ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে এক বাংলাদেশী দিনমজুরকে ধরে নিয়ে হত্যা করল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত ১৩ নভেম্বর রবিবার বিকেলে বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুপুরে খাবার শেষে ঘর থেকে বেরিয়ে যান মেজবাহার উদ্দিন (৪৭)। পরশুরাম পৌরসভাধীন বাঁশপদুয়া সীমান্তের কাছে (বাংলাদেশ অংশে) সে অন্যের জমিতে ধান কাটছিলেন। এমন সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে পিছন থেকে ডাকাডাকি করেন তাদের কাছে যেতে। কিন্তু মেজবাহার তাদের কথা না শুনে পিছু হাটেন। তখন বিএসএফ এর কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। পরে সীমান্তের ভিতর থেকে তিনটি গুলির আওয়াজ শুনা যায়। এ দৃশ্যটি ওই এলাকার কয়েকজন দুর থেকে দেখেন। তারা তখন ঘটনাটি বিজিবি ও পরশুরাম মডেল থানা পুলিশকে জানায়। সেই থেকে টানা তিনদিন মেজবাহারকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের তিনদিন পর ১৬ নভেম্বর বুধবার সকাল ১১টার দিকে বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকার ভারতের কাঁটাতারের ১শ গজ ভিতরে ৬৪নং পিলারের ৯-১০নং পিলারের পাশে ঝোঁপের ভিতরে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে লাশের বিষয় নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ এর মধ্যে দুই তিনবার বৈঠক হয়েছে এবং মেজবাহারকে ধরে নিয়ে যাবার বিষয়টি ভারতীয় বিএসএফ অস্বীকার করেন। এ বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসী ও কাউন্সিলররা একটি সূত্রে জানতে পারেন।
পরে পিলারের পাশে পড়ে থাকা লাশটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএফ ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন বলে জানা যায়। তবে
পরিবারের দাবী অন্যায়ভাবে বিএসএফ রবিবার বিকেলে মেজবাহারকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মেজবাহারের বড় মেয়ে মর্জিনা আক্তার মুন্নি কান্না জনিত কন্ঠে ইনকিলাবকে বলেন, আমার বাবা নিরিহ সহজ সরল মানুষ। তিনি মানুষের ক্ষেতখামারে কাজ করে সংসার চালান। আমরা ৪ বোন, আমি বিবাহিত,মেঝ বোন তাজনেহার মুক্তা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, বিবি হাজেরা রিক্তা ৫ম শ্রেনিতে পড়ে, জান্নাতুল নাঈমা শিশু শ্রেণিতে পড়ে। আমাদের ভাই নেই। আমাদের একমাত্র পরিবারের উপার্জক্ষম মানুষ চলে গেছে, আমার মা এবং আমার বোনদের কি হবে বলে হাউ মাউ কাঁদতে থাকেন। সে বলেন, আমরা বাবার লাশ চাই, আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। সরকারের কাছে আমাদের একটাই আবেদন।
স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন বলেন, আমরা সূত্রে জানতে পারি ভারতীয বিএসএফ সীমান্তের ভিতরে পড়ে থাকা লাশটি উদ্ধার করে বিলোনিয়া পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক বিজিবির সদস্য জানান, বর্তমানে ভারতীয় পুলিশের কাছে লাশটি আছে। লাশ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিএসএফকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএসএফ এ বিষয়ে মুখিকভাবে আজ সকাল ১০টার দিকে জানানোর কথা ছিল কিন্তু এখনো কিছু জানায়নি। এদিকে বাঁশপদুয়া এলাকার বাসিন্দা পরশুরাম ফাযিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মো: আবু সাঈদ ইনকিলাবকে বলেন, পরশুরামের বাঁশপদুয়া-কলাবাগান-ইসলামপুর গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার সীমান্ত এরিয়ায় বাংলাদেশের অংশে কোন বিজিবির ক্যাম্প নেই। এ তিনটি গ্রামের পাশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর তিনটি ক্যাম্প রয়েছে। তবে বাঁশপদুয়া থেকে বিজিবির ক্যাম্পের দুরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। তিনি বলেন, সেখানে তিনটি গ্রামে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ বসবাস করে। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সবসময় আমাদের বাংলাদেশের অংশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে সীমান্তবর্তী বসবাসরত মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে । তিনি আরো বলেন, বিজিবি সার্বক্ষণিক সীমান্তে পাহারায় নিয়োজিত থাকেনা। তখন বিএসএফ সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে থাকেন। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর উত্তর গুথুমা এলাকার দিনমজুর মেজবাহরকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে বিনাকারনে হত্যা করল ভারতীয় বিএসএফ। এটা খুবই অমানবিক। আজকে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ এখনো মেজবাহরের লাশ ফেরত দেয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিজিবির সাথে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে শুনেছি তবে এর কোন সমাধান হয়নি। আমি এ হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার দাবী করছি।
পরশুরাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পার্থ প্রতিম দেব বলেন, ভারতীয় বিএসএফ বিজিবির কাছে লাশ বুঝিয়ে দিলে তখন পরবর্তী পর্যায়ে আমাদেরকে দায়িত্ব দিলে আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন