বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তিতে লাখো যাত্রী

১০ দফা দাবিতে নৌ-শ্রমিকদের কর্মবিরতি খাঁ খাঁ করছে সদরঘাট, বিভিন্ন জেলার লঞ্চঘাটগুলো থেকে কোনো লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ছে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পদ্মা সেতু চালু হলেও এখনো দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের রাজধানী ঢাকা যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ লঞ্চ চলাচল করে। বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালি, চাঁদপুর জেলার ঢাকায় কর্মরত নিম্নআয়ের মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। একই সঙ্গে খরচ কম হওয়ায় লঞ্চেই পণ্য আনা-নেয়া করেন। কিন্তু নৌযান শ্রমিকদের ডাকে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বেতনসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে আছে ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী নৌযানগুলোও। সকাল থেকে লঞ্চ ছেড়ে না যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। ইনকিলাবের প্রতিনিধিরা জানান, বরিশাল, চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালিসহ বিভিন্ন জেলায় ঢাকায় আসার জন্য মানুষ ঘাটে এসে লঞ্চ বন্ধ থাকায় দুর্দশায় পড়ছেন।

জানতে চাইলে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, নৌযান শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারা দেশের নৌযান শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন, শতভাগ শ্রমিক অংশ নিয়েছেন। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়া হলে আমরা কর্মসূচি তুলে নেবো।
লঞ্চমালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. বদিউজ্জামান জানান, শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে কোনো লঞ্চ চলাচল করছে না। এতে মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহণ পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, শনিবার রাত থেকে বিভিন্ন রোডের ৩৫টি লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাটের পন্টুনে ভিড়েছে। গতকাল সকালে ১০টি লঞ্চ এবং রাতে অনেকগুলো লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল একটাও ছেড়ে যায়নি। শুধু সকালে একটি লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

নৌযান শ্রমিকরা জানান, তাদের (নৌযান শ্রমিক) বেতন সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে; ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে; বাল্কহেডের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে; বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহণ নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে; চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে; চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে; কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে; বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহণ নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটি এর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, নৌযান শ্রমিকেরা ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছেন। এতে ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের জন্য লঞ্চমালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
শ্রমিকরা বলছেন, সব সেক্টরে বেতন বাড়ে, অথচ নৌশ্রমিকদের বেতন বাড়ছে না, জীবনের নিরাপত্তা নেই। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বেঁচে থাকার জন্যই আমরা ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছি।

৫ বছরের মেয়েকে সেলিনাকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদপুরগামী লঞ্চে উঠতে সকালে সদরঘাটে এসেছেন ফুলজান বেগম। তিনি ধর্মঘটের ব্যাপারে জানতেন না। ফুলজান বেগম বলেন, উত্তরখান থেকে সকাল ৮টায় টার্মিনালে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। লঞ্চের লোকজনও বলছেন না, কখন লঞ্চ ছাড়বে। ভাবছি বাসে চাঁদপুর চলে যাব। কিন্তু বাসে তো ভাড়া বেশি লাগে। গতকাল রোববার সদরঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যে ঘাটে হাজার হাজার মানুষের কর্মচঞ্চল্যের জন্য পা ফেলা যেতো না, সেটা ফাঁকা। কিছু মানুষ গন্তব্যে যেত ঘাটে আসলেও ফাঁকা পড়ে আছে পন্টুন। শ্যামবাজার ঘাটে জড়ো করে রাখা হয়েছে লঞ্চ। অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে টার্মিনাল এলাকা, নেই নৌশ্রমিকদের উপস্থিতি। কর্মবিরতির বিষয় না জানা থাকায় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রীরা। সদরঘাট থেকেই অনেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে করে রওনা দিচ্ছে গন্তব্যে। চাঁদপুরে মাইক্রোবাসে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা ও পিকআপ ভ্যানে ৪০০ টাকা।

রামপুরা থেকে শহীদুল্লাহ এসেছেন চাঁদপুর যাওয়ার জন্য। ঘাটে এসে লঞ্চ ছাড়বে না জেনে মাইক্রো বাসে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে তার পক্ষে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় অপেক্ষা করছেন যদি লঞ্চ ছাড়ে সে প্রত্যাশায়। তবে রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে আসা মোছা. ইসমত আরা নার্গিস বলেন, চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। বাসে আসতে ২ ঘণ্টা লেগেছে। এসে দেখি লঞ্চ নেই। ঢাকায় এসেছি ডাক্তার দেখাতে। বাসে চড়তে পারি না। সঙ্গে দুই বছর বয়সি ছেলে রয়েছে, বাসে অস্থির হয়ে যায়। এখন কিছু করার নেই। যাত্রাবাড়ী গিয়ে বাস পাই কি না দেখতে হবে।

মুগদা এলাকা থেকে আসা মো. মেহেদী হাসান বলেন, চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। এখন বাসে যাবো ভাবছি। আগেভাগে জানা থাকলে ভোগান্তি হতো না। তবে বাস ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকেই বলছেন তাদের বাসে যাওয়ার টাকা নেই।
গত শনিবার রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার বাদামতলী ফলের বাজারে ফল কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি নিয়মিত এই বাজার থেকে ফল কিনে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ যান। তবে হঠাৎ করে ধর্মঘটে তিনি বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জ যাব। সকালে এসে দেখি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তবু মালামাল নিয়ে ঘাটে বসেছিলাম। এখন বিকল্প উপায়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, আমাদের দাবি কোনো অযৌক্তিক নয়। শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে একাধিকবার নৌ মালিক নেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করেনি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সদস্য ও লঞ্চ মালিক গাজী সালাউদ্দিন বলেন, নৌযান শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। এ নিয়ে লঞ্চ মালিকপক্ষ আলাপ-আলোচনা করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে মালিক সমিতিকে না জানিয়ে শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের আন্দোলন করা ঠিক না।
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চ না চললে আমাদেরও লোকসান হয় শ্রমিকদেরও লোকসান হয়। আমরা চাচ্ছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির ফলে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা নেমে এসেছে। বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এ কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। গত ১৫ নভেম্বর লাগাতার এ কর্মবিরতির কর্মসূচি দেয় পরিষদ। এর ফলে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার মধ্যরাত থেকে কর্ণফুলী নদীর ১৭টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত ৫২টি মাদার ভ্যাসেলের মধ্যে ৩২টি থেকে পণ্য খালাস হওয়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় জাহাজগুলো অলস বসে আছে। কর্ণফুলী নদীতেও অলস বসে আছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার। কর্ণফুলীর ঘাটগুলোতে নেই পণ্যবাহী ট্রাকের জটলা। গুদাম, আড়তে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অন্তত এক হাজার লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বর্হিনোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে। এরপর নৌরুটে বিভিন্ন গন্তব্যে সেসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ঈছা মিয়া জানান, তিনটি মূল দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন মিলে শনিবার বৈঠক করে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের ব্যানারে দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের ডাক দেওয়া হয়।

নৌযান শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি সাত হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছিলেন। গত বছরের জুন মাসে মজুরি বাড়ানোর কথা দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই তারা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিন দফা মূল দাবির মধ্যে আছে- নৌযান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, মৃত্যুকালীন ভাতা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ এবং ভারতের বন্দরে ল্যান্ডিং পাস দেওয়া। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, শ্রমিকদের বেতন, মজুরি বৃদ্ধিসহ ১০ দফা সারাদেশের মতো খুলনায় নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। ফলে খুলনা থেকে দক্ষিণের দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরা রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী লঞ্চও। গতকাল রোববার সকাল খুলনা বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ ঘাটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিকরা। খুলনা নৌ-যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য মো. ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমানে একজন শ্রমিক সর্বনিম্ন৭ হাজার ৭৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। প্রতিদিন ২৩৩ টাকা তাদের মজুরি। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকরা সংসার চালাতে পারছে না। তারা বার বার মালিকদের কাছে দাবি জানিয়ে আসলেও কর্ণপাত করছে না। বেতন বৃদ্ধি করছে না। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগের বেতন কাঠামো এখনও চলছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজার সম্পর্কে সবারই জানা আছে। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংগ্রাম-কর্মবিরতি করা ছাড়া তাদের আর কোন গতি নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, একাধিক দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের অবিরাম ধর্মঘটে অচল দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ। নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩০টি নৌপথে নৌযান ধর্মঘটে স্বাভাবিক জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। শুধু বরিশাল নৌ বন্দর থেকেই প্রায় ১৫টি নৌপথে ধর্মঘটে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থাও অচলবস্থার সম্মুখিন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মব্যস্ত বরিশাল নদী বন্দরসহ মূল টার্মিনালে গতকাল দিনভরই ছিল শুনশান নিরবতা। এমনকি অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট ছাড়াও এখনো সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখি সিংহভাগ যাত্রী নৌপথেই চলাচল করলেও গতকাল সকালে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আরো ২টি নৌ বন্দরসহ ৫০টিরও বেশি লঞ্চঘাটে বেসরকারী নৌযানগুলো যাত্রী নামিয়ে ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। ফলে ঢাকা ছাড়াও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের যাত্রীদের দূর্ভোগের সীমা নেই। ধর্মঘট নৌযান শ্রমিকরা গত দুদিন ধরে বরিশাল নৌ বন্দরসহ মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিলও করছে তাদের দাবির সমর্থনে।

অভয়নগর (যশোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নৌ-যান শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। যে কারণে সারাদেশের ন্যায় গতকাল রোববার থেকে যশোরের নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরেও পালিত হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। ফলে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ঘাট সমূহে লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে বন্দরের কার্যক্রম। চলমান কয়লার মৌসুমে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। ফলে চলমান মৌসুমে এমন কর্মবিরতির ডাক দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে সারাদেশের ন্যায় নওয়াপাড়া নদী বন্দরে কর্মবিরতির বাস্তবায়নের লক্ষে নওয়াপাড়া নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় যশোর-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন। এদিকে ভরা মৌসুমে নৌ-যান শ্রমিকদের ডাকা এ কর্মবিরতিতে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা আশঙ্কা করছেন, চলমান কয়লা ও সারের মৌসুমে নৌ-যান শ্রমিকদের ডাকা এ অনির্দিষ্ট কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হলে মুখ থুবড়ে পড়বে নওয়াপাড়া নদী বন্দর। ইতিমধ্যে লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ রয়েছে। কর্মহীন সময় পার করছে অভয়নগর নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের হাজার শ্রমিক। বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভয়নগর নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, নৌ-যান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বন্দর এলাকায় লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজার হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিককে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। সেই সাথে তাদের প্রতিদিনকার উপার্জনও বন্ধ হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়বে শ্রমিক পরিবার গুলোর উপর।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দেশের একমাত্র কৃত্রিম চ্যানেল গাবখান থেকে কার্গো চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ কর্মবিরতিতে নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা সড়কপথে গন্তব্যে চলে গেলেও মালামাল নিয়ে ছোট বড় কার্গো জাহাজ ভিড়ছে না তীরে, যাচ্ছে না গাবখান চ্যানেল হয়ে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা বন্দরে। ঝালকাঠির সুন্দরবন ১২ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. হারুন জানান, সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। দাবিগুলো যতদিন মানা না হবে, ততদিনই নৌযান ধর্মঘট চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন