১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ড এইডস ডে হলো এইচ.আই.ভি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপযুক্ত সময়। দিবসটি পালিত হয় সারা বিশ্বে এইচ.আই.ভি ভাইরাসের সাথে লড়াই করে যারা বেঁচে আছেন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এইডস আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের স্মরণ করার জন্য। মানবাধিকারের বিভাজন, বৈষম্য এবং উপেক্ষা এইচ.আই.ভি জয় করার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই ২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড এইডস দিবসের মূল থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয়“ পুটিং আওয়ারসেলভস্ টু দ্যা টেষ্ট: আচিভিং ইকুয়ালিটি এন্ড ইন্ড এইচআইভি”। সহজ বাংলায় বলতে গেলে সবাইকে টেস্টের আওতায় আনতে হবে। সমতা অর্জন করে এইচ.আই.ভি শেষ বা নির্মূল করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারন মানুষের জন্য অসমতা দূর করে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অসাম্যের সমাপ্তি না ঘটাতে পারলে এইডস বা এইচ.আই.ভি শেষ বা নির্মূল করা যাবে না। এইচ.আই.ভি ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত সঞ্চালন, এইচ.আই.ভি আক্রান্ত সুই এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এছাড়াও এইচ.আই.ভি বহনকারী মহিলা থেকে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবকালীন সময়ে তার সন্তানের নিকট এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এইডস তখনই হয় যখন এইচ.আই.ভি সংক্রমনের কারনে কারো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। সবার সচেতনতার জন্য এইচ.আই.ভি সংক্রমনের কিছু লক্ষন জানা প্রয়োজন যা নিম্নরুপঃ
(ক) দ্রুতগতিতে ওজন কমে যাওয়া এবং অনবরত দুর্বলতা অনুভব করা। এটি ওয়াসটিং সিনড্রোম নামে পরিচিত।
(খ) স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া। ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে ব্রেনের সংক্রমনের কারনে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। এটি এইচ.আই.ভি এনসেফালোপ্যাথি নামে পরিচিত।
ওয়াসটিং সিনড্রোম এবং এইচ.আই.ভি এনসেফালোপ্যাথি উভয়ই এইডস সংজ্ঞায়িত বা সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা।
(গ) রাতের বেলায় শরীর প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া।
(ঘ) কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
(ঙ) এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া থাকলে।
(চ) জিহ্বা বা মুখের ভিতর ব্যাতিক্রমধর্মী দাগ দেখা দিলে।
এইচ.আই.ভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এইচ.আই.ভি আক্রান্তদের তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি মানুষের মুখে সমস্যা থাকে। এটি হয়ে থাকে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থার কারনে।
এইচ.আই.ভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যার লক্ষন সমুহঃ
১। ওরাল ক্যান্ডিডোসিস
২। বার বার মুখে অ্যাপথাস আলসার
৩। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া
৪। জ্বরঠোসা
৫। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমন
৬। শুষ্ক মুখ যার কারনে দাঁতে ক্ষয় হয়। জিহ্বা বা মুখে কালো অথবা সাদা বিশেষ ধরনের দাগ।
এইচ.আই.ভি সংক্রমন থেকে ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার হতে পারে। ক্যাপোসিস সারকোমা ত্বকে, মুখে, অন্ত্রে অথবা শ্বাস নালীতে হতে পারে। এইডস লিম্ফোমার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে। লিম্ফোমা এক ধরনের ক্যান্সার যার সাথে শ্বেত রক্তকনিকা জড়িত। তার মানে এই নয় যে, মুখের এবং শরীরের লক্ষন সমূহ দেখা দিলেই কেউ এইচ.আই.ভি আক্রান্ত হয়েছেন বা এইডস রোগ আছে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। এক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। এইচ.আই.ভি পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনার এইডস রোগ হয়ে গেছে। এমন অনেক মানুষ দেখা গেছে যারা এইচ.আই.ভি পজেটিভ কিন্তু অনেক বছর তাদের কোন লক্ষণই দেখা যায়নি। তাই এ ধরনের কোনো সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
এইডস আক্রান্ত রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এইচ.আই.ভি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ভাইরাস যেন এইডসের দিকে অগ্রসর হতে না পারে বা যাদের এইডস হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এ.আর.টি থেরাপি অর্থাৎ এন্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এন্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি এইডস রোগীর উপর কাজ করলে রোগীর ওজন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এইচ.আই.ভি এবং এইডস উভয় ক্ষেত্রেই এ.আর.টি থেরাপি আপনাকে স্বাস্থ্যবান রাখে। থেরাপির পরে যদি রোগীর ওজন বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে চিকিৎসা কাজ করছে।
তাই বাঁচতে হলে শুধু জানলেই হবে না, অন্যকে জানানোর মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে হবে। এইচ.আই.ভি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষার আওতায় সবাইকে আনতে হবে। অসমতা দূর করতে হবে এবং এইডস নির্মূল করতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইলঃ ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন