যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রায় এক যুগেও স্থাপিত হয়নি। কলেজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৭টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ ক্লাশ করেছেন। এদিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয়ায় নতুন করে দীর্ঘসূত্রিতার মুখে পড়ল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিছুই জানেন না বলে জানান।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়। ২০১০-১২ সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তখন কলেজের কাজ চলত যশোর জেনারেল হাসপাতালে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে শহরের শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় হরিনার বিলে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজ ভবনে কার্যক্রম চালু হয়। ৭৫ বিঘার নিজস্ব ক্যাম্পাসের কলেজে বর্তমানে ইন্টার্নসহ চারশতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরেও এখানে চালু হয়নি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মহিদুর রহমান বলেন, মেডিকেল কলেজের সাথে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল থাকতে হবেই। এটি নিয়ম। যশোরে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ভারতের সাথে একটা চুক্তি ছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়েছে। এখন সরকারি তহবিলেই হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, জুলাই ২০১৮ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ‘৪ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ সময় কুতুবউদ্দিনকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। ১৪ মাস পর পর পিডি পরিবর্তন করে প্রফেসর ডা. মো. মাহবুবুর রহমানকে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার পর্যায়ে আকস্মিকভাবে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর পিছনে একটি অশুভ ইঙ্গিত দেখছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
সূত্র আরও জানায়, যমেক মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তাবনায় নতুন বেশকিছু সংযোজন করা হয়। এর মধ্যে ২১টি বিভাগের পরিবর্তে ৩১টি বিভাগে উন্নীত করা, ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলার অত্যাধুনিক প্রধান ভবনসহ সর্বাধুনিক মানের করার প্রস্তাব রয়েছে। এজন্য পূর্বে অনুমোদিত ২১০০ কোটি টাকার পরিবর্তে ২৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু প্রকল্পকে ঘিরে একটি অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। অশুভ এই চক্রের ইশারায় সর্বশেষ পিডিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল ফজল মো. খুরশিদ আলম কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, পিডিকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যিনি ছিলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কিনা আমার জানা নেই। কোনো প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলে তাকে সরানো যাবে না, প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর কেন তাকে সরিয়ে দেয়া হলো প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাশের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ ক্লাশে সমস্যা হয়, এটা ঠিক। আমি যশোরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান হেলাল উদ্দিন বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ সভায় ছোটখাটো কিছু সংশোধনী এসেছে। এগুলো চূড়ান্ত হবার পর মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন