ফেনীর পরশুরামের বাঁশপদুয়া সীমান্তে নিহত কৃষক মেজবাহ উদ্দিনের লাশ ১৭ দিন পর ফেরত দিল ভারতীয় বিএসএফ। আজ দুপুর ১টার দিকে বিলোনিয়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের পর বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ভারতের ত্রিপুরার বিলোনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক পরিতোষ ঘোষ, পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো: সাইফুল ইসলাম। ভারতীয় বিএসএফের কোম্পানির কমান্ডিং সত্যপাল সিং, বিলোনিয়া বিএসএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট এমএম লাল, বিলোনিয়া পুলিশ স্টেশনের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ন পাল, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি খাজুরিয়া কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ওমর ফারুক, বিলোনিয়া মজুমদারহাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান, বিলোনিয়া চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনের সহকারী পুলিশ পরিদর্শক ইমাম হোসেন, পরশুরাম পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল,স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন, দু’দেশের বিজিবি-বিএসএফ ও পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, নিহত মেজবাহ উদ্দিন স্ত্রী মরিয়ম আক্তার,ছোট বোন পারুল আক্তার ও সন্তানরা।
পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল সাংবাদিকদের বলেন, মেজবাহ উদ্দিন একজন কৃষক। তিনি বাংলাদেশী সীমান্ত এরিয়ার মধ্যে ধান কাটছে। ধান কাটা অবস্থায় বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দু:খজনক বিষয়। ভারত আমাদের পাশ্ববর্তী বন্ধু দেশ। আমরা ভারতেরও ভালো চাই,ভারতও আমাদের ভালো চায়। কিন্তু ধান কাটা অবস্থায় একজন কৃষককে ধরে নিয়ে যায়,পরে ভারতীয় বিএসএফ নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। তবে লাশটি মেজবাহ উদ্দিনের কিনা বুঝা যাচ্ছেনা। লাশে পচন ধরে গেছে। ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে।
মেজবাহ উদ্দিন স্ত্রী মরিয়ম বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জন করা মানুষটিই নেই এখন আমাদের কি উপায় হবে। আমার ছোট ছোট মেয়েরা কি খাবে, কি পরবে, কিভাবে পড়ালেখা করবে। তিনি বলেন, আমার স্বামী কোনদিন কারো ক্ষতি করেনি। অন্যের লোকের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন,কোন সময় অন্যের ক্ষেতখামারে কাজ করে সংসার চালাতেন। আমার স্বামী গত ১৩ তারিখে সীমান্তের কাছে অন্যের জমিতে ধান কাটতে গেলে তখন বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তারা আমার স্বামীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
এদিকে মেজাবাহ উদ্দিনের লাশ আজ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানা গেছে। লাশে পচন ধরে গেছে। পরশুরাম মডেল থানা পুলিশ লাশটি ময়না তদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে। আগামীকাল দুপুরের দিকে মেজবাহ উদ্দিনের লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য,গত ১৩ নভেম্বর উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামে সীমান্তবর্তী এলাকায় মেজবাহ ধান কাটতে গেলে ভারতীয় বিএসএফ তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। তিনদিন পর ১৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়রা মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের একশ গজ ভিতরে পড়ে থাকতে দেখে বিজিবিকে খবর দেয়। পরে দফায় দফায় লাশের বিষয় নিয়ে কয়েকবার বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হয়। বিএসএফ মেজবাহকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে ১৭ নভেম্বর রাতে বিএসএফ মেজবাহ উদ্দিনের লাশ নিয়ে যায় এবং বিলোনিয়া পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে । মেজবাহ পরশুরাম পৌর এলাকার উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় কৃষক।
তখন বিজিবি জানায়, ভারতের সীমানার অংশে থাকা মরদেহ তারা নিয়ে গেলেও ওই দেশের আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্তের পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন