চলমান বিদ্যুৎ সাশ্রয় নীতির অংশ হিসেবে পূর্ব ঘোষিত লোডশেডিংয়ে সাভার-আশুলিয়ার ছোট বড় শিল্পকারখানাগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিং এর কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে শ্রম ঘন্টা। এছাড়া সময়মত মালামাল ডেলিভারি না দিতে পাড়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এসব কারখানার উদ্যোক্তারা।
শিল্প কারখানার একাধিক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় বড় শিল্প কারখানাগুলো বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখে। কিন্তু ছোট ছোট কারখানাগুলোর পক্ষে বাড়তি টাকা খরচ করে জেনারেট চালানো সম্ভব নয়, তাই উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। প‚র্ব ঘোষিত নিয়ম অনুযায়ী এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও প্রতিদিন ৩/৪বার আবার কোন কোন দিন এর বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে কাজ বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম (কারিগরি) মোহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, জাতীয় পর্যায়ে গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারা দেশে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
এদিকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিগুলোতেও কয়েক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে লোডশেডিং বেড়েছে জানিয়ে ট্যানারি মালিকেরা বলছেন এতে চরম সংকটে পড়েছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বলছেন, চাহিদার বিপরিতে গত এক সপ্তাহ যাবত বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
নিশাত ট্যানারির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেও চলমান লোডশেডিংয়ে আমাদের নাকাল অবস্থা। দিনে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা করে তিন-চার দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কারখানার উৎপাদন ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ট্যানারি জোনাল অফিস) মো. গোলাম কাদির বলেন, এতদিন লোডশেডিং থাকলেও তা সহনীয় মাত্রায় ছিল। তবে চাহিদার বিপরিতে সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়েই আমাদেরও ব্যালেন্স করতে গিয়ে ট্যানারিতে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে সাধারন গ্রাহক ও পোশাক কর্মীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পোশাক শ্রমিক জোসনা বেগম বলেন, কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ আসে যায়। বিদ্যুৎ না থাকলে সেদিন খাওয়া, গোসল ছাড়াই অফিসে যেতে হয়। আবার দুপুরে এসে বাসায় বিদ্যুৎ না পেলে সেই না খেয়ে ও গোসল না করে অফিসের দিকে ফিরতে হয়।
জোসনা বেগমের মতো বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এর কবলে পড়েছে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের লাখ পোশাক শ্রমিকরা। খেয়ে না খেয়ে সঠিক সময়েই অফিসে উপস্থিত হতে হচ্ছে তাদের। ঘন-ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তাদের জনজীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং চলছে। দিনে অন্তত ৩/৪ বারের বেশি সময় লোডশেডিং হয়। আর একবার লোডশেডিং হলে দুই ঘন্টার আগে আসার নামই নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। বার বার লোডশেডিং হওয়ার ফলে লেখাপড়াও ঠিকমতো হয় না তাদের।
ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান কবীর বলেন, এখন কেন লোডশেডিং হচ্ছে আমরা সবাই জানি তবুও দোষটা আসছে আমাদের ওপর। এখানে আমাদেরও করার কিছু নেই। যেমন আমার ১২২ মেগাওয়াট, লোডশেডিং হচ্ছে। আমি অর্ধেকের মতো পাচ্ছি আর অর্ধেক পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমাদের যে চাহিদা, সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পেলে আর কোনা সমস্যা থাকতো না। চাহিদা মতো তো পাচ্ছি না। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন