শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভয়াবহ অবস্থার দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছে

হারুন-আর-রশিদ | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। উন্নয়নশীল এই দেশের চারকোটি মানুষ এখনো বেকার। এরমধ্যে দেড়কোটি শিক্ষিত বেকার। বাংলাদেশে দরিদ্র সংখ্যা ৫ কোটির উপর। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। এই শ্রেণির মানুষরাই বেশিরভাগ ট্যাক্স এবং ভ্যাট দিয়ে সরকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নৈতিকতাবোধ এবং সামাজিক অবস্থা এতোটাই নাজুক, যা বিগত ৫০ বছরে দেখা যায়নি। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের টাকা চুরি হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় এবং অপচিকিৎসায় প্রায় শতাধিক লোক প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দেশের হাসপাতালগুলোতে। চেম্বারে প্রাইভেট ডাক্তার দেখালে ১৫০০ টাকা গুনতে হবে। পাশাপাশি টেস্টে খরচ হবে কয়েক হাজার টাকা। হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে জমিজমা বিক্রি করতে হবে। এসব কারণে বাংলাদেশের ধনবান মানুষ সুচিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর যায়। রোগীদের পকেট কাটার মতো ব্যবস্থা সেসব দেশে নেই বললেই চলে। এই তিনটি দেশে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডায় প্রায় ৪ মাস থাকার সুযোগ হয়েছিল। এসব দেশের নাগরিকরা সত্যিই ভাগ্যবান যে, চিকিৎসার জন্য টাকা পয়সা তাদের খরচ করতে হয় না। দেশ স্বাধীন করলাম ৫১ বছর হয়ে গেল তারপরও চিকিৎসাখাতে চুরির ছিদ্রপথগুলো বন্ধ করতে পারিনি। এ প্রসঙ্গে এখন একটি গল্প বলি। মহাবীর আলেকজান্ডার তার সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে। আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার কফিন আমার চিকিৎসকরাই বহন করবে। আমার দ্বিতীয় অভিপ্রায় হচ্ছে, আমার কফিন যে পথ দিয়ে যাবে, সেই পথে আমার অর্জিত সোনো-রূপা ছড়িয়ে থাকবে। আর আমার শেষ অভিপ্রায় হচ্ছে কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রাখবে।

তার প্রধান সেনাপতি তখন তাকে এই বিচিত্র অভিপ্রায় কেন করছেন, প্রশ্ন করলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলেকজান্ডার বললেন, আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই। আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি এই কারণে, যাতে লোকে বলতে পারে চিকিৎসক মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারে না। তারা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তারা অক্ষম। যাবার পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে বলেছি এ জন্য, সোনা-দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ উপলব্ধি করুক, এসবের পেছনে ছোটা মানে সময়ের অপচয়। কফিনের বাইরে আমার হাত ঝুলিয়ে রাখতে বলেছি একারণে যে, মানুষ যাতে বুঝতে পারে, আমি পৃথিবীতে খালি হাতে এসেছি আজ খালি হাতেই চলে যাচ্ছি। অথচ, অর্থের পিছনে আমরা যেভাবে ছুটছি, সেভাবে যদি রাষ্ট্র নৈতিকতাবোধ সৃষ্টির চেষ্টা করতো তাহলে বাংলাদেশ স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতো।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা ৪-১০-২০২২ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভ্যাইরাল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ আসলে কত আছে তার প্রকৃত চিত্র জানতে পারছে না দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। দেশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার শুধু বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে আগামী ৫ মাস দেশের আমদানি মেটানো সম্ভব। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও কমে গেছে। দেশে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। দেশীয় মুদ্রার মান কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মানুষের আয়ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। মানুষ বিপদের মধ্যে আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই নাজুক। আগামী ২০২২/২৩ অর্থবছরে বাজেটে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে বাংলাদেশ। দাতা সংস্থা আইএমএফের লোন দিয়ে এবং সাধারণ মানুষের উপর চাপ প্রয়োগ করে ট্যাক্স আদায় করলে সেটা হিতেবিপরীত হবে। কারণ, বতর্মানে সাধারণ মানুষ জটিল অবস্থায় আছে। আমরা মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি। কথায় আছে, অন্যের চোখের জলে নিজের সুখ তৈরি করে বহু দূর যাওয়া যায় না। এবার পরিস্থিতিটা অত্যন্ত ঘোলাটে এবং ভয়ংকর হবে। প্রতিটি মানুষ তার কর্মের ফল পাবে। দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে দুটি বড় দলের হবে অগ্নিপরীক্ষা। যাদের মধ্যে মানুষ্যবোধ নেই, তারা হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক তাদের দিয়ে মনুষ্য সমাজে ভালো কিছু হওয়ার বা করার সুযোগ নেই। এ ধরনের মানুষই বিভ্রান্তিতে ভোগে। অর্থলোভী মানুষ নির্মোহ হতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, সবচেয়ে বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এদেশে। সরকার জিনিসপত্রের দাম যেভাবে ধার্য্য করছে, সেটা বিক্রেতেরা মেনে চলছে না। বিদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকে। আমাদের দেশে ৫১ বছর ধরে ব্যবসায়ীরা যেভাবে বাজার ব্যবস্থা পরিচালনা করছে সেভাবেই চলছে। বাজারব্যবস্থাপনায় এ ধরনের অনিয়ম বিশ্বে আর কোথায়ও আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের তরুণ এবং যুবক সমাজ তথা শিক্ষার্থীরা কতটা বিষণ্নতা ও হতাশাগ্রস্ত মানসিক রোগাক্রান্ত তা শুনলে হতবাক হতে হয়। চলতি বছরের (২০২২) প্রথম ৯ মাসে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ৪০৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে নারী শিক্ষার্থী রয়েছে ২৪২ জন। ৮ অকটোবর ‘এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি সংস্থা আচল ফাউন্ডেশনের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যায় প্রবণতা’ শীষর্ক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আগামী বছর গোটা বিশ্বে বৈশ্বিক মন্দায় আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশের অবস্থা তখন আরো ভয়াবহ হবে। বঙ্গবন্ধু তার শাসনামলে দুর্ভিক্ষের সময় ৪০,০০০ লঙ্ঘরখানা খুলতে বাধ্য হয়েছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেই অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখন দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু চাইলে আল্লাহ্ খুশি হন এমন কাজগুলো বেশি বেশি করা উচিত।

ভবিষ্যতে দেশ কী রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর সায়মা হক বলেছেন, র্দীঘমেয়াদি রফতানি আয় কমে যেতে পারে। এর ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম অসহনীয় পর্যায় চলে যাবে। এ কারণে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়বে। রেমিট্যান্স থেকে যে আয়, তাও কমবে। সামনের দিনগুলোতে সমস্যা আরো বেগতিক হবে। বাংলাদেশ যেসব পোশাক রফতানি করে সেগুলো খুব উচ্চমূল্যের নয়। বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে খাদ্য মূল্যসফীতিতে সেটি প্রভাব ফেলবে। ফলে আমদানি করা পণ্যসমূহের দাম অত্যধিক হারে বাড়বে। তবে কৃষি আর রেমিটেন্সে প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ যথার্থভাবে নিতে পারলে মন্দার চাপ কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করি। একই সঙ্গে চলতি বছর ডলারের চলমান সংকট মোকাবিলায় যেভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে ঢাকার ব্যস্ত এলাকায় ৪/৫ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার অবনতি ঘটছে। পাশাপাশি উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এর ফলে শিল্পপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়। রেন্টাল-ক্ইুক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনসহ বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয় এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং লোডশেডিং কমে যায়। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেয়। সরকারের কথার সাথে কাজের সামঞ্জস্য না থাকায় বর্তমানে গ্রামগঞ্জ-শহর-বন্দর সব জায়গায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। কিছুদিন আগেই সরকার বলেছিল লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ, এখন ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

লেখক: গ্রন্থকার ও গবেষক।
harunrashidar@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোস্তফা গোলাম ২২ নভেম্বর, ২০২২, ৯:০৮ এএম says : 0
৭৪ দুর্ভিক্ষের পদায়ন অতিক্রম করে এগিয়ে চলার পথে মহা দুর্ভিক্ষের পদায়ন অনুসরণ করে দেশের সব কিছুই শূন্য আরণ্যক করে দেউলিয়া দশা পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে আঃ লীগ সরকার ও আঃ লীগ দল। আগেও আঃ লীগ সরকার বর্তমানে আঃ লীগ সরকার। তবুও আঃ লীগের সাথে সাথে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক আঃ লীগ সরকার এর লোকজন ছাড়া বাকি সবাই ৯০% জনগণ খুদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে । তবুও বলতে হবে দেশ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহৎত ধনীর তালিকা। অদ্ভুত রহস্যময় পৃথিবীর এক মাএ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
Anim Khan Sameha ২২ নভেম্বর, ২০২২, ৯:০৮ এএম says : 0
বাংলাদেশ এর বর্তমান পরিস্থিতি সত্যি খারাপ..এবং ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ
Total Reply(0)
hassan ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ১০:২১ পিএম says : 0
ইহা আল্লাহ এই দেশদ্রোহী আহ্লাদমনি সরকার আমাদের দেশটাকে একদম আল্লাহদ্রোহী সরকার আমাদের দেশটাকে একদম ধংস করে দিয়েছে তারা আমাদের পরে জঘন্যতম অত্যাচার করে জঙ্গী নাটক সাজিয়ে হাজার হাজার মানুষকে নির্দয় ভাবে হত্যা করে ভুল করে ফেলে গুম করে ফেলে হেফাজতে ইসলামের নিরীহ হাজার হাজার ছেলেদের কে গুলি করে হত্যা করে সাতান্ন জন আর্মি অফিসারদের কে হত্যা করে দেশপ্রেমিকদের কে ধ্বংস করে দেয় ইন্ডিয়ার হাতে আমাদের দেশকে তুলে দিয়েছে আমাদের দেশের সব টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে ইয়া আল্লাহ তুমি এদেরকে ধ্বংস করো এ আল্লাহ তুমি এ জালেমদেরকে ধ্বংস কর আমাদেরকে বাচায় জালেমের হাত থেকে এবং তোমার জমিনে তোমার আইন দিয়ে দেশ শাসন করো তাহলে আমরা একটু সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন