রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিষ্টেম লস কমিয়ে পরিচালন মুনাফায় ওজোপাডিকে পাইকারী পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি আর্থিক ভীত দুর্বল করার আশংকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ২:০৫ পিএম

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলে ১৫ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে ‘ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী’ পরিচালন মুনফা অর্জন করছে। পিডিবি’র কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরনের মাধ্যমে পরিচালন মুনফা অর্জনের মত দুরুহ কাজ সম্পাদন করলেও সম্প্রতি বিদ্যুতের পাইকারী মূল্য বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির আর্থিক ভীত দূর্বল হবার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এমনকি অনেক দুরুহ হলেও নিকট অতীতে প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেম লস ৩৫-৪০% থেকে এখন ১০%-এর নিচে নেমে এসছে। ফলে বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ অপচয় ও চুরি রোধ করাও সম্ভব হয়েছে। যা দেশের বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ভীতকে টেকসই করতেও যথেষ্ঠ সহায়ক ভ’মিকা পালন করছে।

ওজোপাডিকো বছরে প্রায় ১৬Ñ২০ কোটি টাকা কর প্রদান করছে। এর বাইরে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর গ্রাহক পর্যায়ে পরিষোধিত ভ্যাটও সরকারী কোষাগারে নিয়মিত জমা দিয়ে আসছে ওজোপাডিকো। এমনকি পূর্ববর্তি বছরের তুলনায় গত অর্থ বছরে কোম্পানিটির বিদ্যুৎ আমদানী ও বিক্রীর পরিমানও বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ বছরে কর্মচারী কল্যান তহবিলে প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রদানের জন্য তহবিল সংরক্ষিত রেখেছে।
২০০৫ সালে পরিচালন কার্যক্রম শুরুর পরে ওজোপাডিকো দ্রুত সিস্টেম লস উল্লেখযোগ ভাবে হ্রাস করার পাশাপাশি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। তবে এখনো গ্রাহক সেবার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্খিত মান অর্জন করতে পারেনি বলে অভিযোগ থাকলেও কতৃপক্ষ এলক্ষে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন। বর্তমানে এ অঞ্চলের ২১টি জেলা ছাড়াও ২০টি উপজেলায় প্রায় ১৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ পৌছে দিচ্ছে ওজোপাডিকো। এমনকি সাগর বক্ষের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলা সদরেও নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবারহ করছে কোম্পানিটি। চলতি অর্থ বছরেই দেশের অন্যতম বৃহত এ ব-দ্বীপটির ঘরে ঘরে অফ-গ্রীড সোলার সিস্টেমে মনপুরার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছে দেয়ার লক্ষেও কাজ করছে ওজোপাডিকো।
সরকারী নীতিমালার আলোকে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরনের দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কাছে থাকলেও শুরু থেকেই এ অঞ্চলের ২০টি উপজেলায় ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ সরবারহ ও বিতরন করে আসছে। এসব উপজেলাতেও সিস্টেম লস উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়ে এখন ১০%-এর কাছে পীঠে।
ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ বিভাগের পশ্চিম জোনকে ৬টি সার্কেলে ভাগ করে তত্ববধায়ক প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ৪৮টি বিতরন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির এখনো পাাইকারী ক্রয় মূল্যেই প্রায় ৯০% বা ১৩ লাখ আবাসিক গ্রাহকেক বিদ্যুৎ সরবারহ করছে। এর বাইরে ০.৪ কেভি থ্রি-ফেজ গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারের মত। যা মোট গ্রাহকের মাত্র ১১.৪৫%। কিন্তু কোম্পনিটির ১১ কেভি গ্রাহক সংখ্যা হাতে গোনা দেড় হাজারেরও কম। যে হার মাত্র ০.০৯৫%। আর সমগ্র পশ্চিম জোনে কোম্পানিটির ৩৩ কেভি গ্রাহক আছে মাত্র ২৪টি। যা মোট গ্রাহকের ০.০০১৭%।
কোম্পনিটি পিজিসিবি’র গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে ১ হাজার ৮৮৪ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রহন করে ৭৬টি ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশন থেকে ১০ হাজার ৬১০ কিলোমিটার ১১ কেভি, ১১/০.৪ কেভি ও ০.৪ লাইনের লাইনের মাধ্যম গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহ করে থাকে। বর্তমানে এ অঞ্চলের ২১ জেলা সদর ও ২০টি উপজেলায় কোম্পনিটির ১০ হাজার ১০টি ১১/০.৪ কেভি ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে। এর বাইরে কোম্পনিটির নিজস্ব স্থাপনা সহ গ্রাহক পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সোলার পাওয়ার সিস্টেমে ১২শ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে।
তবে ওজোপাডিকো’র বিশাল বিতরন ও সরবারহ লাইনের বেশীরভাগই ২Ñ৩ যুগের পুরনো। পাশাপাশি ঘন বসতিপূর্ণ শহর এলাকায় ১১ হাজার ভোল্টের ওভারহেড লাইন প্রায়সই মারাত্মক ঝুকির কারণ হয়ে উঠছে। পুরনো বিতরন ও ৩৩ কেভি লাইনগুলো পারিবর্তনে ৩টি প্রকল্প চলমান থাকলেও তার কোনটিই সময়মত শেষ হচ্ছে না। পাশাপাশি বরিশাল,যশোর ও গোপালগঞ্জ শহরের ১১ কেভি লাইনগুলো ভূগর্ভে স্থাপনের একটি প্রকল্প-সারপত্র প্রনয়ন করা হলেও দাতার অভাবে কোন অগ্রগতি নেই।
অপরদিকে, লাইনে ত্রুটি সহ যেকোন অভিযোগ সুরাহা নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। সুষ্ঠু সেবা প্রদানের লক্ষে কোম্পনিটির ‘গ্রাহক সেবা কেন্দ্র’গুলোতে প্রয়োজনীয় যানবাহন পর্যন্ত নেই। পাশাপাশি কোম্পানি গঠনের ১৭ বছর পরেও এর মাঠ কর্মীদের সেবার মানষিকতা গড়ে ওঠেনি বলেও অভিযোগ সাধারন গ্রাহকদের।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, জনবল সংকট সহ অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও ওজোপাডিকো অনেক দুর এগিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সুষ্ঠু সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনে। বিতরন লাইন সহ সরবারহ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে অতি সম্প্রতি গ্রাহক পর্যায়ে দাম না বাড়িয়ে এ কোম্পনিটির বিদ্যুতের পাইকারি দাম ২৩% বাড়ানোয় আর্থিক ভীত নড়বড়ে হয়ে পড়ার আশংকার কথাও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন