দেয় মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। আরও কিছু শারীরিক সমস্যা এর সঙ্গে থাকতে পারে- তলপেটে ব্যথা, মকমলেরমতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়), বন্ধ্যঅত্ব।

স্বর - গলার স্বর পুরুষালী হওয়া বা মোটা (অনেক কম দেখা যায়), গর্ভপাত।

রোগ শনাক্তকরণ:
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম শনাক্ত করতে সচরাচর নিুলিখিত ক্রাইটেরিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক-
- নারীদেহে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন উপস্থিতির প্রমাণ।
- অনিয়মিত ঋতুগ্রাব।
- ডিম্বাশয়ে সিস্ট।

প্রতিরোধ: পিসিওএস একটি হরমোনজনিত প্রতিরোধযোগ্য, নিরাময়যোগ্য রোগ।যেহেতু একাধিক কারনে পিসিওএস জটিলতা তৈরী হয় তাই ব্যবস্থাপনাও বিভিন্ন দিক থেকে হতে হয়।
জীবনধারায় পরিবর্তন- যেমন ওজন কমানো এবং ব্যায়াম করা, এগুলিই হল এর প্রধান চিকিৎসা।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত পরিমিত শারীরিক শ্রম সম্পাদন এবং ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ও সময়মত পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পিসিওএস প্রতিরোধযোগ্য। প্রত্যেহ পর্যাপ্ত তাজা-সবুজ বা রঙিন শাক-সব্জি খাওয়া [আলু কোন সবজি নয়!], নিয়মিত সতেজ ফল খাওয়া (টক ও কম মিষ্টি ফলগুলো বেশি উপকারি), আমিষ বাড়িয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান কম খেয়ে পিসিওএস প্রতিরোধের ভিত্তিভুমি স্থাপন করা সম্ভব।

পিসিওএস আক্রান্তদের ওজন কমানো খুবই জরুরী, অনেক ক্ষেত্রে তা কষ্টকর হলেও। যদি ওজন পাঁচ শতাংশ কমাতে পারেন, তাহলে তাঁদের পিরিয়ড নিয়মিত হতে শুরু হতে পারে। আর ওজন ১০ শতাংশ কমাতে পারলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে। প্রচুর পানি/ মিষ্টিহীন জলীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে প্রতিদিন। সপ্তাহের সাতদিনই একই সময়ে- নিয়মে সকালের নাস্তা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায় বলে গবেষণায় প্রমানিত। আর সকালের নাস্তা গ্রহণ অনিয়মিত- অপরিমিত হলে ফলাফলও বিপক্ষেই যাবে।

একই সাথে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, উচ্চ রক্তচাপ কমানো গেলে, রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমালে পিসিওএস দূর হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।

সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন