আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কথা বলা নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই তা চলে আসছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র এবং অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তারা বরাবরই কথা বলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকতেই প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সংস্থা বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য একটাই, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এই গ্রহণযোগ্যতার কথা বলতে গিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত উদাহরণ হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ কর্তৃক ব্যালট বাক্স ভর্তি করার উদাহরণও টেনেছেন। তার এ বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়া নিয়ে রাষ্ট্রদূতরা যে বক্তব্য দিচ্ছেন, স্বাভাবিক কারণেই তা সরকারের বিপক্ষে যায়। সরকার বিব্রত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করে। রাষ্ট্রদূতদের এমন বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত বলে আখ্যায়িত করে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন এমন মন্তব্য করবেন? কেনই বা জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার কথা বলবেন? তাদের এখতিয়ারই বা কি? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, শুধু রাষ্ট্রদূতরাই নন, দেশের সাধারণ মানুষও জানে, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে এক্ষেত্রে তাদের চাওয়া এবং মন্তব্য করার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, বিশ্ব এখন গেøাবাল ভিলেজ। কোথায় কি হচ্ছে, তা দেখা ও মনোযোগ দেয়া প্রত্যেকের দায়িত্ব। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও গণতান্ত্রিক দেশ এবং সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তারা তো বেশি করে চাইবে যে, এখানে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটুক। গণতন্ত্র দৃঢ় হোক এবং গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক।
দুই.
সরকারের বিপক্ষে যায়, রাষ্ট্রদূতদের এমন মন্তব্য নিয়ে সরকারের তিরস্কার এবং সরকারের পক্ষে যায় এমন মন্তব্য নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে বিরাজমান। যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দল রাষ্ট্রদূতদের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ক্ষমতা থেকে চলে গেলে সে-ই আবার রাষ্ট্রদূতদের কাছে ধর্ণা দিতে ছুটে যায়। এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে রয়েছে। ’৯৬ সালে নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কমন ওয়েলথের মহাসচিব স্যার স্টিফেন নিনিয়ান এসেছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সমঝোতার দূতিয়ালি করতে, যদিও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে তিনি যখন আসেন, তখন কিন্তু এ নিয়ে কেউই আপত্তি করেননি। ২০০৭ সালে তত্তাবধায়ক সরকার ইস্যুতে জাতিসংঘে শান্তি মিশনে এদেশ থেকে এক উড়ো চিঠি দেয়ার কারণে আর্মি ব্যাকড ওয়ান ইলেভেন সরকার গঠিত হয়েছিল বলে জোর প্রচারণা রয়েছে। এখানেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছিল এবং তা প্রকাশ্যেই ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের প্রকাশ্যে তৎপরতা চালানোর বিষয়টি সবার জানা। ২০১৩ সালে তত্তাবধায়ক সরকার নিয়ে যখন বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল আন্দোলন-সংগ্রামরত এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন নির্বাচনে যাবেন না বলে গোঁ ধরে বসেছিলেন, এমনকি কেউ তাকে নির্বাচনে নিতে এলে আত্মহত্যা করবেন বলে পিস্তল নিয়ে বসেছিলেন, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হঠাৎ এসে সব দৃশ্যপট পাল্টে দেন। তিনি আসার সাথে সাথেই এরশাদকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রচারণা রয়েছে, হাসপাতালে রেখেই এরশাদকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি এরশাদ নমিনেশন পেপারে সই না করলেও তার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করে বিজয়ী করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এরশাদ এসব কথা বললেও তা ধোপে টিকেনি। বরং তার দল নির্বাচনে গিয়ে সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসেছিল। বলা হয়ে থাকে, সেদিন যদি ভারত নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করত, তাহলে দৃশ্যপট বদলে যেত। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ত। নিকট অতীতে বিদেশী রাষ্ট্রের এমন হস্তক্ষেপের নজির খুব কমই রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূতরা যখন তৎপরতা শুরু করেছে, তখন কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের তা পছন্দ হচ্ছে না। অথচ ২০১৩ সালের নির্বাচনে ভারত যে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কোনো টুঁ শব্দ নেই। অর্থাৎ রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে গেলে তা নিয়ে কোনো কথা নেই। বিপক্ষে গেলেই তা ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত’ আচরণ এবং আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, বিরোধীদলের কাছে তা উচিৎ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রশংসিত হয়। এ বছরই বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়ার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রয়েছে। চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত খোলামেলাভাবে বলেছিলেন, তিনি ভারত গিয়ে দেশটির সরকারকে বুঝিয়ে বলেছেন, বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার ভারতের তা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও তিনি অনুরোধ করেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশগ্রহণ করে, এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে। বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়ার এর চেয়ে বড় অবমাননাকর বিষয় আর কি হতে পারে! অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক আচরণ জোরালো নয় এবং যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার মনোভাব প্রবল। ফলে ক্ষমতায় থাকতে এবং যেতে তারা বরাবরই বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে যে তৎপরতা ও বক্তব্য শুরু হয়েছে, তার জন্য অন্য কেউ নয়, ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলগুলোই দায়ী। কথিত আছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ভারত। ভারতের নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থনের কারণে নিজের অধীনে লোকদেখানো নির্বাচন করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে পেরেছে। সচেতন যে কেউ পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবে, আগামী নির্বাচন নিয়ে এখন ভারতের তেমন তৎপরতা ও বক্তব্য নেই। আগে মাঠে ভারতকে দেখা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদেশগুলোকে নীরব দেখা গেছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার মাঠে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দেশ ও সংস্থাগুলো মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এতে প্রতীয়মান হয়, ভারত এখন নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তার এই নীরবতা প্রমাণ করছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য যে কথা বলেছে, তাতে তার সমর্থন রয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় ধরনের অভিঘাত। ইতোমধ্যে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিগত দুটি নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছে, এখন তারা নিজের দৃষ্টি দিয়ে দেখছে বলেই অধিক তৎপর হয়ে উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারত যদি ক্ষমতাসীন দলকে নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দিয়ে না যেত, তাহলে তার পক্ষে ক্ষমতায় থাকা কঠিন হতো। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীন দল বিদেশীদের কাছে ধর্ণা ধরে ছিল।
তিন.
রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার আকাক্সক্ষা থাকাই স্বাভাবিক। তবে এতে নিজের সক্ষমতা এবং জনসমর্থনের ভিত্তি থাকতে হয়। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের উভয় সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও শুধু গণতান্ত্রিক আচরণগত সমস্যার কারণে তাদের ক্ষমতা থাকা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশী বা তৃতীয় শক্তি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায় কিংবা তাদের আহবান জানানো হয়। ক্ষমতায় গিয়েই তারা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিবর্তে একধরনের জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে। বিরোধীদলকে শায়েস্তা ও হেনস্তা করে জনমতকে উপেক্ষা করে। অথচ আমাদের দেশে জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা কখনোই টিকেনি। সামরিক-বেসামরিক, যে শাসন ব্যবস্থাই চলুক না কেন, তা জবরদস্তিমূলক হলে টিকে থাকতে পারেনি। এ ধরনের সরকারগুলো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থায় জনগণকে ধাতস্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলায়। বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিগত চৌদ্দ বছর ধরে তার মতো করে শাসনব্যবস্থায় জনগণকে ধাতস্ত করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য জনগণকে শিশুদের মতো কনভিন্স করার জন্য উন্নয়ন নামক চকলেট দেয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তার এই প্রক্রিয়া আদতে কি কোনো কাজ করছে? করছে না এবং ক্ষমতাসীন দলও তা মনে করছে না। সে যদি তা মনে করত, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করত। তখন বোঝা যেত জনগণ তার এই ধাতস্ত করার শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, কি করেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের জনগণ এমন যে, তারা পুরো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাটাই চায়। যতই উন্নয়নের চকলেট তাদের সামনে তুলে ধরা হোক না কেন, তা তারা গ্রহণ করবে বটে তবে তার গণতন্ত্রটা লাগবেই। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়নকে গ্রহণ করে না। যদি তা করত, তাহলে আইয়ুব খানের শাসনামল টিকে থাকত। জনগণ আইয়ুবীয় উন্নয়ন তত্তে¡ সাড়া না দিয়ে গণতন্ত্রকেই বেছে নিয়েছিল এবং তার পতনও ঘটিয়েছিল। স্বাধীনতার পর যে সরকারই আইয়ুবীয় পথে হেঁটেছে জনগণ তাদের গ্রহণ করেনি। এর ফলে যা হয়েছে তা হচ্ছে, বিদেশীরা আমাদের শাসন ব্যবস্থায় কে আসবে, কে যাবে তা নির্ধারণের মতো অনধিকার চর্চা করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া আমরা যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ নানা ক্ষেত্রে নির্ভরশীল, সেহেতু তারা কথা বলবে, খবরদারি করবে- এটা সহজাত প্রবৃত্তি হওয়া স্বাভাবিক। তা নাহলে, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতি পাবে না। আমরা যতই বলি, উন্নতি করছি এবং নিজের পায়ের উপর দাঁড়াচ্ছি, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তার পেছনে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আবার এই উন্নতির স্বীকৃতিও তাদের কাছ থেকেই পেতে হয়। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার যে বিষয়টি, তা তো তাদের স্বীকৃতির কারণেই হয়েছে। ফলে আমাদের দেশে তাদের কম-বেশি কিংবা পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে খবরদারির বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিক আচরণই তাদের এ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যদি এমন হতো, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতালিপ্সু না হয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রকৃত রায়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা-যাওয়ার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতো, তাহলে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কথা বলার সুযোগই থাকত না। আমাদের রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের গোয়ার্তুমি এজন্য মূলত দায়ী।
চার.
এটা ক্ষমতাসীন দলের একজন সাধারণ সমর্থকও জানে, তার দলের অধীনে যেকোনো নির্বাচন হলে তার বিজয় ছাড়া অন্য কারো বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগ বলে কথা নয়, এখানে বিএনপি বা অন্যদল থাকলেও একই ঘটনা ঘটত। এমন এক অগ্রহণযোগ্য ও অপসংস্কৃতির রাজনীতি আমাদের দেশে চলছে। আমরা এমনই এক জাতি যে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পদ্ধতি চালু করতে পারিনি। মাঝে তিনটি নির্বাচন সর্বজনগ্রহণযোগ্য হলেও তার প্রক্রিয়াটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এখন বিরোধীদলগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এ কথাও বলছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য তারা যুগপৎ আন্দোলন করবে এবং নির্বাচনে জিতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও বারবার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন। আবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা ক্ষমতাসীন দলও বলছে। তবে সে নির্বাচন তার অধীনে হতে হবে। আগেই বলা হয়েছে, আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের মধ্যে এমন কোনো গণতান্ত্রিক মানসিকতা গড়ে উঠেনি যে, নিজের অধীনে নির্বাচন করে পরাজিত হবে এবং পরাজিত হলে বিরোধীদলকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে। এ মানসিকতা কল্পনার বাইরে রয়ে গেছে। অন্যদিকে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বছরের পর বছর ধরে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বিরাজমান, তাতে উন্নয়ন সহযোগী বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থারও উদ্বেগ থাকার কথা। প্রথমত বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে তারা চাইবে না, বন্ধুর ঘরে অশান্তি থাকুক। দ্বিতীয়ত, স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের দেশে তার যে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা রয়েছে তা নষ্ট হোক, তা চাইবে না। কে চাইবে, দুইজনের ঝগড়া-ঝাটির মধ্যে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে? যেহেতু দুইজনের ঝগড়ার কারণে তার স্বার্থ বিঘিœত হবে বা হচ্ছে, শুধু তারাই এগিয়ে গিয়ে ঝগড়া থামাতে চাইবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূতরা যে তৎপরতা ও বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, তা তাদের স্বার্থে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। যদি তাদের তৎপরতা থামাতে হয়, তাহলে অবিলম্বে ক্ষমতাসীনদল ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক মানসিকতা ধারণ করতে হবে। বাস্তবতা তো এই যে, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে উড়িয়ে দিতে পারবে না, বিএনপিও আওয়ামী লীগকে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এ বাস্তবতা উভয় দলকেই মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে। জনগণকে ধাতস্ত করার শাসনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন